হলিডে
ইন
ভোরের
দিকে শীতল মেঝেতে পা রেখেই বিবি কেঁপে উঠলো। অর্ক মেঝেতেই ঘুমিয়ে।
বিবি
সম্ভবত অর্কর চাইতে বছর তিনেকের বড়। দু’বছর আগে এক সন্ধ্যায় বিবি কী করে এই অর্কর হাতটা
যে ধরে ফেললো সেসব আজ গল্প। সে হাতের উষ্ণতা ছেড়ে বিবির আর তারপর কখনও বেরুতেই
ইচ্ছে করেনি। আর অর্কও তার প্রতি ভীষণ মনোযোগী। যেমন বিবির জন্মদিন। অর্ক অন্তত
দিন সাতেক আগে নিরিবিলি কোনো রিসর্টে এবারের জন্মদিনটা সেলিব্রেট করার প্রস্তাব
করে। বোনাস হিসেবে একটা পুরো রাত ওরা নিজেদের মতো কাটাবে। সেদিনটা মাথায় রেখে
বিবিও ট্যুর ফেলে দেয় নিতাইগঞ্জ। অর্কর নিপাট ব্যাচেলর লাইফ। এত ম্যানেজের বালাই
নেই।
একটু
আগেও ওরা কথা বলছিল। প্রেমিক শব্দরা এখনও হয়তো ঘরের আনাচ কানাচে ছড়িয়ে। এই তো বিবি অর্কর কাঁধে মাথা
রেখে বেণীমাধব গাইছিল। এখন নিঃস্তব্ধতা। বাইরে ঝিঁঝিপোকা না কি এসির গুঞ্জন বিবি
বুঝতে পারে না। রাত ক্রমে সীমারেখা টানছে ওদের মাঝখানে। একটু দূরে সুদৃশ্য কেকের
অর্ধাংশ। রুম সার্ভিস থেকে ডিনার সার্ভ করে গেছে অনেকক্ষণ। হুইস্কির গ্লাস দুটোর
একটি গড়িয়ে বিছানার ধারে এসে থমকে। ছাইদানিটা দুজনের কার পায়ের তলায় ঘাপটি মেরে, বলা মুশকিল।
সাদা চাদরের সাথে সিগারেটের ছাইয়ের আলাপচারিতার মাঝে কী করে যেন সুরটা কেটে গেল। আড়চোখে অর্ক তাকিয়ে দেখলো,
হাঁটুতে মুখ গুঁজে বিবি। নরম করেই ও বললো - তুমি কি একটা চুমু খেতে পারো
আমাকে, বিবি? বিবির কানে তা সত্তর ডেসিবল হয়ে প্রবেশ করল,
কিন্তু নড়লো না। দুম করে অর্কর মাথা গরম। এ কী, ঝগড়া মেটাতে ও সন্ধিপ্রস্তাব পাঠাচ্ছে, বিবির রাডার তা রিসিভই করছে না! অর্ধশায়িত অর্ক সোজা পা দুটো
টানটান মেলে দিল। অমনি বিছানার ধারে থমকে থাকা গেলাস সশব্দে মেঝেতে। বিবি চোখ
খুললো না। মাথাটা কেমন করছে অর্কর। সিগারেটের প্যাকেটটা খুঁজে পাচ্ছে না। উঠে সাইড
টেবিলের গায়ে সপাট লাথি। বিবি একবার মুখ তুললো। তারপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। অর্ক
ঘরের মাঝখানে বোকার মতো দাঁড়িয়ে।
বহুদিন
পর একটা এডভেঞ্চারাস দিন। গাছের পাতায় নতুন রোদের হাসি । বিবি গাল দুটো ব্লাশ করতে
করতে হঠাৎ মনে এলো, এই যাহ, নিরোধকই আনা হয়নি। ট্রেনের জানালায় অর্কর
হাত, বিবির ইচ্ছে করছে ছুঁয়ে থাকতে। অর্ক কী বুঝল, ডান হাতে বিবিকে জড়ালো। বিবির
বুকেও হঠাৎ সূর্যোদয়। ট্রেন থেকে নেমে পাকা রাস্তা পেরিয়ে আরো দু’কিলোমিটার
এবড়োখেবড়ো পথ পেরুলো রিক্সায়। বিবির মুখে বিন্দু বিন্দু মুক্তোদানা। অর্ক বিবির ঠোঁটে মনোযোগী। রিক্সা
ততক্ষণে ঘন শালবনের ভেতর দিয়ে রিসর্ট হলিডে ইনে। সারাদুপুর খুনসুটি। শেষবিকেলে
বিয়ারের ক্যান আর অর্কর অর্ডার করা বার্থডে কেক কেটে ওরা বাকি সময়টা বারান্দায়।
কখনও অর্ক গান গাইছে। কখনও বিবি।
হুইস্কি
সবে চার পেরিয়েছে। চিকেন পকোড়াগুলো তবু মিইয়ে গেল। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইগুলোর সটান ভাব
বিলীন। বিবি বেশ টানটান ভঙ্গীতে সিগারেট ধরিয়ে গোল রিঙ বানালো, তারপর হঠাৎ
বললো, আমার একটা ভালো ছবি নেই জানিস! কেউ তুলেই
দেয় না! সবাই ফেবুতে কেমন রোজ রোজ
প্রোফাইল ছবি পালটায়। অর্ক তার ডি এস এল আরে তোলা নেচারের ছবিগুলো দেখছিল।
বললো, মানে?
এই তো আজকেও ছবি তুলে
দিলাম। এত অকৃতজ্ঞ কেন রে তুই? বিবি সিগারেটের ছাই ঝেড়ে
সিগারেটটা অর্ককে দিল। ধীরেসুস্থে দু’টো পেগ বানালো। তারপর
ফেসবুক খুলে সোমার ছবিটা দেখিয়ে বলল, দ্যাখ। এরকম না হলে
প্রোফাইল ছবি করা যায় না। নেচার আর নারী কীভাবে মিলেমিশে আছে। কই দেখা আমার এমন
একটা ছবি? তুলিস তো
এলেবেলে সব ছবি... অর্কর কেন যেন খুব
তর্ক পেয়ে বসলো। তার তোলা ছবির মান এত খারাপ তা সে মানবে কেন! এ কথা সে কথায় জড়িয়ে
ফস করে কখন যে বলে বসলো, যে বয়সে
যেমন ছবি আসে। ব্যস... বিবি গুম। বয়স বাড়ছে
সে জানে। তাই বলে এমন করে...! কিন্তু
উত্তেজনায় অর্ক গুলিয়ে ফেলেছে সব। কাজেই
আরো এক পেগ। পাঁচ পেরিয়ে গেলে সব গোলমাল।
বিবি
কথা বলছেই না। কেন? কেন বলবে না! বিবিকে টান মেরে তুলে আচমকা এক চড় বিবির গালে।
------------
ভোরের
দিকে বিছানা ছেড়ে শীতল মেঝেতে পা রেখেই বিবি কেঁপে উঠলো। অর্ক মেঝেতেই ঘুমিয়ে। জানালার
ঝাপসা কাচ জানাচ্ছে বাইরে তুমুল বৃষ্টি। গুটিশুটি মেরে থাকা অর্ককে দেখে ইচ্ছে হলো ব্লাঙ্কেটটা
তুলে চাপা দিতে। পরক্ষণে মনে হলো অর্কর গায়ে সেও এই হাত যথেচ্ছ তুলেছে রাতে। আয়নায়
চোখ। নিজের গালটাও ডানদিকে বিচ্ছিরি ফুলে লাল হয়ে আছে। ফোন খুলে সকালের প্রথম
ট্রেনের সময় দেখে নিতে নিতে মেঝেতে পড়ে থাকা অন্তর্বাস, জিন্স তুলে
নিল ও।
বৃষ্টি
আরও বাড়ছে।
ঘুমের
মধ্যে অর্ক কাঁদছে। বিড়বিড় করে বলে চলেছে... খুব খুব সরি রে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন