সে হত হয়েছিল
ঐ আকাশটা গনগনে আগুনের ফার্নেস
নীলের ছোঁয়া নেই হলকা তাপে ঝলসাচ্ছে শরীর
বাতাসে লেশমাত্র অক্সিজেন নেই
হাঁ করে জোরে বাতাস টানাটা ব্যভিচার
দমকে দমকে আগুনের লকলকে শিখা
বুকের ভেতরে থরে থরে জমতে থাকে
সুতীব্র দহন জ্বালা সারাটা অস্তিত্ব জুড়ে
এখনই সেই নীলাভ কবিতাটি লিখে নিতে হবে
এমনি প্রখর দহন বেলায় তাকে হত্যা করে
চলন্ত বাসে তকমা পরা পুলিশ বাহিনী
প্রতিবাদী মিছিলে সিনা উঁচু করে কদম কদম
এগোচ্ছিল নির্ভীক নওজোয়ান
ঘরে জ্বরাক্রান্ত বৃদ্ধ বাবা-মা নেহাতই কিশোরী
ছোট বোনটি আনাড়ি হাতে পরিচর্যায়
ঠিক এমনি দিনে প্রকাশ্য প্রকট দিবালোকে
বেয়নেটের খোঁচায় মিছিলে হাঁটার অপরাধে
তাকে হত্যা করা হয়েছিল, সে হত হয়েছিল
নীল নীল বেদনা নিয়ে এই স্বাধীন দেশ ছেড়ে
ফুটপাতে মুখগুঁজে একটু অক্সিজেন চেয়ে
সজোরে বুকের হাঁপর টেনে স্তব্ধ হয়েছিল
স্বাধীনতা কর্তব্য অধিকার সংবিধান আইন?
সেদিন তাকে ঘিরে অট্টহাসি হেসে শবানুগমনে
মরণ নৃত্য নেচেছিলো আমার
স্বদেশের মাটিতে
মোহনা
মৃত্যু থেকে মৃত্যুতে পদচারণা করে
রূপ থেকে রূপান্তরে রূপায়িত হয়ে
আমি চলেছি অন্য ভুবনের অন্য এক
অমল জ্যোতির অনাস্বাদিত মোহনায়।
কে তুমি পেছনে থেকে অবিরাম,
কে তুমি আমার আঁচল ধরে টানো?
জানো না এ জগতে এ জীবনে
স্থির কিছু নেই সবই অস্থির চলমান!
চলিষ্ণুতা জীবনের একমাত্র সত্য,
জীবনের আরেক নাম পথ, চলাই তার
সারসত্য গতিতে সমর্পিত অনির্বাণ সে!
সেই কবে ছিল এক অন্ধকার অন্তহীন
তারই মাঝে ঝলকে উঠেছিল সুপ্রকাশ
আলোয় বিভাসিত অমিয় প্রাণকণা,
প্রাণকণা সেও তো রূপান্তরিত প্রতিক্ষণ
সেও তো চলমান চিরকাল অবিরাম।
অন্ধকার থেকে আলোর বৈভবে
জন্মের প্রথম দিনে কান্নার উতরোলে
বলেছি আমি কন্যা আমি পৃথিবীর নারী
অনন্তকাল মৃত্তিকাকন্যা নারীই শুধু।
আমার কি রূপান্তর নেই, স্থির প্রতিমা?
শুধু কোমল নবনী কন্যা, মোহিনী প্রিয়া
জায়া ও স্নেহদা জননী? আর কিছু নই?
রূপান্তরহীন গতিহীন এইমাত্র পরিচয়?
সীমার বন্ধনে সীমায়িত রুদ্ধ আত্মা,
চিরন্তনী নারী তার বেশী কণামাত্র নই?
গতিশীল রূপান্তরে স্থির চিত্রকলা!
তাহলে আমি কি জীবিত নই, গতি নেই
প্রাণ নেই, পিরামিডে স্থাপিত মমি
অজন্তার গুহাচিত্র, কোণার্কের নৃত্যপরা
ভাস্করের ছেনি খোদাই পাথর প্রতিমা!
দ্য ভিঞ্চির রহস্যময়ী মোনালিসা?
তার বেশী কোনদিনই কিছুই নই?
তাই যদি হয় প্রাণহীন আবেগ,
মৃত ভাবনার খোলসে জাবরকাটা
আর স্থবিরতায় আবদ্ধ নিষ্প্রাণতা
তার বেশী অন্য কোন পরিচয়
নারীর হতেই পারে না কোনদিন।
অথচ প্রতিটি দিন প্রতিটি পল
সুতীব্র এক গতিশীল আলোড়ন
রূপ থেকে রূপান্তরে অতিক্রমন
আমাকে ভেঙ্গে নিয়ে যায় সম্মুখে
পেছনে ফেরার পথ রুদ্ধ দেখি
প্রাণের অমোঘ প্রবাহে চলমান
আমার অস্তিত্ব হাহাকারে ভেসে
অনন্ত মোহনায় মিশে যেতে চায়
সব তাহলে মিথ্যা মরীচিকা মাত্র?
আমি বিশ্বাস করি না করবও না।
আজ আমি প্রশ্ন করতে চাই কেন,
কেন প্রবঞ্চিত আমি যুগ যুগ ধরে?
কেন আমি অধিকার আর মুক্তির
নিশ্চিত দাবি করি যখন জীবনের
মৌল অধিকারে নখ দন্ত বিদারিত
তুমি প্রশ্ন তোল নারীই দায়ী মাটি দায়ী
পৃথিবীর তাবৎ যুদ্ধ আর শান্তিহীনতার?
আমার বিস্ময় আকাশ ছোঁয়া স্তম্ভিত!
মাটি তোমার ধাত্রীভূমি
নারী জননী
সেই সত্য ভুলে গিয়ে অধিকার মোহে
তাদের দায়ী করার আগে আয়নায় কি
একবারও দেখোনা স্বরূপ? স্বাধিকারে
প্রমত্ত তুমি ধাত্রী জননীকে ভাব সম্পদ
তারচেয়ে একবিন্দু কম বেশী
নয়।
আমি পৃথিবীর কন্যা আজ প্রশ্ন করি—
নারীকে শৃঙ্খলে বাঁধার অধিকার
নিয়ম রীতিনীতির স্রষ্টা তুমি,
পৃথিবীকে কৃত্রিম রেখাচিত্রে খণ্ডিত
করার অধিকার কে তোমার হাতে দিল?
তুমি ভণ্ড প্রতারক, প্রতারণা শক্তি শুধু।
এবার প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হবে নিশ্চিত।
এ পৃথিবী ধাত্রী ভূমি আমার তোমার,
এই নারী মুক্ত কন্যা পৃথিবী মাতার,
এই পথ পাশাপাশি চলাচলের সকলের
আর অনন্ত এ মোহনা সবার মিলনের!
এই ভূমি, জল, আকাশ, বাতাস
বিভাসিত আলোকিত প্রাণের মহিমা
যতখানি তোমার ভাবো ঠিক ততখানি
সুনির্দিষ্ট সুনির্বাচিত তোমার আমার।
শত্রুপক্ষ কখনো ভাবিনি, মিত্র হয়ে
প্রসারিত করো হাত, হাত ধরাধরি করে
অবশ্যই পেয়ে যাবো আলোর মোহনা,
তোমার আমার স্বপ্নের সর্বশেষ ঠিকানা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন