বিবমিষা
অনু আজকাল প্রতিদিন সকালেই বমি করে আর রাকেশ চিৎকার ক’রে বলে, কী শুরু করলে
তুমি,
অনু? তোমার যখন
অসুবিধে হয়, তুমি তখন সেটা না করলেই
পারো! যা তুমি নিতে পারছো না, তা করো কেন? প্রতিদিন বমির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। এ এক জ্বালা হয়েছে আমার! তোমার জন্য
টিভিটা পর্যন্ত কেউ দেখতে পায় না। বাচ্চাটা একটু কার্টুন দেখতো, সেটাও বন্ধ। আজ প্রায় বছর ঘুরে গেল, টিভি রিচার্জ করা হয় না। তিন রকমের কাগজ আসতো বাড়িতে। এখন
একটা কাগজ রাখা হয় মাত্র। তাও বন্ধ করতে হবে মনে হচ্ছে। ...কী গো, শুনছো, কী চাও তুমি বলো তো? সারদিন কাজ করি, ব্যস্ত থাকি,
তুমি জানো, রাতেও ভালো ঘুম হয় না। ভোরবেলায় একটু ঘুমোই, আর তুমি বমি করা শুরু করো। এবার একটা ডাক্তার দেখাও! আর পারা যাচ্ছে না। আজকেই নাম লিখিয়ে দেব।
অনুর মুখে কোনও কথা নেই। শুধু চোখ ভেজা।
রাকেশ আবার বললো, মর্নিং ওয়াক শুরু করেছিলে, সেটাও তো ছেড়ে
দিলে। হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে ...
সেই যে কী সব দেখে এলে, তারপর তো আর যাও না! সত্যি অনু, তুমি ধন্যি মেয়ে বটে! তা, আজ অফিস যাবে তো?
অনু উদাসীনভাবে বললো, হ্যাঁ, যাব। ... শোন, আমার ফেসবুকটা বন্ধ করে দিও তো!
-- কেন, সেখানে আবার
কী হলো?
-- পরে বলবো। এখন হাতে অনেক কাজ আছে। অফিস যাব।
--হুঁ ... তুমি এভাবে বাঁচবে না অনু, ডাক্তার দেখাও। আর আমাদেরও শান্তি দাও। পাশের বাড়ির বৌদিকে
দেখো তো,
কী সুন্দর সংসার করছে।
-- কেন? আমিও তো করছি!
-- তুমি তো মনমরা হয়ে থাকো। আর শোন শোন, ফেসবুক বন্ধ করবে কেন বলো তো?
-- ছাড়ো, অফিস যেতে
হবে।
-- না না, এখনই বলে যাও, শুনি। আর কত রকমের পাগলামি আছে তোমার!
-- ফেসবুকটাও এখন একটা খবরের চ্যানেল হয়েছে। খুললেই আমার গা
গুলিয়ে ওঠে।
-- আরে বাঃ, সেটা কী ক’রে, শুনি! শুনি শুনি... আমি একটা বউ পেয়েছি, মাইরি!
-- কালকে দেখলাম, একজন দিয়েছে খবরের কাগজ থেকে ছবি, একটা তিন মাসের বাচ্চা মেয়েকে রেপ করেছে। তারপর ... একটি মেয়েকে ডাইনি ভেবে
তাকে পিটিয়ে মেরেছে। ... গৃহশিক্ষক ছাত্রীকে, মায়ের কাছ থেকে ছোট শিশুকে ছুঁড়ে ফেলে
দিয়ে মায়ের সাথে রেপ করেছে। আর ভালো লাগে না গো! খবরের কাগজ, টিভি সব বাদ দিয়েও
রেহাই নেই। বহুদিনের অভ্যাস সকালে এক কাপ চায়ের সাথে খবরের কাগজ পড়া, তাই এখনও একটু চোখ বোলাই। তাতেই বমি পায়। চারদিকে শুধু
রক্ত আর রক্তের দাগ দেখছি। আর কান্নার
শব্দ শুনতে পাই আমি।
-- কিন্তু অনু, এগুলো নিয়েই তো বাঁচতে হবে!
অনু অফিস থেকে বাড়ি ফিরছে। তার মনে হলো, প্রবীরকাকু তো কয়েক
দিন আসে না, দেখি তো কী হয়েছে! বাড়ির
সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। গেটে তালা ঝুলছে। পাশের বাড়ির কাকিমা বললো, অনু জানিস, প্রবীরকে মরতে হলো শুধু ওর টাকা আছে সেইজন্য । কী অবস্থা বল!
অনু শুধু চমকে গিয়ে বলে ফেললো, আর কতদিন!
রাতে রাকেশ যখন বাড়িতে ফিরলো, চুপচাপ, কিছু বলছিলো না। তারপর হঠাৎই চিৎকার করে বলে উঠলো, জানো অনু, আমাদের অফিসের
বড়বাবু আজ খুন হয়েছেন। অফিসে একজনকে প্রমোশন না দেবার জন্য তাকে মেরে ফেলেছে। এ
আমরা কোন্ সময়ে এসে পড়লাম, অনু?'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন