ইঁদুর
অথবা মৃত্যুর গল্প
ইঁদুরটা
মরে গেছে।
না
মরে নি।
ও
তোমার দেওয়া বিষ মাখানো পাউরুটি খেয়েছে।
সে
খেয়েছে। খেয়ে নীলকণ্ঠ হয়ে আছে।
মরে
নি তো ওটা ওমন স্থির চোখে তাকিয়ে আছে কেন?
স্থির
তাকানো মানে বুঝিই মৃত্যু?
তবে
মৃত্যু কি? চোখ বন্ধ? বন্ধ চোখ মানে তো অনুভবও হতে পারে?
তুমি
চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে পারো?
চোখ
বন্ধ করলে আমার তোমার কথা মনে পড়ে। তারপর মনে পড়ে যুধিষ্ঠিরের কথা।
আমি
আর যুধিষ্ঠির ! তোমার বন্ধ চোখের কল্পনাশক্তি যে অসীম এটা মানতেই হবে।
বুঝলাম
না। চোখ বন্ধ হলেই তো কল্পনা।
তাই
বলে ছেলে মেয়ের প্রভেদ থাকবে না, রাজা গজায় প্রভেদ থাকবে না। সত্যযুগ আর কলিযুগ এক
হয়ে যাবে!
সময়
গুটিয়ে একাকার হয়ে গেলেই তো মৃত্যু। যখন জন্ম নিচ্ছো কোষ ভাঙছে - ভাঙতে ভাঙতে গড়ে
ওঠা। যখন মৃত্যু তখনও ভাঙছে - ভাঙতে ভাঙতে মিশে যাওয়া। জীবন আর মৃত্যু দুইই আসলে
ভাঙন।
তবে
কি বেঁচে থাকা বলে আলাদা কিছু নেই?
আছে
তো। বেঁচে থাকা মানে যেমন এখন তোমাকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
তুমি
পারোও বটে। মৃত্যুর কথা বলতে বলতে কারো চুমু খেতে ইচ্ছে করে?
সবই
যুধিষ্ঠিরের পাখির মতো। পাখি শুধু গাছের ডালে নেই। পাখির দিকে তাকিয়ে থাকা
আত্মীয়স্বজন প্রতিপক্ষ সবই আছে। পাখির সাথে সমান ভাবে আছে। তুমি কি জানো, বাবা
যেদিন মারা গেলেন সেদিন তোমাকে পেতে খুবই ইচ্ছে করছিল! চিতার সামনে দাঁড়িয়ে মনে
হচ্ছিল আজব হোমাগ্নি।
উফঃ,
তুমি আস্ত পাগল।
জানোতো
পাগলদের ইতিহাস চেতনা থাকে না। আর ইতিহাস মানে সূর্য ওঠা আর অস্ত যাওয়ার একটা
কাল্পনিক হিসেব। যোধাবাইকে চুমু খাবার সময় আকবর কি অন্য সূর্য দেখেছিল?
কিন্তু
সেইসব মানুষ কবেই মারা গেছে। কতো ঘোড়া মারা গেছে মাঝের শত সহস্র যুদ্ধে।
তুমি
শুধু পাখির চোখের কথা ভাবছ। অর্জুন যেমন শুধু যুদ্ধের কথা ভাবছিল। তুমি সুন্দর এই
কথাটা আমিই তোমাকে প্রথম বলছি নাকি?
দূর,
কি সব আজেবাজে কথা বলো।
লজ্জা
পেলে? তুমি তো সুন্দর। এর আগে কৃষ্ণ বলেছেন, লিওনার্ডো দা ভিঞ্চি বলেছেন, রবি
ঠাকুরও বলেছেন।
সমস্তটাই
তো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। সব সুন্দর ছাই।
ভেবে দেখো, আগুন মানে পাক। আগুন শুদ্ধ করে।
আগুন ঝরাপাতার বনাগ্নি। আগুন বনাঞ্চলের সার, সারাৎসার। তাই আগুন দেখে মনে পড়ল
তোমার পবিত্র শরীরের কথা। যে শরীর ধারণ করবে বীজ। জন্ম দেবে প্রজন্ম। এসো আমরা
শুদ্ধ হই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন