বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

ঝুমা চট্টোপাধ্যায়

গোলাপ  জাতীয়


অশোকের সঙ্গে সুদীপার একটা অদ্ভূত সম্পর্ক আছে, যা দিয়ে একটা গোটা কবিতা লেখা হয়ে যেতে পারে একটা স্বপ্নও তৈরি হতে পারেস্বপ্ন কাকে বলে? রাত্রে ঘুমিয়ে যা দেখা যায়? একদম ভুলযে জন্য রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায় তাইই স্বপ্ন অশোকের সঙ্গে সুদীপার একটা অদ্ভূত সম্পর্ক আছে। এই ‘আছে’ শব্দটা এখানে তাই এক্কেবারেই বেমানানবরঞ্চ এর বদলে আনন্দ প্রজাপতি অথবা মেঘ এমন কিছু শব্দ লিখতে পারলে বেশি ভালো হতো তাতে অবশ্য বাক্য গঠন সম্পূর্ণ হতো না। কিংবা শব্দের ভাবগত আকারও কিছুদূর অব্দি গিয়ে ক্ষুণ্ন হতোহতো হতোই কিন্তু ওদের দুজনের অদ্ভূত সম্পর্কটা্র একটুও হেরফের হতো না এটা ঠিক । অশোক এলে সুদীপাও আসবে। অশোক বই দিলে সুদীপাও বই দেবেগরমের দুপুরে এই দোকান সেই শপিং মল করে হন্টনবাজীতে হাঁফ ধরে গেলে হুট করে রাস্তা বদলে নন্দনে ঢুকে অশোক ‘অদ্ভূতুরে’, ‘ভূতের কান্ডকারখানা’ দেখতে দেখতে  হোয়্যাটস অ্যাপ মেসেঞ্জারে পোস্ট দেবে, “ওয়াচিং থ্রিলিং বাংলা মুভি”... সুদীপার পোস্ট, “আমি ভূতে বিশ্বাস করি না ।

অশোক সুদীপার গল্পটা ঠিক এইরকমই জমজমাট এবং বিন্দাস বৈচিত্র্যে ভরপুর একটা খুব ছোট্ট সবুজ দ্বীপকচি কচি পাতলা ঘাসের আগায় অজস্র লাল হলুদ


ঘাসফুল ফুটে। কাছেপিঠে কেউ কোথ্থাও নেইছোট্ট একটা ঝরণা বয়ে যাচ্ছে অদূরেই মোটামুটি এটাকে একটা স্বর্গ বলে ধরে নেওয়া যায়। এটা ওদের দুজনের স্বর্গ। স্বর্গের ডানপাশে বুক অব্দি জল নিয়ে ধীরে ধীরে বৈতরণী বয়ে যাচ্ছেবর্ষায় কিছু কিছু জল ওভারফ্লো হয়ে স্বর্গের ঘাসজমিকে ভিজিয়ে রাখেঅন্তত ভাদ্র আশ্বিন পর্যন্ত থেকে যায় এ অবস্থা

কাল রাতে হঠাৎ বাই না করেই চলে গেলে যে!
গেলাম। ইচ্ছে হলো।
কাছে পেলে এক্ষুনি একটা জবরদস্ত চুমু দিয়ে তোমাকে নাজেহাল করে দিতাম
তুমি? চুমু? জবরদস্ত?
কেন?
হিঃ হিঃ!
ঢিসুম ঢিসুম!
আমাকে নাজেহাল করলে আমিও কি তোমায় ছেড়ে দেব? মাথা গরম করে গোটা পাঁচেক চুমু আমিও দেব!

একজন ভগবান তখন আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। তিনি বললেন, স্বর্গ বড় ভালো  লাগে। তাই সৃষ্টি করি। নইলে স্বর্গই বা কী নরকই বা আলাদা কী!
ভগবানের গলায় বনফুলের মালা, শরীরে পুষ্পগন্ধ
সুদীপা দুই চোখ বন্ধ করে ভগবানকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করল। অশোকও। অশোকের জামায় কালিঝুলি মাখা। হাতে তিন রকমের ধুলো ময়লাসারাদিনে চা ছাড়া ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ করার সময় পায়নি
অশোকের সঙ্গে সুদীপার একটা অদ্ভূত সম্পর্ক  যা কবিতা হতে পারে, স্বপ্ন হতে পারে কিন্তু! কিন্তু ওরা দুজনেই ছিল এক্কেবারে আলাদা আলাদা। অশোক অশোকের মতোআর সুদীপা, বলা বাহুল্য, সুদীপার মতোই। ওরা কেউ কাউকেই চিনত না। কোনোদিন দেখাই হয়নি দুজনের। অশোককে দেখতে লাগত অশোকের মতো গম্ভীর আর সুদীপা সুদীপার মতোই উচ্ছল প্রাণবন্ত

দুপুরবেলামাথার ওপরে গনগনে সূর্যঅসহ্য গরমে কাক পক্ষীগুলো কোথাও আড়ালে। শুনশান পথঘাটবারান্দায় ডেক চেয়ারটায় পা মুড়ে বসে তারিয়ে তারিয়ে কুলের আচার খাচ্ছিকে যেন ডাকল – ঝু উ মা আ –
সুদীপা। - ঘুমোচ্ছিলি? চল চটপট রেডি হয়ে নে, যাব এক জায়গায়

ঐ দিনই সন্ধ্যেবেলামৃদু্মন্দ হাওয়ায় বারান্দায় চেয়ারে বসে। মশা কামড়াচ্ছে, উঠব উঠব ভাবছি, ফোনে চেনা কন্ঠ জিজ্ঞেস করল (গম্ভীর) – ব্যস্ত?

অনেকগুলো শব্দ স্বাধীন হয়ে আমার চারিদিকে ঘুরপাক খায়। কবিতার মতোস্বপ্নের মতোঅশোকের সঙ্গে সুদীপার একটা অদ্ভূত সম্পর্ক আছে। অশোক যেদিন আমার কাছে আসে, সুদীপাও ঠিক ঐদিনই যখনই হোক একবার আসবেই। অশোক যেদিন ফোন করে, কী আশ্চর্য, সুদীপাও সেইদিনই ফোনে বলে, কী করছিলি রে?

অশোকের সঙ্গে সুদীপার কোনোদিনই দেখা হয়নি



1 টি মন্তব্য: