বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭

অপরাহ্ণ সুসমিতো

কামিজ ও ফ্যানের বাতাস


পর্ব-১

ফ্যানের বাতাসের একটা শক্তি আছে পৃথিবীর অনেক শহরের মতোই ঢাকার ফ্যানের বাতাসের আলাদা একটা পার্সোন্যালিটি আছে প্রতি বছর যেহেতু বিদ্যুতের দাম বাড়ে, ফ্যানের বাতাসটারও দেমাগ বাড়ে
আলনার এক পাশে হ্যাঙ্গারে ঝুলে থাকা একটা কামিজের সাথে এই বাতাসটা ভাব ভালোবাসা করতে চায় সুযোগ বুঝেই কামিজটাকে দুলিয়ে দেয়... কী যেন পরশ মর্মে লাগে তার সময়টা বুঝি এরকমই

ফ্যানের বাতাস ও কামিজ

কামিজটা ছোটবেলা থেকে বাসায়, রাস্তার মোড়ে, স্কুলের কঠিন ম্যাডাম...কতিপয় আত্মীয় স্বজন  (যাদের চটের বস্তার মুখ) তাদের যৌন লালা থেকে পাশ কেটে, গোত্তা মেরে, ধরে বেঁধে বড় হয় বাতাসের এই অনুপম দোলা কামিজটার ভালো যে লাগে না; তা নয়
ফ্যানের বাতাসটা কামিজকে রিকোয়েস্ট পাঠায়, ইনবক্স করে কখনো অসুন্দর পেট মোটা পোক

কামিজ জানে কোনটা প্রণয়সূত্র, কোনটা বিদেশি ক্যালেন্ডারের পাতার মতো অবাস্তব সুন্দর, কোনটা ব্লু বার্ড গার্লস স্কুলের ব্যাগের মতো ভারী কোনটা বাবার মতো নুয়ে থাকা সংসার

ও কখনো বাতাসটাকে বার্তা পাঠায়; গরম পড়েছে ঢাকায়, দাও পরশ দাও দোলা

ফ্যানের বাতাসটা বাইরে গরম হাড়ি পাতিলের ঠুং ঠাং বাঁচিয়ে কামিজটাকে আগলে রাখে চীন থেকে সদ্য কেনা দুটো সাবমেরিনের মতো সরীসৃপ পানি ছিটিয়ে দেয়, জলসীমা রাখে মুক্ত

এই বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সে আজ ক্লাসে এক ছেলের ভারী ব্যাগে লুকিয়ে রাখা চাপাতি দেখতে পায় চমকে ওঠে, ভয় পায় তবে লুকিয়ে মোবাইলে ব্যাগটার ছবি তুলে রাখে বাসায় এসে কাউকে শেয়ার করতে পারে না তার মেজ বোনের সাথে শেয়ার করা রুমের দরজা বন্ধ করে গরম  কামিজটা খুলতে খুলতে ড্রেসিং টেবিল আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে ভাবে : এই শরীর এই শরীরটা আমার

মোবাইলে ধারণকৃত চাপাতিসহ ব্যাগটার ছবি ভাইরাল করে দেবে কিনা ভেবে অকূল বাড়ির ছোট মেয়েটা কামিজটা আলনার এক পাশে হ্যাঙ্গারে ঝুলে থাকে বাতাসের অপেক্ষায়

মেয়েটা ভাত ঘুমে বিছানায় আলতো ঘুমোয় দুপুরটাকে বিকালের দিকে ঠেলে দিয়ে  ফ্যানের বাতাস লা রে লা প্পা ঘুরতে থাকে রুমের চারপাশে, কামিজটাকে বৃত্ত করে


পর্ব-২

ছয়টা গাছের আড়াল থেকে সূর্যটা উঁকি দিলো ছয় মুখ হাসি নিয়ে। এই রোদের নাম থাকা দরকার বনের ছায়ায়। দেহতরীর মতো অস্পষ্ট লাবণ্য আছে। গাছের অনেক উপরে উড়ে যায় আচানক দ্রুত গতির কোনো একটি বিমান। মায়াবতী মতোন কামিজ রোদচশমা সরিয়ে ঘাড় পেছনে সরিয়ে এক লহমা আকাশ দেখে।
কামিজ বিড়বিড় করে : ও বিমান কই যাও
শব্দবিহীন কোনো বিমান আছে? সে ভাবল... এতো শব্দ শহরে গাছের উপরে। বেলী ড্যান্সারের মতো দেখতে পারসিয়ান ফ্লেভারের একটা মেয়ে তাকে ক্রস করে গেল। এই কিছুদিন হলো তার যে কোনো ভারী কোনো মেয়েকে দেখলে মনে হয় : বেলী ড্যান্সার।
রোদ চশমাটা খুলে ব্যাগে ভরে নিল। সেলফোনটা নিয়ে খামোকা দেখল কোনো টেক্সট এলো কিনা। তাকে টেক্সট লেখার মানুষ খুব কম আছে এই ভূমন্ডলে। বাসে ট্রেনে কত মানুষজন সেলফোনের স্ক্রিনে ডুবে থাকে নিশিদিন। তার কেন কেউ নেই!
রোদের নরম বর্ষাতি সরিয়ে তখনি টেক্সট এলো চামেলী শব্দে।
: তুমি কবে আসিবে মোর আঙ্গিনায়...
রৌদ্রছায়ার মুখে রোদের কলস সরিয়ে মৃদু হাসি ফোটে। এটা তো সেই মমতা গান।  দিয়া চক্রবর্তীর অমরাবতী গান। কানের কাছে কে যেন ডাক দিল;
: এই রৌদ্রছায়া এই

নেপালের ড্রেস পরা দুটো মেয়ে কলকল করে তাকে পাশ কেটে চলে যায়, পাশ কাটবার সময় কী রকম একটা চেনা সৌরভ ছড়ায়। এক অণুক্ষণে সে সৌরভটা চিনে ফেলে।
রৌদ্রছায়া ঠোঁটের কোণে নাগরিক হাসি ঝুলিয়ে দেয়। ফ্যানের বাতাস ফ্যানের বাতাস...








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন