নিষিদ্ধ সময়ের
গল্প
(১)
আমি হাঁটছিলাম
নদীর কাছ ঘেঁষে। খুঁজছিলাম কিছু আত্মার
খাবার। নদী আমায় দিয়েছিল স্রোত
আর জল। আমি
হারালাম দুর্দান্ত প্রখর
স্রোতে। আমি জন্মেছিলাম চাঁদের
রাতে। আমার চারপাশে প্রচুর
ভাত মাছ ফল ফুল
গাছ পড়েছিল। তবু
আমি জীবনভর খুঁজেছিলাম কিছু
খাবার বেঁচে থাকবার জন্য। চাঁদ আমাকে দিয়েছিল
কিছু জোৎস্না। আমি
জোৎস্নায় ভেসে গেছিলাম। রূপালীমোহনে খুলে দিয়েছিলাম হৃদয়ের
দ্বার। ঠিক তখনই দেখি
জোৎস্নায় কিছু নিকষ অন্ধকার। জোৎস্নায় অমাবস্যা লুকায়
সেদিনই জানা হলো... নীল
আসমান ভেবেছিলাম। যেখানে
চাঁদ তারা সূর্য কিছুই
লুকানো দায়। আমি
ভুলে গেছিলাম এই বিশাল
ব্যপ্ত ছায়াপথে পৃথিবীর আসমান
খুব সামান্য একটি জায়গা। এখানে ব্ল্যাকহোল রয়েছে
নিঃশেষ করবার জন্য...
(২)
কোনো
ফুলে বসেনা। কোনো
মধুই আহরণে যায় না আর সে প্রজাপতি
মন। গত
ক’দিনে
মরে গেছে একশ নদী
আমার। কে রাখে তার
খবর?
গভীরে অতল খাদের কিনারে
রাত্রির ডাল ভেঙে ডেকে
ওঠে পিউ কাঁহা পাখি...! আদতে
সে এক দারুণ মরণ। জীবনে জেগে থাকে শুধু
এক কালসাপ। ফণাতুলে
তাড়িয়ে বেড়ায়। ধেয়ে
নিয়ে চলে যায় অনায়াসে
মরণের পার। তাকে কী বল তুমি
প্রিয়তম? হায়! যে
দেয় ক্রমাগত বিষ। মরণের আমন্ত্রণ পাঠায় যে
সাজিয়ে আড়ম্বরে শুভ বিবাহের
মতোন! সিঁদূরে
স্বেদে সাজিয়ে তোলে বিজয়ার
প্রায়। অকাতরে প্রেমে অপ্রেমে
যে জেগে থাকে অথচ আর
কাকে ভালোবেসে নিয়ত
হারায় অযাচিত এক দারুণ
স্বপনে বিষাদে...
(৩)
সে দিয়েছে
আমাকে এক দারুণ
অমরতা। দু’হাতে
তুলে নিয়েছি সুরাপাত্র। ক্রমাগতই যদি পান করে
চলি তার স্বাদ ব্লুলেভেলে!
রাত্রি নিশীথে রক্তাক্ত ক্লেদে
ভরে তুলি যদি যাপনের
লাস্য! ক্ষতি কী এমন! আমি তো এক
দারুণ মরীচিকা পেয়েছি
করতলে। কখনো তাকে
রাঙিয়ে যদি তুলি মেহেদীর
আলাপনে! কখনো যদি
মেখে দিই তাকে হৃদয়ের
সবটুকু পূরবী! কখনো যদি
রঙিন করে তুলি করতল
ছিঁড়ে সব রক্তরেখা! কখনো যদি
খুলে দিই সবগুলো
নদীর বাঁধ... যদি
প্লাবন আনি! ঝড় সাইক্লোন যদি ভাসায় সব! যদি
ভাসে নদী ও জল
ভেসে যায় রাত্রি ও নারী... পুরুষ কি হবে খুব
ব্যথাতুর! আমি তো শুধুই অধরা
তখন। পশ্চিম আকাশে হেলে
পড়েছি কেবল...
(৪)
আমি বলি
এসো। সে বলে দেখি
আসা যায় কি না! আমি বলি চলো। সে বলে পেছনে ঘর
গেরস্থালী রয়েছে তো!
আমি বলি চলো ভেসে
যাই। সে বলে বকবে
যে! আজ পূর্ণিমা। আমি বলি এসো জোৎস্নায়
স্নান করি। মেখে
নিই গায়ে কিছু
চাঁদের আলো। সে
বলে আমার ঘরে চাঁদ
আর তারা উঠেছে, আছে এক
নীল আকাশও। আমি
বলি চলো ভাসি স্বপনে। সে বলে আমার দারুণ
এক বাস্তব আশেপাশে। আমি বলি এসো পান
করি মদিরা, সে
বলে এ আমার কাঙ্ক্ষিত নয় তো! আমি বলি আমারও তো ঘর আছে। ঘরে নীলাকাশ অবারিত। আমারও তো চাঁদ আছে। তারা নির্লোভ। আমার
আকাশের তারারা তোমার গলায়
মালা হবে, এসো তো! আমার ছুটির অবসর
তুমি ছাড়া নিরানন্দ ভাবালুতা। এভাবেই আমি বাঁধি স্বপনের
ঘর। আর অবশেষে বলি
চলো ভালোবাসি, সে বলে
হৃদয়ে জুড়ে আরও অন্য
কেউ রয়েছে তো...
(৫)
সেই ছিল
শেষ দেখা। ঠোঁটৈ
রক্তাক্ত আগুনের ছোপে
সে ছিপ ফেলে মাছ
ধরেছিল নদীর জলে। সে অধরা নদীর কথা
ক’জনই
বা জানে! ক’জন
জানে সে রক্তাক্ত মাছের
উল্ল্মফন! ক’জন জানে
জীবন ভিখ মাগার সে
আর্তনাদ! সে করুণ নিনাদ প্রতি মুহূর্তে
বদলেছে তার রূপ। প্রতীক্ষার দারুণ প্রহর শেষে
ভীষণ গরল হুতাশ করাল আঘাত ছিপে আটকে
যাওয়া প্রাণ কতবার কতরূপেই
না করেছে নিনাদ! কখনো বজ্রের মতো
দারুণ শংখনাদ তার। কখনো দারুণ গুরুগম্ভীর মেঘে
অধরা বিষাদ। কখনো
একাকী রাত্রির করুণ দ্রাক্ষা
গিলে গিলে মৃত। শরীরে জখমে যতবারই নতুন
করে তুলেছে ততবারই জ্বালিয়ে
দিয়েছে তার নতুন আত্মার
ঘর। কে জেনেছে! কেউ কি কাছে
থাকে! কেউ কি
কোনোদিন দেওয়ালে
পেতেছিল কান! কেউ
কি বুকের পাঁজরে লিখেছিল
নাম! করুণ কাতর
নিনাদে কেউ কি কোনোদিন
ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিল ফুলের
সুবাস! ...সব সুর
চুরি হয়ে গেলে পর, বিধবার
নতুন বিবাহের সুর বেজে
ওঠে। সেখানে এক পুরনো লাশের লাস্য নিয়ে
বেঁচে থাকে অযাচিত অন্য এক প্রাণ। আমি শুনে চলেছি তার
করুণ আহ্বান...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন