ব্যাঙের
ছাতা
পেঁয়াজের
খোসা খুলে খুলে যায়। গল্পের পাতায় পাতায় লাল নীল সবুজ হলুদ বল গড়িয়ে যায়। কীভাবে
কখন দেখা হলো। সেই যে গ্রিলের ওপাশে দুটি
মায়াবী চোখ। এপাশে উৎসুক চোখের
দৃষ্টি বিনিময় আকাঙ্ক্ষার দীর্ঘ সময়। হঠাৎ
আনন্দ পেতে কার না ভালো লাগে!
স্বপ্নচারিণীর ঘুমহীন তারায় ভরা রাত। ঘোর অমাবস্যা। ঠিক সলমা-র গায়ের রঙের মতোই।
তাতে কী! হোমমেকার হওয়ার সাধ কোনোদিনই ছিল
না তার। ছেলেবেলায় ডানপিটে ছিল খুব। নিমগাছের ডালে দোলনা বেঁধে বন্ধুদের সঙ্গে
কম্পিটিশন। আম-জাম-পেয়ারা গাছে চড়ে, পেড়ে আনা ফল নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কাড়াকাড়ি।
ভয়হীন জীবনযাত্রায় সামিল। নানান মানুষের বিদ্রুপ অগ্রাহ্য করে নদীতে কখনও চিৎ
সাঁতার কখনও ডুব সাঁতার দিত সে। একদিন দেখা হলো তার সাথে মানে তারিক-এর সাথে।
দিনযাত্রায় কখন যেন হারিয়ে যেতে থাকল
তারা। দিন ও রাতের পার্থক্য কমে যেতে থাকল। চোখের চারপাশে জমে থাকা কালি শরীরের
রঙে মিশে, মুছে দিল সত্যি ও মিথ্যার ভেদাভেদ। লুকিয়ে রাখতে শিখতে হয়। সংসারে
আত্মত্যাগ বর্ষার ঝরঝর বৃষ্টির মতো হয়ে যায়। মনে পড়ে, ধীরে ধীরে নীরব কথোপকথনে
অভ্যস্ত হয়ে উঠল সে।
দমবন্ধ গল্পের উন্মোচন করবে ভেবে তো এই জীবন নয়।
জীবনের মানে খুঁজতে খুঁজতে হেঁটে চলা পাহাড় থেকে সমুদ্রে ভেসে থাকা। সলমা মোবাইলে
হোয়াটসঅ্যাপ খোলে। তারিকের মেসেজ। ডিভোর্স জানিয়েছে সে। তিন তালাক। এতগুলো যৌথ বছর
তবে কী মিথ্যে হয়ে যাবে! ছেলেখেলা নাকি! প্রশ্নচিহ্নের বিরাম নেই। জীবনের মাঝবয়সে এসে এইসব বেইমানি সে একদম
সহ্য করবে না। কোর্টে যাবে সে। নিজের অধিকার বুঝে নেবে। পরক্ষণে মনটা ভীষণ নিস্তেজ
হয়ে যায়। তারিকের মুখটা মনে পড়ে। এরকম একটা মানুষের জন্য তার করুণা হয়। আজকাল মুখোশপরা মানুষগুলোর সংখ্যা ব্যাঙের ছাতার মতো
বেড়ে যাচ্ছে। সলমা হ্যান্ডব্যাগটা হাতে নিয়ে বাইরে রাস্তায় পা বাড়াল। এখন প্লে-স্কুলের
বাচ্চাগুলো তার জন্য অপেক্ষা করছে। আজ যে ‘চিল্ড্রেন্স
ডে’ উদযাপন করতে হবে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন