ভাঙন
আমাদের বাড়ির একটা ঘর বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। কিন্তু যখনই যাই সেই ঘরে কান্নার শব্দ শুনতে পাই। খুব ভালো ক’রে বারবার দেখি, কোথাও কোনো মানুষ নেই, কিন্তু কান্নার শব্দ পাচ্ছি। তবে কোথা থেকে আসছে এই কান্নার শব্দ?
বুকের মাঝখানে হাত দিতেই একটা শোঁ-শোঁ শব্দ শুনতে পেলাম। যেন ঝড় আসছে। সাথে সাথেই শুরু হয় দমকা হাওয়া। মুহূর্তেই ঘরের সবকিছু ওলোটপালোট হতে থাকলো। জানালার পাল্লাগুলো বার বার খুলে যাচ্ছিল। আমি কোনো রকমে একটা চেয়ার আঁকড়ে বসে পড়লাম। ঘরের সব বই’এর পাতাগুলো উড়তে শুরু করলো। এবার একটা হাত খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আমাকে টেনে নিল খাটের নিচে। একটা মানুষের গলা শুনতে পেলাম, ‘ঝড় এলে খাটের নিচে আশ্রয় নিতে হয় এটা ভুলে গেলি, মিঠাই!’ আমি তাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলাম ভয়ে। এভাবে অনেকক্ষণ কাটলো। ঝড় থেমে গেলে দেখি, কোথাও কেউ নেই। শুধু একটা গন্ধ ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারপর আবার শুরু হলো সেই কান্নার শব্দ।
কেউ একজন বলছে, ‘মনে আছে মিঠাই, তোর আগের সেইসব কথা? যখন ঝড় আসতো, আমরা সবাই একঘরে থাকতাম! আমাদের জমি দেখতো যে রহমত, তোর সেই বন্ধু খ্রিস্টান মেয়েটি আর আমাদের কাজের মাসি জয়মালা! গরুগুলো ভয় পেত ব’লে তাদেরও ঘরের এক কোণে নিয়ে আসতাম, তারপর পাড়ার কেউ কেউ আসতো, ঝড়ে ঘর ভাঙলেও। আমাদের কেউ আলাদা করতে পারেনি। যে কোনো ঝড়ে আমরা একসাথে থাকতাম। কিন্তু এখন দেশ জুড়ে যে ভাঙনের ঝড় শুরু হয়েছে, কোথায় আমরা লুকোই, বল মিঠাই?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন