আনস্টেবল
চিন্তার
যোগসূত্রগুলো আজকাল কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। যখন ফটোগ্রাফি আবিষ্কৃত হলো, তখন
গুজব উঠল যে আত্মার কিছু অংশ ফটোগ্রাফে আবদ্ধ হয়ে যায়। সত্যি বলতে কি, ছবিতে তো কোনো প্রাণস্পন্দন
থাকে না। শুধু একটা মুহূর্তর স্থিরচিত্র কিংবা ভিডিও-তে কিছু চলমান মুহূর্তের
রোমন্থন। ফটো থেকে জ্বল জ্বল স্মৃতি নিয়ে অতীত দেখা যায়। খানিকটা মজার ছলে বলা যায়
যে ফটো-অ্যালবাম টাইম-মেশিনের কাজ করে।
হার্বাল-টি-মাগ
হাতে বহুক্ষণ। গরম চা কাপের পর কাপ যেন ড্রাগ-অ্যাডিক্ট। নতুন এনার্জি এবং
হ্যাপিনেস ছড়িয়ে যায়। জীবনটা কি খুব রিজিড ওয়েতে অতিবাহিত করছি!
রাতের
অন্ধকারে কান্নার জলে ভিজতে থাকি। এত ডিপ্রেশন আগে কখনও ছিল না। কাকে বলব, কে কীভাবে
নেবে, জানি না। ধীরে ধীরে জীবনের গভীরে বাসা বাঁধছে দুঃখের পাহাড়। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। শুধু
উদ্বিগ্নতা গ্রাস করছে আমাকে। সব সময় কনফিউশন হচ্ছে। চোখের চারপাশে নানান ধরনের
মানুষের আনাগোনা অনুভব করছি। তাদের সঙ্গেই কথা বিনিময় চলছে।
এই
আজব দুনিয়াই ক্রমশ ঘরের কোণে বসে আছি। বস্ত্রহীন কখনও কখনও রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছি।
খানিকটা বুঝতে পারছি। খানিকটা আবছায়া ধোঁয়ায় দিশাহীন হয়ে যাচ্ছি।
‘তোমার
মেডিক্যাল হেল্প দরকার’
‘কেন?
কিছুই তো হয়নি আমার!’
‘মৌ,
আমি পাড়ায় মুখ দেখাতে পারছি না। যা শুরু করেছো, তুমি!’
অনিমেষের
কথাগুলো ভালো লাগে না। আমি উঠে চলে যাই। বরং সেই মানুষগুলোর সঙ্গে একটু কথাবার্তা
সেরে আসি।
‘প্যারানয়েড
সিজোফ্রেনিয়া। অনিমেষবাবু, এর লাইফ-লং ট্রিটমেন্ট দরকার।’
‘মৌ
তো ওষুধ খেতেই চায় না। বলে যে ওর তো কিছুই হয়নি। আমার পক্ষে ওকে ওষুধ খাওয়ানো একটা
বিশাল এক্সারসাইজ’।
‘বি
কুল, অনিমেষবাবু। ও যা যা করছে, কোনোটাই ইচ্ছাকৃত নয়। আপনাকে মানসিকভাবে শক্ত হতে
হবে’।
‘আর
ও যে আসামাজিক ব্যবহার করে যেমন রাস্তাঘাটে ওর লজ্জাহীন নগ্ন ঘুরে বেড়ানো!’
‘ধৈর্য
ধরুন, প্লিজ! মেডিসিন চলবে। সঙ্গে কিছু যোগাসান যেমন, অনুলোম-বিলোম, কপাল ভাতি প্রাকটিস করান’।
‘ও.কে.
ডক্টর’।
‘আপনারা
লিভ-ইন-রিলেশনে আছেন, তাই তো! আমি রিকোয়েস্ট করছি যে এই সময় আপনি ওঁকে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবেন না, প্লিজ!’
‘নো
ডক্টর। প্রশ্নই ওঠে না’।
‘থাইরয়েড,
ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার-এর মতোই সিজোফ্রেনিয়া-ও একটি ডিজিস। এটি একটি ব্রেন ডিসওর্ডার। সোজা কথায় এক প্রকার
মানসিক অসুখ। এক্ষেত্রে আমাদের ব্রেন কিছু কেমিক্যাল সিক্রিয়েট করে যা মনকে
আনস্টেবল করে তোলে’।
‘চলো,
কদিন পাহাড়ে ঘুরে আসি।’
পালকের
মতো সাদা মেঘের দেশে ঝরে পড়ছে বৃষ্টি, টুরিস্ট বাস দ্রুত পৌঁছে গেল সিমলার
পাহাড়ঘেরা স্বর্গোদ্যানে। বাস থেকে নেমে ভিড়ের মধ্যে কখন যেন মৌ আর অনিমেষের
যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেল!
পাহাড়ে প্রতিধ্বনি শোনা
গেল, ‘মৌ-ও-ও, কোথায় তুমি? ফিরে এসো, প্লিজ!’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন