অলক্ত
কথামালা
আর মাত্র ছয় সাতদিন পরেই ঘাটকাজ। তারপর শ্রাদ্ধশান্তি ইত্যাদি পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম। এর মধ্যে পিরিয়ড হয়ে যাবে যে কোনোদিন। মধ্যবয়সি শর্মিলার মাসিক নিয়মিত হয় না। কাজের দিনে যদি শুরু হয়ে যায়, বাধা পড়ে কাজ বিলম্বিত হবে। মাথা কাজ করে না এসব ভেবে। শেষমেশ ওষুধ খাওয়া ছাড়া আর কিছু উপায় নেই দেখে ওষুধের দোকানে গিয়ে পিরিয়ড পিছনোর ওষুধ কিনতে যায় শর্মিলা। দোকানদার ঠোঁটের কোণে একটু বাঁকা হাসি চেপে ওষুধের বাক্স থেকে একপাতা ওষুধ বার করে দেয়।
কিনে নিয়ে এসে বাড়িতে ঢুকতেই মায়ের প্রচণ্ড চিৎকার। কে বলেছে তোকে এই অশৌচের মধ্যে একা একা দোকানে যেতে?
ধিঙ্গিপনা তো অনেক করলি! বিধবা হয়েছিস বুড়ো বাবা মায়ের সামনে। সেই হতভাগাটারও বুড়ো বাপ মা বেঁচে আছে। আমরা কি বেঁচে আছি এই দিন দেখার জন্য!
তোর কি একটুও আক্কেল হবে না কখনো? শর্মিলা সামান্য টাল খেয়ে নিজেকে সামলে নিলো মায়ের ঝাঁঝরা করা কথাগুলো হজম করে। কিছুক্ষণ পরে একটু গম্ভীর গলায় বললো,
দেখো মা,
তোমাদের ব্রাহ্মণ্যে যাতে আঘাত না লাগে,
আমি এই টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরিতে দাঁড়িয়ে মাল্টিন্যাশনাল ফার্মে চাকরি করা মেয়ে হয়েও...। মা মেয়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো, কি কি, টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরির চাকরি করা মেয়ে হয়েও? কত মাথা কিনে নিয়েছো একেবারে? শর্মিলা আর কিছু না বলে ভিতরের ঘরে চলে গেলো।
খাটের কোণায় দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আনমনা হয়ে ভাবতে লাগলো। যেন ক্রমশঃ ছোট হয়ে যাচ্ছে শর্মিলা, গ্রামের বাড়ি, বাড়ির পিছন দিকের মাঠ, দাড়িয়াবান্ধার বড় বড় চৌখুপি...! রমেন চৌখুপির ভিতরে দাঁড়িয়ে। শর্মিলাকে টপকে সামনের, বাঁদিকের কোনো খোপেই যেতে পারছে না। তারপর নিজেই হাত বাড়িয়ে দিলো শর্মিলার দিকে,
আয়, নে ছোঁ আমাকে। নে হাত ধর আমার!
কি রে!
পারছিস না কেন? আউট করবি কি করে আমাকে? শর্মিলা লজ্জায় লাল হয়ে একছুট্টে দাড়িয়াবান্ধার কোর্ট ছেড়ে দৌড়। রমেনের বাবা আর শর্মিলার বাবা ওরা দুই বন্ধু তখন থেকেই ঠিক করে রেখেছেন যে বড় হলে বিয়ে হবে রমেন শর্মিলার। এসবের আগামী আভাস তাই আরক্ত হয়ে ওঠা। তাই অস্থিরতা। গরম কাল, সামনে পুকুরের স্বচ্ছ জলে গোধুলি আলো ঝলমল করছে। জলের গন্ধ যেন নেশা লাগিয়ে ঝিম ধরিয়ে দিচ্ছে অণু পরমাণুতে। রমেন পিছনে পিছনে জোরে জোরে হেসে হেসে বলছে, সামনে দিয়ে পালিয়ে যাব ধরতে পারবি না...
পুকুরের পাশ দিয়ে ছুটে যেতে যেতে পুকুর পেরিয়ে আর যাওয়া হল না। হুড়োহুড়ি করে শর্মিলা নেমে গেল সাঁতার কাটতে। কমলা কাকিমা এসে ঘাটে বসে বাসন মাজছিলো। শর্মিলা মাঝপুকুরে অনেকক্ষণ সাঁতার কেটে ঘাটের কাছাকাছি গলা অবধি ডুবে গল্প করছিলো। সরু কালো পাড় নয়তো বাদামি পাড় সাদা খোলের শাড়িতে কাকিমাকে অন্যরকম সুন্দর লাগতো শর্মিলার। স্নান সেরে উঠে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে জামা নিংড়ে জল ফেলছিলো, তখন খেয়াল করল,
কাকিমা বাসন ধোয়া শেষে পেচ্ছাপ করছে। ঘাটের ভেজা কাঠের গুঁড়ির ফাঁকে পেচ্ছাপ যেটুকু জমছে তার জলটা আলতা গোলার মতো লাল। শর্মিলা জিজ্ঞাসা করেছিলো, তুমি আলতা হিসু করছো কাকিমা?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন