দুধচিঁড়ে
সাদাবাবু ইতিমধ্যেই একবার
বাইরে গিয়ে দেখে এসেছে। রসিকচাচা ঘাড় উঁচিয়ে কথা বলে যাচ্ছে তিনতলার সাথে।
অভ্যেসবশতই সাদাবাবু এরকম করে। দুধচিঁড়ের
বাটি টেবিলে রাখা।
ধোঁয়াওঠা থেকে ঠাণ্ডা হয়ে যায়
দুধ, আর চিঁড়ে চাল। গেট খুলে বারকয়েক দেখা হয়ে যায়। এতবছর আগের বাড়ি যে সময়ে ঘরের ভিতর দিয়ে
সিঁড়ির তেমন প্রচলন ছিল না। সে সময়ে ওনীল অমন জবরদস্ত বাড়ি বানিয়ে আশপাশের সক্কলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সাদাবাবু বাড়ির
ছোটছেলে। ব্যবসা সে সময়ে ভালই চলত। বড়ছেলে অমল সিংহভাগ দেখত । হঠাত দুটো কিডনিই খারাপের দিকে। অবশেষে ডায়ালিসিস, শেষের দিকে নিয়ে গেল সব। দোতলার বড়র
সংসার তালাবন্ধ হল। টাকার পরিমানও কমের দিকে। ছোটছেলে জন্মানোর পর বীণা রক্তশূন্য হয়ে গেছিল। একেবারে সাদা। তাই সে
সাদাবাবু।
তিনতলায় ওনীল আর বীণা।
ওখানেই দুধচিঁড়ের সংসার। রসিকচাচাই রোজ দুধ আর মাটি আনে। ছাদে মাটি জমে। সেখানে
চারাগাছ বৃক্ষ হবে। রসিকচাচা বলে ছাদ ভূমি হবে।
সাদাবাবু একতলায় থাকে।
মাশরুমের চাষ শুরু করল। কিছুদিন পর হেরে
গেল, তারপর হারিয়ে ফেলল কাজ। নিজেকেও হারাতে হারাতে নিজেকেও খুঁজে পায় না। ছাদে
মাটি জমতে জমতে আকাশ ছোঁবে, এমন ভাবে সাদাবাবু। বাটি পড়েই থাকে টেবিলে। সাদাবাবু মাটির নিচে মা বাবাকে খুঁজতে
থাকে। পায় না। খাটের ঊপর নিচেও পায় না। হন্যে হয়ে দোতলায় নামে দেখে তালাবন্ধ। আবার
গেটের কাছে গিয়ে দেখে রসিকচাচার পা দুটো মাটি থেকে উপরে। অর্থাৎ ভাসমান। ওভাবেই
হাওয়াতে দাঁড়ানোর মত করে ইঙ্গিতে মা
বাবাকে দুধচিঁড়ে খেয়ে নিতে বলছে। নিশ্চিন্তে গেট বন্ধ করে ঘরে ঢোকে। টেবিলে রাখা
বাটি উধাও দেখে সাদাবাবু দৌড়তে দৌড়তে তিনতলায় গিয়ে দেখে ভাড়াটের মিষ্টি সাজানো সংসার । রক্তিম আর
ঝিনুক।
ঝিনুক বলল, সাদাদা আসুন, কফি করছি। ছাদের বাগানে প্রচুর আগাছা জমেছে, রসিকচাচার ছেলে আতিফের ফোন নাম্বারটা পাচ্ছি না। একটু দেবেন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন