অপ্রাপ্তি
আজ রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল অজিত, আর বাড়ি ফিরবে না। মায়া যখন বাড়ি ছেড়েছিল রাগারাগি করে, তখন সেও পাড়ার চায়ের দোকানে এসে মুখ
গুঁজে বসেছিল। মায়া বলেছিল, এরকম
স্বামী থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। লটারির টিকিট কাটা নিয়ে এর
আগেও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কম ঝামেলা হয়নি। অজিত এভাবে কত
টাকা যে নষ্ট
করেছে, তার
ঠিক নেই। বিয়ের পর প্রথম
প্রথম মায়া কিছু বলেনি।
কিন্তু আজ বিগত পাঁচ
বছরে তাদের একঘেয়ে জীবনে সেও হাঁফিয়ে
উঠেছে। অজিত রেশন দোকানে কাজ করে মাস গেলে
যা পায়, তার
অনেকটাই চলে যায় তার ভাগ্য
পরীক্ষায়। কীভাবে যে সংসার
চালাচ্ছে মায়া, সে
শুধু মায়াই জানে। গতকাল
রাত থেকে ঝগড়া চলছিল দফায় দফায়। কাঁদতে
কাঁদতে মায়া অজিতকে বলেছিল,
তুমি আমায় ভালোবাসো না,
আমার কোনো কথাই শোনো না, ওই ক’টা
টাকায় সংসার যে কী
কষ্টে চালাচ্ছি তা কোনোদিন বুঝলে না! আমার পোড়া কপাল! অজিত বলেছিল, এই কথা তুমি বলতে পারলে যে
আমি তোমায় ভালোবাসি না!
আমি না হয় প্রায় প্রতিদিন দু’তিনটে লটারির টিকিট কাটি, কিন্তু তপন রাজুদের মতো ঘন্টায় ঘন্টায় তো সিগারেট খাই না!
অজিতের এসব আর পাঁচটা দিনের মতো স্বাভাবিক ঘটনা বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু সকাল হতেই তার এই ভুল ভাঙল। দুজনের মধ্যে আর কথা হয় নি। মায়াকে ব্যাগ প্যাক করতে দেখে সেও ঘর ছেড়েছিল। চায়ের দোকানের রতন তাকে এরকম গুম হয়ে বসে থাকতে আগে কখনো
দেখেনি। বলল, কী
হল রে অজিত! কী
ভাবছিস? এই
নে তোর চা। আজ নিউজপেপার দেখেছিস? নে দেখ! অন্যদিন হলে অজিত নিজেই নিউজপেপার হাতিয়ে নিয়ে, অন্তত দ্বিতীয় পাতাটা চেয়ে নিয়ে পকেটে রাখা লটারির টিকিটগুলো্র
নম্বর মেলাতো। আজ যেন কিসের অনীহা তাকে পেয়ে বসেছে। মায়াকে সে যে খুব ভালোবাসে,
এই কথাটা যেন ভেতর থেকে তাকে নাড়া দিতে থাকে। নম্বরগুলোর উপর চোখ বোলাতে বোলাতে আজ তার মায়ার প্রতি প্রেম কেমন যেন গাঢ়
হয়ে ওঠে। কিন্তু বাড়িতে
গিয়েই বা
কী করবে? মায়াহীন বাড়িটা তার কাছে অসহ্য বলে মনে হয়। এইসব
ভাবতে ভাবতে অজিতের চোখটা
হঠাৎ একটা নম্বরে এসে আটকে গেল। কী দেখছে সে, নিজেই যেন বুঝতে পারছে
না। চোখ দুটো ঝাপসা
হয়ে আসছে। রতন কাছে আসতেই সে লটারির টিকিট দুটো তার হাতে দেয়। রতন মাঝে মধ্যে এর ওর নম্বর মিলিয়ে দেয়। টিকিটের নম্বরগুলো মেলাতে মেলাতে হঠাৎ
থমকে যায় রতনও। সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠে
অজিতের দিকে তাকিয়ে। হ্যাঁ, সত্যিই তো মিলে গেছে! কোটি
টাকার কাগজের দিকে তাকিয়ে
অজিত শুধু মায়াকেই দেখতে পায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন