শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

ঝুনো নারকেল ও দোমালা বৃত্তান্ত


ফোনে কাঁদো কাঁদো গলায় সুতীর্থর কাছে ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে অভিরূপ। বি-টেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ ঢুকেছে সদ্য। ক্লাস শুরু হয়েছে কিছুদিন হলো।  এর মধ্যে জিনিয়ার সঙ্গে আলাপটা ভেবেছিলো কায়দা করে জমিয়ে নিতে পেরেছে। অল্প দিনের মধ্যেই মেয়েটা নিজের রং দেখিয়ে দিল! এইজন্যই বলে লাভ অ্যাফেয়ার চাইনিজ মালের মতো। টিকে যাবে তো লাইফ লং। না টিকবে তো এক সন্ধ্যাও না। শালা হুতিয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই।

অভিরূপরা একটু পলিশড্ পাজি। সরাসরি চুতিয়া বলে না। ওরা টিভি ফেসবুকেও  ইন্টারেস্ট পায় না। ইউটিউবে বিভিন্ন ভাইনস্ দেখে আনন্দ পায়। বিবি কি ভাইনস্ দেখে ওরা বন্ধুরা একে অন্যকে চুতিয়া না বলে হুতিয়া বলে। জিও সিমের দৌলতে দেড় ঘন্টা যেখানে ননস্টপ গ্যাঁজানো যায়, অন্তত সুতীর্থ আর অভীক এই গ্যাঁজানোতেই অভ্যস্ত। সেখানে অভিরূপ হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট করতে বেশি পছন্দ করে। সুতীর্থরা টাইপ করে কথা বলতে চায় না, কারণ জিওতে এতক্ষণ ফ্রী কথা বলা যায় যখন কি দুঃখে টাইপ করে হাত ব্যথা করবে? মেয়েরা অবশ্য হোয়াটস অ্যাপ বা ফেসবুক চ্যাটটাই পছন্দ করে বেশি। উল্টোদিকে বাজখাঁই বাবা কি ডিএসপি মা বসে থাকলেও দিব্যি কথা বলা যায়। মেয়েরাই বেশ। নেলপলিশ দেওয়া বড় বড় নখওয়ালা সরু সরু আঙুলে কী সুন্দর কিট কিট কুট কুট করে দ্রুত কত মনের কথা টাইপ করে ফেলে! 

ক্লাস টুয়েল্ভ পেরিয়ে কলেজে আসা তো নয়, যেন দীর্ঘ বারো বছর বনবাস থেকে ঘরে ফেরা। আহা, খোলা হাওয়ায় কেমন সুন্দর উড়তে থাকে জিনিয়ার স্টেপ কাট কন্ডিশনড্ চুল! কী মিষ্টি হাসিটা! প্রথমদিন থেকে ছকে নিয়েছে জিনিয়াকে। এ মীনা না হয় কিছু ছোটাবে পসিনা। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। মানে অভিরূপের সিনিয়র। নো ইস্যু, চলতা হ্যায় চলতা হ্যায় ভাই! কলেজ থেকে ফেরার পথে জিনিয়াকে অটোর  লাইনে দাঁড়াতে দেখে ইচ্ছে করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অভিনয় করে বলে, কাকিমা সাইড প্লিজ!

জিনিয়া পরের দিন অভিরূপকে কলেজে দেখে অবাক হয়ে বলে, তুমি কাল অটোর লাইনে আমার পিছনে ছিলে না? আর হ্যাঁ কি যেন বলে আমাকে ডেকেছিলে? কাকিমা! আমাকে কাকিমা মনে হলো? কোন ইয়ার? আগে দেখিনি তো? অভিরূপ একদম বাটামাছের মতো তাকিয়ে থেকে বললো, ফার্স্ট ইয়ার। জিনিয়া মুহূর্তে খিলখিল করে হেসে বললো, ও তাইই! ফ্রী হলে ক্যান্টিনে মিট কোরো। ব্যাস ওই শুরু। জিনিয়া আর অভিরূপ। অভিরূপের জিনের ভিতরে জিনিয়া। আনটোল্ড লাভ। ফাটাফাটি চলছে। সুতীর্থ আর অভীক কলেজ থেকে ফিরে সেই চিরাচরিত মায়ের সঙ্গে খুনসুটি। রাতে দেড় ঘন্টা ফ্রী জিও ফোনে। দুটো ছেলের দুই মায়ের গালে হাত। সুতীর্থ আর অভীক কি শেষমেশ গে হয়ে যাবে! সুতীর্থ অভীকও এবার বেশ প্রস্তাব পাশের ভঙ্গিতে বলাবলি করছে, আন্টি অর্থাৎ অভিরূপের মা যদি এর মধ্যে কখনো ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন যে অভিরূপ সুতীর্থ কিংবা অভীকের সঙ্গে আছে কিনাতাহলে ওরা ঠিক জানিয়ে দেবে অভিরূপের মা'কে, তার ছেলে তার চেয়ে দুবছরের বড় জিনিয়ার সঙ্গে মিস্টার লাভার লাভার খেলছে। হাসাহাসি করলেও কোথায় যেন একটা চিনচিনে ব্যথা জ্বালাতন করছে দুই বন্ধুর বুকের ভিতর। মাস আড়াই এরকম চলার পর থাকতে না পেরে অভীক নিজের মায়ের কাছে অভিরূপের হতে পারে লাভস্টোরির কথা শুনিয়ে মা'কে হাসাতে চাইলো, যাতে এখনও একটা প্রেমিকা জোটাতে পারলি না! পরে কিন্তু পাবি না খুঁজেএই বলে ঠোনা মারতে না পারে। অভীকের মা সবকিছু শুনে প্রথমে রেগে উঠলো। তারপর হাসতে হাসতে ক্যালেন্ডার দেখতে গেল। শ্রাবণ মাস। কয়েকদিন পরেই পূর্ণিমা। দেখে নিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো অভীকের মা, দাঁড়া ব্যাটা দেখি একটু তারপর অভিরূপ তোর হচ্ছে।

সেদিন জিনিয়া অভিরূপকে ইকোপার্কের কে এফ সি কর্ণারে ডাকলো। হেব্বি খাইয়ে দাইয়ে গিফ্ট দিয়ে শেষমেশ রাখী পরিয়ে ওকে ভাইটুউউ বলে মিষ্টি করে গাল টিপে আদর করে দিলো। আকাশে তখন রাখী পূর্ণিমার চাঁদটা অসভ্যের মতো হাসছে। বাইরে এসে জিনিয়া আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, অভি দেখ দেখ কী বড় আর সুন্দর চাঁদটা উঠেছে! জানিস আজ তো পূর্ণিমা! অভিরূপ এতক্ষণ মাথা নিচু করে রাখীটাই দেখে যাচ্ছিল। আচমকা জিনিয়ার হাতের ঝাঁকুনি খেয়ে বলে উঠলো, কি? কই? কার কাকিমা?



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন