শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শুভলক্ষ্মী ঘোষ

থেকে যাওয়া

-আচ্ছা, কী হচ্ছেটা কি?
-কেন! কী আবার হবে! তুমি লেখাপড়া করছ, মন দিয়ে তাই করো না!
-না, পারছি না লেখাপড়া করতে এরকম চলতে থাকলে কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে লেখাপড়া করা  সম্ভব নয়
-তোমার তো এদিকে নজর দেওয়ার দরকার নেই!
-দরকার নেই?  বাঃ... তুমি লাস্ট আধাঘন্টায় চারখানা রসগোল্লা আর আড়াইশো  রাবড়ি খেয়ে ফেলেছ, এবং তা সত্ত্বেও তুমি ফ্রিজের মধ্যে কীসব কন্সট্যান্ট হাতড়ে বেড়াচ্ছ। এর পরেও বলছ কি না দরকার নেই!
-হুঁ।
-মাআআ...
-হুঁ?
-কি বলছি, শুনছ?
-হুঁ ... হুঁ...
-আরে কী খুঁজছ বলবে তো? মাআআ...
-কী মুস্কিল! আমার বাতাসা’র কৌটোটা কোথায় গেল? মুড়কির ঠোঙা?
-হোয়াট! তুমি এরপর বাতাসা, মুড়কি এইসব আবার খাবে?
-মিষ্টি চানাচুর’এর প্যাকেটটা কোথায় রেখেছিস?
-উফফফ... টু মাচ! শোনো মা, এরকম ভাবে মিষ্টি খেও না বাই এনি চ্যান্স সুগার  বেড়ে গেলে কিন্তু বেডসোরগুলো আর সামলানো যাবে না বলে দিচ্ছি।
-ওসব আমার কবে সেরে গেছেতুই থাক তোর বেডসোর নিয়ে।
-সেরে গিয়েছে! বাঃ... চমৎকার... পা নাড়তে পারছি না... পা’এ কোনো সাড় পাচ্ছি না কেন... আঙুলে ব্যথা... হাঁটু ফুলে গিয়েছে... এগুলো’ও বোধকরি আর নেই!
-নেই’ই তো। আচ্ছা মৌরি লজেন্সগুলো কে শেষ করল?
-তোমার নাতি।
-ও, তা ভালো করেছে
-এই বেলা দেখ...সাত খুন মাপ!

মিনিট দুএর নীরবতা -
-আচ্ছা, শোন! কি রে শুনছিস?
-হুঁ শুনছি, বল
-বলছি কী, বাঞ্ছারাম থেকে নরম পাকের সন্দেশ এনে রাখবি তো, কদ্দিন খাই নি!
-হুঁ, আনবো।

এক মিনিট পরে -
-হ্যাঁ রে, রোব্বার তেল-কৈ করবি নাকি?
-কিইই? আবার তেল-কৈ! নিজে কাঁটা বেছে খেতে পারবে বলছ? শিওর?
-কেন? তুমি একটু মা’কে কাঁটা বেছে খাইয়ে দিতে পারবে না! ধাড়ি মেয়ে...
-ওকে... ওকে... কুল ডাউন... দেব, হয়েছে?
-হ্যাঁ

তিন মিনিট অতিক্রান্ত -
-সুমি,  সুমিইইই!
-হুঁ, এক মিনিট, এই লাইনটা... ওকে, হ্যাঁ, এবার বল
-এই, রসবড়া খাবি?
-রসবড়া! এই মাঝরাতে!
-আচ্ছা, এখন খাবার কথা বললাম? খেতে যে ইচ্ছে হয়েছে সেইটে তোমাকে জানাতে চাইছি।
-মা শোনো, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড... তোমার খাওয়ায় কিছু রেস্ট্রিকশন রয়েছে এবং সেগুলো তোমাকে মানতে হবে, নইলে কিন্তু তুমি সেরে উঠবে না
-রাখ তোর রেস্ট্রিকশন তুই থাক অমন না খেয়ে হাড়গিলে হয়েএকটু রসবড়া  খেতে চাইছি, তাইতে বুড়ো মা’টাকে অমন কচ্ছিস? কচ্ছিস তো! কর... কর...  থাকব না যেদিন, সেদিন বুঝবে... তখন মনে করবে, মা এটা খেতে চেয়েছিল, ওটা খেতে চেয়েছিল, আমি দিই নি!
-আবার সেই ইমোশানাল ব্ল্যাক-মেইল! কতবার বারণ করেছি, এরকম বলবে না, এরকম বলতে নেই!
-তা’লে রসবড়া খাওয়াবি বল?
-অগত্যা না দিলে আমার নিস্তার আছে? আমার ঘাড়ে ক’টা মাথা! কালকে দেখি ব্যবস্থা করছি। আচ্ছা শোনো, অনেক হয়েছে, এবার এদিকে এস তো রান্নাঘরে আর ছোঁক ছোঁক করে বেড়িও না, লোকে দেখলে কী বলবে! নাও, শুয়ে পড়, ভোর হয়ে আসছে...  দাও দিকি, পিঠটা চুলকে দিইদেখ, এক্ষুনি ঘুম এসে যাবে... মা... ও মাআআ... মা... কী হলো? মাআআ! কোথায় গেলে? মাআআ!

সুস্মিতা চিৎকার করে ডেকে ওঠার পর দেখল, দু’মাসের ওপর না-কাচা রাবড়ির রস লাগানো মা’র শাড়িখানা আলনায় পাট করে গুছিয়ে রাখা আছে।


1 টি মন্তব্য: