বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭

দেবযানী বসু

অ্যাকশন চাই


একটা নামকরা বৈদ্যুতিক গৃহস্থালির দ্রব্যাদি বিক্রির দোকান থেকে একটা মাল আসার কথা বাড়িতে। মাল মানে মাইক্রোআভেন, মানে বৈদ্যুতিক চুল্ল্‌ মানে যাতে করে অভিজাত খাদ্যদ্রব্য রন্ধন করে খাওয়া হয়, মানে মিসেস সাউয়ের জন্মদিনে তার স্বামী  উপহার হিসেবে নিবেদন করছেন। টিভিতে ফুডফুড, টার্বন তর্কা, কিচেন নাইটমেয়ার ইত্যাদি দেখে বায়না করেছেন কেনার তার স্বামী অবশেষে স্ত্রী তমার জন্মদিনে  দেবেন বলে অনলাইনে বুক করে দেন। বছর তিরিশের মিঃ সাউ কলেজ স্ট্রিটে মুখার্জি এন্ড ব্যানার্জিতে হিসেবরক্ষকের কাজ করেন। কাজের স্বার্থে বাড়িতেই কম্পিউটার কিনেছেন।


সে কারণে অবশ্য মিসেস সাউ বাড়িতে বসে থাকেননি। দুপুরবেলায় তাকে বাচ্চাকে  আনতে যেতে হয় স্কুল থেকে। চিন্তার কিছু নেই, শ্বশ্রুমাতা আছেন তো! এ বাড়িতে  এসে তমা শ্বশ্রুমাতাকে মেটামরফোসিস প্রক্রিয়ায় পাল্টে ফেলতে পেরেছেন। এই যেমন মাথায় চুলে রং করাতেই হবে, বাড়িতে নাইটি আর অন্তর্বাস পরতেই হবে। শুধু আছে পান খাবার প্রতি খুব দুর্বলতা। সাউ গিন্নির চশমায় সাম্প্রতিকতার ছোঁয়া। কর্তা ছিলেন খুব লোভী সুগার প্রেসার বায়ুশূলে ভুগে ভুগে চলে গেলেন। সাউগিন্নি মাছ ডিম খান। ছেলের বৌ এসব বোঝে পঞ্চান্ন পেরনো গিন্নি কোমর পর্যন্ত চুল শ্যাম্পু করে দুপুরে সাদার পর বেগনে ফুলছাপ নাইটি পরে শুয়েছিলেন। বেল বাজল, উনি উঠে দরজা খুললেন। বছর চল্লিশের অত্যন্ত ঝকঝকে একটি পুরুষ বলল, আসতে   পারি? আপনাদের অর্ডার দেওয়া আভেন নিয়ে এলাম কার্টনটা নিয়ে সে ঘরে ঢুকল আর সোফায় বসে নিচে রাখল মালটা।একগ্লাস জল হবেবলে উজ্জল চোখে এদিক ওদিক তাকাল। চুল ঠিক করল। দুবার থাই পকেট চাপড়াল। রুমালে মুখ মুছল। গিন্নিমা জল নিয়ে এসেছেন। লোকটা প্রশ্ন করল, একা? বাহ আপনার গায়ে খুব সুন্দর গন্ধ সাউগিন্নি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালেন। পুরুষটি তাকে হাত ধরে পাশে বসাল, বলল, আপনি খুব সুন্দর, ঠিক শান্তশ্রীভদ্রমহিলা হেসে বললেন, ‘আমার এককাল গে তিনকাল ঠেকেছে, এখন আর সৌন্দর্য! বৌমা নাতিকে স্কুল থেকে আনতে গেছে। জলটা খান!’ ‘তাই! আপনি ঠাকুমা! আপনাকে দেখে মনে হয় না বয়স  হয়েছে পানপরাগের মাতোয়ারা গন্ধ ছাড়ছে লোকটার মুখ থেকে। পকেট থেকে  প্যাকেট বার করে পানপরাগ দিতে চাইল। উনি নিলেন। পুরুষটি এবার তাকে প্রায়  জড়িয়ে ধরল আর কাগজকলম পেতে সই করিয়ে নিল সযত্নে। গিন্নি আবেশিত হলেন।আপনার ফোন নাম্বারটা দেবেন?সাউগিন্নি আঙুল তুলে চেঁচালেন, বেরিয়ে যানবাড়াবাড়ি করছেন
পুরুষটি ঝট করে উঠে দাঁড়াল। বিমোহিত দৃষ্টি হেনে বলল, ‘স্নিগ্ধা, আরেকদিন আসব। অ্যাকশন চাই। তুমি যা দিলে, ভুলব না তারপর কুর্নিশ করে সাপের মতো দ্রুত বেরিয়ে গেল।
স্নিগ্ধা গালে হাত দিয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল, আমরা জানি না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন