মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ময়ূরিকা মুখোপাধ্যায়

পাসওয়ার্ড

উত্তর কলকাতার আটপৌরে মাখানো নোনা দেওয়াল, একনাগাড়ে স্মৃতি পরিমাপক দায়িত্বশীল বিছানা, জানালামুখো নির্ভীক টেবিল, আর তার উপর বাবু হয়ে বসে ঝিমোতে থাকা পয়ত্রিশ হাজারী ল্যাপটপ বিদেশে চলে যাওয়ার আগে মা-কে দেওয়া গিফট্ তবে উদ্দেশ্য যে পুরোপুরি সফল নয়, তার নিশ্চিত প্রত্যক্ষদর্শী,  কাল্পনিক ধূলোয় আবৃত সামনের ওয়েবক্যাম

ক্ষুধার্ত বস্তুটিকে, সাহারা জুগিয়ে... চোখে পড়ল, পাঠানো শেষ ই-মেলটা
...তখন একটা কনফারেন্স ছিল বলে... ফোনটা রেখে দিতে হলো ইদানিং এত প্রেসার চলছে যে, কী বলব! But, still i enjoy it. তোমায় আমি কতবার বলেছি বল তো মা, স্কাইপের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য! আরে চিন্টুকে বললেই  খুলে দেবে কিন্তু না... তুমি তো খুলবে না, তোমার নাকি ওই ভাবে আমার সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা লাগে! সত্যি...! মাঝে মাঝে তোমার কথা শুনলে সত্যি হাসি পায় এখনো এই -মেল, কীরকম একটা চিঠি চিঠি ব্যাপার

যাকগে, শোনো না যেটা বলছিলাম, এবারের পুজোয় মনে হচ্ছে না আসা হবে! আসলে কাজের যা প্রেসার, তারপর এখানকার বেঙ্গলী কমিউনিটিতে এবার পঁচিশ বছর তাই ওরাও খুব জোর করছে এখানে পুজো কাটানোর জন্য তুমি জানো, ওরা তোমাকে কত ভালোবাসে, রেসপেক্ট করে! আমি ওদের তোমার কথা বলেছি বাবা চলে যাওয়ার পর কীভাবে তুমি...
কী যে আছে কলকাতায়! আর যদি তোমার এন জিও কথা বল, তুমি জানো এখানেও কত ভ্যালিড রিসন্ নিয়ে কাজ হয়!
ওই এঁদোগলি ছাড়ো...
আমি তো খানে সেটেল্ড মা, এবার তো এখানে একবার এসো...
আচ্ছা, এবার আমি চলি, পরে কথা হবে।


বাবুদা!
সূক্ষ্মকোণে ঘাড়টা বেঁকে যায় দরজার দিকে
ওহহ... মেলটা খুলেছে? কাকিমা পাসওয়ার্ডটা ভুলে গেছিল, আমায় বলছিল কাল,
আমি বললাম আজ সকালে এসে...
সে তো আর হলো না...
বাবুদা, আমার মনে হয় এবারে বেরোনো উচিত এমনিতেই রাস্তাঘাটের যা অবস্হা, তার ওপর সপ্তমী...
আর ডেথ সার্টিফিকেটের ব্যাপারটাও একবার দেখে নিওবার্নিং ঘাটেও তো লাগবে।
হুমম...
আচ্ছা, মা তার মানে মেলটা দেখেনি!
না, আমাকে বলেছিল জানো তো... না মানে...
পুজোর জন্য ক্লাবে একটু ব্যস্ত ছিলাম যে... আর...
গাড়িটা এসে গেছে বললি না...
হ্যাঁ, এবার মনে হয়...

হুমম... ল, দেরি এমনিতেও হয়ে গেছে...  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন