আশ্রয়ী
কখনো কিচেনে কাচের ছোট মশলা রাখার খোপে, কখনো শোবার ঘরে খাটের নিচে, কখনো বইয়ের তাকে এক
খালি কোণায়, ঘুমঘোরে স্বপ্নে অন্যমনস্ক চেতনে সরব ট্রাফিকে
কেবল বকবকম বকবকম বক বকম পারাবত মৈথুন। প্রথম প্রথম খুব দয়া হতো। পৃথিবীটা কি
মানুষের একার? আহা, ওদের থাকার জায়গা
নেই! অবলা জীব। কত ভালো ওরা। সবাই তো বলে
ওরা হিংস্র নয়। আগ্রাসী নয়। কেমন দুটিতে গুটগুট করে খাটের নিচে ঢুকছে। আমাদের
প্রেম খাটের উপর আর ওদের প্রেম খাটের নিচে। বউ বলছিল, শোনো
ওদের আসতে দাও, থাকতে দাও। ওরা আর কতটুকুই বা খাবে। একটু না হয় নোংরা করলই বা। সাফ
করে নেব। দেখো ওদের বাচ্চা ফাচ্চা হলে ভগবানের দয়ায় যদি আমাদের কপালেও সন্তান
জোটে! কত বছর হয়ে গেল। সন্তানের মুখ দেখলাম না। ভাগ্যের পরিহাস, সন্তান নেই, বাঁঝা, প্রজনন ক্ষমতা নেই, ইমপোটেণ্ট, ভগবানের মার ইত্যাদি অহেতুক অনেক গালাগালি। এমনকি যারা একদম ‘র ঢেট’
জানোয়ার কোনোভাবেই তাদের রতিপরায়ণ বলা যায়
না, তারাও আড়ে হাত নিয়ে নেয়। তাই ভাবি, থাক না! পায়রা পয়া লক্ষ্মী হয়ে থাকছে থাক।
তা বউ কনসিভ করেও ছিল। ততদিনে পায়রার দল সভরে সরব। সেই দুটি
নয়। আশেপাশের অনেক পায়রা এখন আমার ঘরে ঢোকে আর বেরোয়। আর এখন তো খড়কুটো কাগজের
টুকরো ছেঁড়া কাপড় বিছিয়ে যেখানে সেখানে ডিমে তা। সদ্য হওয়া বাচ্চার দুর্গন্ধময় রস।
এবং অবাধ। কেননা বউ এখন তিনমাস ধরে হাসপাতালে। ইন ভিট্রো ফারটিলাইজেশনের চেষ্টা
ব্যর্থ। একসাথে তিনটে প্রাণ আসবো আসবো করে শেষে রিটার্ন ব্যাক। একে তো মনের কষ্ট
তায় আবার পুরো হাসপাতাল এখন আতঙ্কের গর্ভ। হাসপাতালে প্রায় কুড়িজন দেহাতি মেয়ের
গর্ভপাতের কেস। মাস দুই আগে তিনটে গ্রামে খুনখার রায়টের ফল। গণধর্ষণ। প্রকৃতির কি
বিচিত্র খেয়াল! গণধর্ষণে গর্ভধারণ প্রতিটি সাকসেসফুল, আর আমি শালা...
দিন দুই পর হাসপাতাল থেকে ফিরে তালা খুলে ঘরে ফিরছি। ঢুকতেই
দেখি আমার খোলা ল্যাপটপে খড়কুটি জমা করে একটা পায়রা সেটার চারপাশে ঘুঁ ঘুঁ করে
পেখম খুলে সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ল্যাপটপের উপরে একটা ছোট লাল মাংসপিন্ড।
ল্যাপটপের উপরে দুটো নীলচে রঙের ডিমের খোল। জানালা দরজা বন্ধ। ওরা আসে ভেণ্টিলেটর
ঘুলঘুলির ফোকর গলে। একবার কয়েকদিনের জন্যে সেটাকে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমার বউএর
তিনটে চুজা গর্ভপাতে বেরিয়ে যাওয়ার পর মরমর অবস্থাতেও গতকাল সে নিজের মাথার দিব্যি
দিয়ে দিল। বলছিল, তুমি ওদের ঘরে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলে তাই এটা
পাপের ফল। দুর্বল অসহায়কে অন্যেরা তাড়িয়ে দিলে আশ্রয় দিতে হয়। তবেই ভগবান ভালো
করেন।
ক্ষোভে দুঃখে আমার তখন অবস্থা খারাপ। খালি হাতেই হুস হাস
করে পায়রাটাকে তাড়াতে গেলাম। পায়রাটা ডানা ঝাপটিয়ে ওখানেই থাকল। আর একটু কাছে
এগোতেই ওটা ঘুরে আমার দিকে তাকাল। কিন্তু একি? আমি কী দেখছি? আমি আবার চোখ পিটপিট করে ওটাকে
দেখলাম। স্পষ্ট দেখতে পেলাম, পায়রার হাঁ ঠোঁটে একসারি দাঁত।
পায়রাটা একবার ডানা মেলে আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ে আমার ডান হাতে
রাখা আজকের খবরের কাগজটা এক ঝাপটা মেরে ফেলে দিল। খবরের কাগজটা মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল।
সম্ভবত ওর পেপার টুকরো এখনি দরকার। পেপারের উপরে বসে সেটাকে ঠোঁট দিয়ে ছিঁড়তে
লাগল। পেপারের হেডলাইন নজরে পড়ল। আরো অনেক রোহিঙ্গা মায়নামার থেকে আমাদের
দেশে আসছে। অবাধ। খবরটা নিমেষে কুটিকুটি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন