সমাপতন
দরজার
ওপাশে যখন বেজে উঠল বাজনাটা তখন আদুড় বুকে গামছা জড়াচ্ছে মহুয়া। সেতারের সুরটা
শুনেই ভুরু কুঁচকেছিল তার। এমন অসময়ে ফোন তো কখনও করে না প্রজ্ঞান!
ছিটকিনি
সরালেই বাথরুম থেকে সটান বেডরুমে। ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে রাখা ছিল হ্যান্ডসেটটা।
ভিজে হাতেই যন্ত্রটাকে কানে তুলে নেয় মহুয়া। এসময় ফোন করছে মানে নির্ঘাত খুব জরুরি
ব্যাপার।
কলটা
রিসিভ করেই সচকিত হয়ে ওঠে সে।
একরাশ
মানুষের উত্তেজিত গুঞ্জন।
গাড়িঘোড়ার
হর্ন।
তার মধ্যেই
ভেসে এল সেই অপরিচিত পুরুষকণ্ঠ, ভেরি সরি ম্যাডাম। খুব খারাপ একটা নিউজ। হাজরা
ক্রসিং-এ একটা ডেডবডির পকেট থেকে পাওয়া গেছে মোবাইলটা। বাসে রান ওভার হয়েছেন
ভদ্রলোক...
দম
আটকে আসছে মহুয়ার। যেন কেউ সবল হাতে চেপে ধরেছে তার টুঁটি। আয়নায় তার স্থবির মূর্তিটার
মুখে কারা যেন লেপে দিয়েছে একরাশ সিঁদুর। চোখের নীরব অশ্রুলেখা মিশেছে সেই লালচে
গুঁড়োয়। আয়না বেয়ে যেন গড়িয়ে নামে রক্তের ধারা...
আচমকা
যেন আবার ভেসে এল বাজনাটা। এবারে দরজার দিক থেকে। সেই সেতারের সুর। হাত-পা অসাড়
হয়ে আসছে মহুয়ার।
ডোরবেল।
সেতার
খুব পছন্দ বলে এই সুরটাকে ফ্ল্যাটের ডোরবেলের মিউজিকে সেট করেছিল প্রজ্ঞান। নিজের
মোবাইলে প্রজ্ঞানের নামের পাশে সেই সুরটাকেই রিংটোনে বসিয়েছিল মহুয়া।
থেমে
গেছে বাজনা। এবার খুব অসহিষ্ণুভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছে কেউ।
ঘেমে নেয়ে
ওঠা শরীরে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসতে বসতেই দরজার ওপাশ থেকে প্রজ্ঞানের গজগজানি কানে আসে
মহুয়ার, কী কুম্ভকর্ণ মেয়ে রে বাবা...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন