বাঘ
রিয়া খাটের উপর বসা। চোখ মুখ ফ্যাকাশে। ভাষাহীন চাহনি। এক পা লম্বা করে মেলে রেখেছে। আর এক পা
ভাঁজ করা। মাঝে মাঝে গাল দুটো ফোলাচ্ছে, বাবলগাম খেলে ঠিক যেমনটা ফুলে ওঠে! ওড়না খুলে পাশেই
পড়ে রয়েছে। অনেক রাত অব্দি রিয়া রনির হাত ধরে বসেছিল। প্রাণভরে দুজন দুজনের ঘোলাটে
চোখ দেখেছে। ভোর পাঁচটা নাগাদ পাশের ঘরে
শরীরটা এলিয়েছিল সোফার উপর।
একে একে আশপাশের বিশেষ করে
ফ্ল্যাটের মানুষজন আসছেন। সকাল ছটা নাগাদ প্রাণপাখিটা উড়ে গেছে, এমন দাবি করছে
আয়াদি। মেঝেতে শুয়েছিল সে। রিয়া ওই ঘরে যাবার কিছুক্ষণ পর নাকি মাথা নাড়িয়েছিল
রনি। তারপরই স্থির হয়ে যায়। রিয়া সেই থেকে ভ্যাকান্ট দৃষ্টি মেলে বসে রনির মৃতদেহের
পাশে। কাঁদেনি। বছর খানেক হল আয়াদি এ বাড়িতে। রনির লিভারে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর একদিনও দেরি করেনি রিয়া। প্রচুর ভোগান্তির পর অবশেষে ব্যাঙ্গালোর
জবাব দেয়। বাড়ি ফেরে রিয়া রনিকে নিয়ে। তিনমাস বাঁচতে পারে – এমনটাই বলেছিল স্পেশালিষ্টরা।
মফস্বলের হাওয়া বাতাস আর
রিয়ার প্রেম রনির জীবন এক বছর বাড়িয়ে দিয়েছিল। আয়াদি আত্মীয় স্বজনকে ফোনাফুনি করে
খবর দিচ্ছে।রিয়া কিছু দেখতে পাচ্ছিল না, শুনতেও পাচ্ছিল না। যা কিছু ঘটেছিল কিংবা ঘটবে ভেবেছিল, সেসব নিয়ে
অন্য একটি সংসার গড়ছে বা ভাঙছে হয়তো বা! নতুবা সেই দিনটির কথা ভাবছে যেদিন টিউশন ফাঁকি দিয়ে
উধাও হয়েছিল মিরিকের পথে। পাহাড়ের কোলে একটি বিন্দু হয়ে বসেছিল দুজন। আর পরিকল্পনা করেছিল পাহাড়ে টং বানাবে, কেউ ওদের ছুঁতে পারবে না। মেঘ কুয়াশা
ওদের আড়াল করে রাখবে। রিয়া নিথর – রনি
পাথর। বিছানার চাদরের
নীল বাঘটা ওদের দেখছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন