ফেসবুক...
দুজনের একই মোবাইল। পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকীতে দিয়ে ছিলো
বন্ধুরা। প্রায়ই ভুল হয়। কোন কোনদিন অভিধান নির্ঝরারটা, কোনদিন নির্ঝরা অভিধানের মোবাইল নিয়ে অফিস চলে যায়।
ডিনার শেষ করে দুজন ফেইস বুক নিয়ে বসে। শুভ নামে একটি আইডির
রিকোয়েস্ট পড়ে আছে অনেকদিন। ছবি নেই, ডিটেল কিছু লেখা নেই। ওয়াল জুড়ে ছবি আর কবিতা। কি মনে করে এতদিন পরে নির্ঝরা
রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে। সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ
-স্বাগতম!
-হুম
-আপনি কোথায় থাকেন?
-ঢাকা, বাংলাদেশ। আপনি?
-যাদবপুর, কলকাতা।
কি হলো শুতে যাবে না? অভিধানের কথায় মোহ ভাঙ্গে নির্ঝরার। যাও তুমি আসছি। অভিধান বেডরুমে এসে শুয়ে
পড়ে।
অফিসে বসে অভিধান একবার ফেইসবুকে ঢুঁ মারে। রাত্রির ইনবক্সে
কোন মেসেজ নেই। কি ভেবে লিখে দেয়-
আমার শরীর জুড়ে
জেগে ওঠে সব অলংকার
কলঙ্ক আমার হাতে,
উজ্জ্বলতা তোমার, কেবল তোমার!
অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে নির্ঝরা শুভতে ডুবে যায়।
-ঢাকা দেখতে নাকি খুব সুন্দর?
-তোমার চেয়ে সুন্দর নয়।
-আমায় তুমি দেখলে কোথায়? প্রোফাইল পিক তো নেই।
-একটা ছবি পাঠাও।
-তোমারটা আগে পাঠাও।
অভিধান আর নির্ঝরা কয়েক মাস ধরেই খেয়াল করছে সন্তান না হওয়া
নিয়ে তাদের রোজকার ঝগড়াটা আর নেই। কোন দুঃখ নেই, কান্নাকাটি নেই।
ষষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকীর আগেই দুজন মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত
নিয়ে ফেললো। অভিধান রোজ অফিস থেকে ফিরে ভাবে আজ বলেই দেবে। নির্ঝরাও ভাবে বলে দেয়া
উচিত, এভাবে আর কতদিন। একটি বছর হতে চললো, শুভকে তার ভাল লাগা মাত্রা ছাড়িয়েছে।
অফিসে বসে অভিধান মনস্থির করে আজ বাড়ি ফিরে নির্ঝারাকে বলে
দেবে রাত্রির কথা। আর রাত্রিকেও আজ জানিয়ে দেবে তার ফেইক আইডি থেকে বেরিয়ে আসল
পরিচয়।
-শুভ, তোমাকে কিছু
সত্য বলতে চাই।
-কি সত্য?
-বলবো, তার আগে বলো
তুমি আমায় ভুল বুঝবে না?
-না, বলো।
-কাল বলবো।
অফিস থেকে ফিরে দুজনে কফি নিয়ে বসলো। কেউ কাউকে কিছু বলতে
পারলো না।
সকালে তড়িঘড়ি করে দুজন বেরিয়ে গেলো। তাড়াহুড়ার মধ্যে অভিধান
নিয়ে বেরিয়ে গেলো নির্ঝরার মোবাইল। নির্ঝরা অভিধানের মোবাইল।
খানিক পরেই অভিধানের মোবাইল থেকে কল। অভিধান প্রতিবারের মতই
কল রিসিভ করলো।
-নি, ভুলে তোমার
ফোনটা নিয়ে চলে এসেছি। আমি ড্রাইভারকে দিয়ে এক্ষুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ওপারে নীরবতা পেরিয়ে ভেসে এলো কটি লাইন-
আমার শরীর জুড়ে
জেগে ওঠে সব অলংকার
কলঙ্ক আমার হাতে,
উজ্জ্বলতা তোমার, কেবল তোমার!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন