উত্তরাধিকার
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য
তোমার কয়েক গাছি চুল আর নখের আগায় জমা নিষিদ্ধ কিছু ময়লা খুলে দিয়ে বলেছিলে, যৌনতা আসলে একটা ইউনিভারসাল ফ্যান্টাসি। তোরা তাকে নারী
গ্রন্থির ট্যাবুর নিচে টেনে নিয়ে যাস বুঝলি...! বোঝা আর না বোঝার মধ্যবর্তী ফাঁকটুকুই জীবন, ফিলিং আসলে মাউন্টেন আবু জয় করতে গেলে অনুভবের ঘর বস্তুগত, অনুভবের ঘর ব্যক্তিগত। যাতে পৃথিবী সমান শূন্যের পিছনে যা
খুশি সংখ্যা জুড়ে দেওয়া যায়। তুই যেভাবে সুতো ছাড়বি সেই ভাবেই গোটা ঈশ্বর গুটিয়ে
তোর পাঁচ আঙুলের নখে। নরক বল বা খিদে, স্বর্গ বল বা তেজের জোয়ার সব বৈদ্যুতিক চুল্লি মুহূর্তের বিস্ফোরণ... শুধু
মাথায় একটি আপেল বাগান রাখিস ওতেই দেবতারা এসে বসেন। সেই মতোই বহুবার চেষ্টা করেছি
কিছু সবুজ আপেল পোষার। দেখেছি জোঁক প্রাণীটিই অনেক বেশি সহজাত... তার মুখে রক্ত
ভরে দিতে দিতে শ্রীকৃষ্ণের সেইসব প্রেমিকাদের কথা ভাবি, ভাবি তাদের সুশ্রী শরীরের দৃশ্য। যখন পাতালদানবীরা মর্ত্যে
উঠে আসতেন, কত রাত ব্লাউজের হুক
চিবিয়ে খেয়েছে উপোষী হুলো। আর একান্ত জানালায় উড়ে এসেছে অলক্ষ্মী-কাকের দল তোমার
স্ত্রী বাহন হয়ে। এই অগ্রাহ্যতা টেনে নিয়ে গেছ দিন পর্যন্ত, না খোলা মশারির দড়ি পর্যন্ত, জীবন বীমার প্রিমিয়াম মিস করা দুপুর পর্যন্ত, রেশন লাইনের যুবতী মেয়ের নিটোল নিতম্ব হয়ে নিরোধের মোড়কে সাপের বিষাক্ত ফণা
পর্যন্ত। এরা আসলে জীবনদায়ী ওষুধ... এরা কি বোতলে ভরা মদের মতো নষ্ট নারীঘাতক? তুমি বলেছিলে, শিল্প আসলে একটা প্রক্রিয়া, ভিন্ন জন্মেও
নিজেকে জীবিত রাখার। আর স্বর্গ আসলে একটা মোহ, সাহিত্য ধারণায় টেনে নিয়ে যাবার। বাস্তব ও কল্পনার, পাওয়া ও না পাওয়ার মধ্যবর্তী বিন্যাসটুকুই শিল্প। এই স্থানটুকুই
স্বর্গ, এই পর্যন্তই সঙ্গম আমাদের
সাহিত্যে।
অবসর
বৃদ্ধ মাষ্টারমশাই কখন যে পায়ে
পায়ে স্কুলের করিডোরে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, নিজেই হতবাক। ঘুনে ধরা ছাতিম গাছটায় বার কয়েক হাত বুলিয়ে দেখেন। দেখেন বাকল
ঝুলে পড়েছে অনেকটা তারই মতো। ঘুঘুর তুমুল ডাক, দুপুরকে আরো গভীরতা দিলে বৃদ্ধ মাষ্টারমশাই জানে, ঠিক এই সময়ে ইতিহাসের কোনো নবীন মাষ্টার পানিপথের প্রথম
যুদ্ধ পড়াচ্ছেন উদাত্তকন্ঠে। ছাত্ররা বিস্ময়ের চোখে ঘোর লাগা ঝিমুনিতে তলিয়ে
যাচ্ছে তলোয়ারের ঝনঝন শব্দে। আবার কোনো ক্লাসে বা ব্যাঙের শরীর ফালাফালা করে শিক্ষগুরু বুঝিয়ে
দিচ্ছেন কোথায় আছে সৃষ্টির ধারক জননেন্দ্রিয়।
বৃদ্ধমাষ্টার মশায় অবসর পেয়েছেন বেশ কিছুকাল, তবুও ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে কর্মব্যস্ত যাত্রা। মাষ্টার মশাই হিসাব কষেন, দশে গেল বিপিন, বারোতে সুধীর আর এই তো সেদিন হরেনমাষ্টার। সমবয়সী- সমকর্মীরা সকলেই একে একে
গত। তার চেয়েও প্রাচীন যারা ছিল তারা তো ভূতপ্রায়। এখন যেন সেই জীবন্ত ভূতের মতো। জীবন
এবং যোগের সূত্র হাতড়ে হাতড়ে ভাবেন, কবে যে আসবে তাঁর বিয়োগের পালা! সব সব হিসাবে গড়মিল হয়ে যায়। আবার শূন্য
থেকে শুরু করেন পাটীগণিতের নির্ণয়। বিগত ছাত্ররা রাস্তায় দেখা হলে, পা ছুঁয়ে প্রণাম করে। ছাত্রের অভিভাবকরাও প্রণাম জানান। দোকান, বাজার, রাস্তা সকলেই
সম্ভ্রমে মাথা ঝোঁকায়। বৃদ্ধমাষ্টার মশায়েরও ইচ্ছে করে তাঁর চেয়েও দীর্ঘ কোনো
একটা জীবন্ত পা ছুঁয়ে দীর্ঘকালীন অবসরের আশীর্বাদ চেয়ে নিতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন