শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

সোনালি বেগম

যাযাবর

একদল গুর্জর সুদূর রাজস্থান থেকে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের হিনডন নদীর ধার ঘেঁষে হেঁটে চলেছে। সঙ্গে এক পাল ভেড়া। সবুজ ঘাসপাতার সন্ধানে এই ভ্রমণ। প্রতি বছর দিওয়ালির সময় রাজস্থান থেকে যাত্রা শুরু করে হোলির সময় আবার ফিরে যায় তারা নিজেদের গ্রামে। সবটাই পায়ে হেঁটে। কত যে শহুরে অভিযোগ এই যে বিরাট ভেড়ার পাল ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করে। শংকর সেই গুর্জর যাযাবর মেষপালক যুবকটি আপনমনে প্রতিবাদ করে, ‘বিলকুল নেহি! শহর কে লোগো কো এহ্ সমঝনা চাহিয়ে কি হমারে পশু কিতনা সেহি কতার মেঁ চলতে হ্যাঁয়।’
গাজিয়াবাদ খুব পছন্দের একটি জায়গা। কারণ এখানে অসংখ্য মাল্টি-স্টোরিড বিল্ডিং গড়ে উঠছে। সেখানে কিছু দিনের জন্য সহজেই মজুরের কাজ জুটে যায় তাদের। কিছু পয়সা হয়ে যায় কয়েকটা মাস। এই রকমটাই ভাবে শংকর এবং তার সঙ্গি সাথী। যখন গরমকাল ফিরে আসে ওরাও ফিরে যায় গ্রামে এবং সেই সময়টা পূর্ণ বয়স্ক ভেড়াদের লোম ছাঁটার সময়এক একটি ভেড়া থেকে পাওয়া আড়াইশো গ্রাম উল পাঁচ টাকায় ব্যবসায়ীদের বিক্রি করে দেয়। যেটা দিয়ে সেই ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টাকার ব্যবসা করে।
একটা মাল্টি-স্টোরিড বিল্ডিং-এ কাজ চলছে। চিৎকার কোনো বাচ্চা মেয়ের সম্ভবত। লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। ঐ বিল্ডিং-এর উপর তলা থেকে প্রপার্টি ডিলারের মস্তান মার্কা ছেলেটি হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমে এল এবং মোটর বাইক নিয়ে দ্রুত মেন রাস্তায় হাওয়া হয়ে গেল।
‘এহ্ কুকরম্ উস্ ল্যাড়কে নে হি কিয়া হ্যায়’ শংকরের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর
‘চুপ্। জাদা মত্ বোল্। তু ভি তো ওহাঁ থা!’ সঙ্গী মজুরটি বলে উঠল।
ইতিমধ্যে প্রপার্টি ডিলার এবং পুলিশের দল এসে হাজির। নিজেদের মধ্যে নানান আলোচনা হচ্ছে। বাচ্চা মেয়েটি একটি বিহারি মজুর পরিবারের আট বছরের মেয়ে। মা-বাপ কেঁদে কেঁদে আর্তনাদ করছে। পুলিশবাবুদের পায়ে পড়ছে। ‘হামকো, ন্যায় চাহিয়ে, বাবু। হামারা লেড়কি দম্ তোড় দিয়া হ্যায়।’
‘প্যায়সা লেকে চুপ্ হো যা সব্’
‘নেহি, হাম গরিব আদমি, ন্যায় দিলাও, সাহাব’
এরই মধ্যে কয়েকজন পুলিশ শংকরের হাতে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশের ভ্যানে তুলে দিল।
হতভম্ব শংকর ‘ষমা কিজিয়ে সাহাব, ম্যায় কুছ নেহি জানতা’
তখন অপরাহ্নের রোদ্দুরে এক পাল ভেড়া হিনডন নদীর ধারে সবুজ ঘাসের সন্ধানে হারিয়ে যেতে থাকে।        

        

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন