পেটেন্ট
গত পূর্ণিমার অপূর্ব
জ্যোৎস্নায় আপ্লুত হইয়া ভূতপূর্ব প্রেমাস্পদের উদ্দেশ্যে আপনার দীর্ঘশ্বাসগুলি যখন
চন্দ্রযানের লাঙুল ধরিয়া চাঁদবদনী অভিমুখে যাত্রা করিয়াছিল তখন হয়তো আপনি হুঁশ করিতে
পারেন নাই আপনার অলক্ষ্যে আইকেয়া মুরাক্যামি ধূমকেতুটি কেমন ধুন্ধুমার ঘটাইতেছে। হুঁশ ফিরাইতে নাসীয়
হাব্বলবাব্বল মনুষ্য নামক প্রাণীবৃন্দের উদ্দেশ্যে একটি গূঢ় হুঁশিয়ারি জারি
করিয়াছেন। দীর্ঘ-শ্বাস হেতু আপনি
যদি সেই মুহূর্তে নাসা রন্ধ্রটি না খুলিয়া থাকেন তন্নিমিত্ত আপনার জ্ঞাতার্থে
সংবাদটি পুনরায় পরিবেশিত হইল-
বিষুববৃত্ত
ভাঙিয়া উড়িয়া আসিতেছে কল্পিত রেখাসমূহ। ভূপতিত হইলে সমূহ সর্বনাশ। আঙুলে
ধারণ করুন।
সংবাদটি
শুনিবা মাত্রই রাতের ঘুম ভাতের স্বাদ ও প্রেমের আস্বাদ সকলই বিস্বাদ হইয়া উঠিল।
মনুষ্যপ্রেমে উৎসর্গীকৃত প্রাণ আউলিয়া হইলে মনুষ্যকল্যাণের বন্ধ্যাজমিনেও
সরিষাফুলের নগ্ন কোলাহল প্রত্যক্ষ করিলাম। কোলাহল হইতে পদযাত্রা হইতে স্লোগান হইতে
হস্ত-পদ্মের বিবাদ পর্যন্ত সমস্তই যখন করোটির সম্মুখভাগে স্থাপিত লেন্সের মাধ্যমে
ভিসান হইয়া উঠিল তখন নিজেরে আর রুধিয়া রাখিতে পারিলাম না। তন্নিমিত্ত
নিভৃত ল্যাবরেটরির ল্যাবিরিন্থে বসিয়া ঢাকাই মসলিনের গল্পকথার ন্যায় সূক্ষ্ম
পেটেন্ট তৈয়ারী করিয়াছি। পেটেন্টশালায় জমা করিবার পূর্বে আপনারই কল্যাণে আপনার উপর
প্রয়োগ করিতে মানস করিয়াছি। মনুষ্য তথা জাতি তথা বিশ্ব তথা মহাবিশ্বের কথা স্মরণ
করিয়া আপনি অর্থাৎ আমার প্রিয় পাঠক আমার গবেষণাজাত পাঁচনটি গলাদ্ধকরণ করিতে দ্বিধা
করিবেন না এটুকু কল্পনা করিতে না পারিলে অকল্পিত যমালয়ে যাইয়া যমরাজ যখন প্রশ্ন
করিবেন ‘ভবে আসিয়া করিলে কি?’ তখন কোন লজ্জায় বলিব, বাস্তব-অবাস্তবের চক্করে পড়িয়া
কল্পনার পাখিটি ডানা ঝাপটাইতে গিয়াও মুখ থুবড়াইয়া পড়িয়াছে। কবি হউক বা পাঠক,
সংশয়মুক্ত জীব বলিয়া কোনো প্রামাণ্যগ্রন্থ আজিও দর্শন করি নাই। আপনি যাহাতে
ব্রজরাজ কারফর্মার আরেক গুল্প বলিয়া উড়াইয়া দিতে না পারেন, সেইহেতু পাঁচনটির
প্রস্তুতপ্রণালীও আপনার জ্ঞাতার্থে লিপিবদ্ধ করিয়া দিলাম।
সুতরাং
আসুন পাঠক, বাম-ডান সমস্ত দেবাদিদেব স্মরণপূর্বক খলনুড়ি লইয়া প্রস্তুত হইয়া বসুন-
প্রস্তুতিপর্ব-১
প্রেমের
কসমিক রেডিয়েশান হইতে কিছুদিন নিজেকে মুক্ত রাখুন। প্রেমফ্রেম ভাঙিয়া গোলালুরসে জর্জরিত শব্দগুলিকে অব্যাহতি দিন। শব্দের জন্মকালীন রেণুগুলি চূর্ণ করিয়া বোরোসিলের স্বচ্ছতায় উদ্ভাসিত করিয়া
তুলুন।
প্রস্তুতিপর্ব-২
শীতলপাটি
বিছাইয়া নিম্নলিখিত মিশ্রণটি প্রস্তুত করিতে বসুন -
১। নৈঃশব্দ্যজাত নিঃসঙ্গতার তিনটি টুকরো
২।
মোহরজাত মূর্ছনার একটুকরো রেশ
৩।
মৈথুনজাত উল্লাস পরিমাণ মতো
{
মিশ্রণ প্রণালীতে মিলনান্তক উপসংহার হেতু শেষদৃশ্যে উত্তমসূচিত্রার এলায়িত মিলনমিথ
সর্বত পরিত্যাজ্য। প্রয়োজনে আত্মহত্যাপূর্ব মরণচুম্বনের শ্যামসোহাগ পরীক্ষণীয় }
প্রস্তুতিপর্ব-৩
মিশ্রণটি
তৈরি হইলে দীর্ঘসূত্রতা হইতে ছুটিপ্রাপ্ত নাসায় ফুটিয়া উঠিবে নার্সিসাস। একটি
জ্যোৎস্নালাঞ্ছিত পাত্রে আপনাতে
আপনি মাতালের সহিত উদ্ভাস মিশাইয়া জারিত করুন কিছুদিন। জিহ্বায়
লইয়া নদীর স্বাদ পাইলে বুঝিবেন আপনি তৈরি।
প্রস্তুতিপর্ব-৪
অতঃপর অন্তঃস্থলে
আঙুলের রেখাগুলি স্থাপন করিয়া অপেক্ষা করিতে থাকুন অন্তিম পাখির জন্য। মৃত্যুর উল্লাস পানপাতায় গড়াইয়া আসিলে কোলাহল মুক্ত কর্ণকুহরে ব্রহ্মনাদ
পরীক্ষা প্রার্থনীয়। শ্রুতিমধুর হইলে একে একে
উড়াইয়া দিন সংবর্তনে।
অথঃ
প্রস্তুতিপর্ব সমাপ্ত।
এক্ষণে
ওড়নকলার জ্যামিতি হইতে বহিরঙ্গের অবস্থান বিষয়ে আপনি উদাসীন হইয়া উঠিয়াছেন। ইহাই পরম মুহূর্ত। পরমহংস মুদ্রায় থিয়োসফি গাঢ় হইলে দেখিবেন আপনার পিউকাঁহা
যথার্থ গতিপ্রাপ্ত হইয়াছে এবং আপনি উড়িয়া যাইতেছেন কেপলার বাইশের কক্ষপথে নূতন
বিষুববৃত্ত সম্ভাবনায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন