মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মৌসুমী মন্ডল

মধ্যাহ্নের চড়া আলো অবশেষে 

ছুঁয়ে গেল তার নাকফুলের পোখরাজ পাথর। 
এই নদীর নামটি মনেই করতে পারছে না ষোড়শীর মন।
ঝুমকো জবার মতো লাল কাচের সিঁদুর
দিনের শেষপ্রান্তে আজ পৌঁছে দিয়েছে তাকে। 
কাজললতার চোখে অশ্রু রস বিস্ফারিত। 
গায়ের শাড়ি নেশায় ঝিমঝিম্,
কারা যেন ওর সোনার কনকচাঁপা কাঁটার খোঁপা খুলে দিয়েছে। 
তার একঢাল চুল থেকে বিন্দু বিন্দু হয়ে ঝরছে রাতের জ্যোৎস্না তখনো। 
তার মেঘবরণ চুলের মুঠি সতীনের ছেলের হাতে। 
রোদ্দুরে ঝলসে যাচ্ছে তার ঘাসফুল গায়ের রঙ। 
গতকাল রাতে তাকে জ্যান্ত দেখেছিল ফ্যাকাশে চাঁদের জ্যোৎস্না। 
সবাই ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে 
তার গা থেকে অলংকারের খনিজ বিষাদ।
আতর আর ঘিয়ের গন্ধে মাতোয়ারা ঢাকের আওয়াজে আবর্তিত
শিকারী কুলীন ব্রাহ্মণের দল।
নব্বই বছরের মৃত কুলীন পুরুষের ষোড়শী বউ
আজ হবে সতী, সুগন্ধি চিতার আগুনে।
বিধাতা লিখেছিলেন কাঠের দগ্ধ অলংকরণের কথা
আতসকাচের বুকে।  
পাতার মেয়ে পুড়ে হবি ছাই, 
আর কোনো নতুন কথা! সময়ের আগুন রঙা ট্রেন
যেন চলেছে সব অন্ধকার টানেল পেরিয়ে
বিস্মৃতির স্টেশনে। আমরা কেউ দেখিনি দৃশ্য,
দেখেছিল ঘুমন্ত দেশের লোকেরা।


মানুষ হতে চাই

একদিন
চলে যাব 
শ্যাম্পেন রঙ অরণ্য ছেড়ে।
ওগো অসেচনক সবুজ পাতার শিশুগাছ, 
অর্জুনের শাখা প্রশাখা 
একদিন চলে যাবই। 
অচেনা রাতবাহী ট্রেনের শ্বেতপদ্ম সুবাসিত কামরায়
শুয়ে শুয়ে শালবনের বাতাসী রাস্তা ধরে চলে যাব  
উরসে লেবু পাতার সৌরভ নিয়ে  
প্রিয়তমের স্পর্শ স্বেদ মুছতে মুছতে
নিশিকাঞ্চনের ডাকে অবাধে চলে যাব পৃথিবীর শেষতম জংশনে
চিতাকুণ্ডে শুয়ে শেষবারের মতো
কুয়াশায় ধুয়ে নেব আমার স্থির
হয়ে যাওয়া চোখের স্বপ্ন মূর্ছনাগুলোকে। 
দেখতে চাই সোনার ভোরে 
আবার সস্নেহে জেগে উঠেছে 
পাখিদের সংসার।
গাছের কুমারী শরীরে ফুটে আছে গন্ধ হারানো রাতের দোলনচাঁপা।    
জুঁই ফুলের মতো সবার ঘরে শ্বেতপাত্রে উপচে পড়ছে ঈদের সেমাই।  
সূর্যাস্তের মতো ডুবে যাক সব সন্ত্রাস
সব দুঃখ দুপুর।
হৃদপিণ্ড ছিন্ন করা সব ভালোবাসার 
সোহাগী রৌদ্র ভ্রমর সাজানো থাকবে 
আমার শবদেহে। 
আর কিছু চাই না 
শুধু হাজার বছর পরেও জন্মান্তরে
সমুদ্রকে বলতে চাই সরলরেখায় চলো।
পরজন্মে যেন মানুষের ছদ্মবেশে
আর না আসি পৃথিবীতে।


ইস্কুল পোশাক

বড় ভয়ংকর বেলা!
নীরাজীতা, তুমি আর মেঘের সাথে
রামধনু খেলা কোরো না।
আকাশ দেখো না ওমনি করে
পল্লবে নীল লেগে যাবে।
ইস্কুলে যারা তোমায়
খারাপ দিদিমনির তকমা দিয়েছে
দিয়েছে পোশাকের ফতোয়া,
তারাও কি শরীরী নয়!
তোমায় কেউ শরীরবাদী বলে
ধমক দিলে, তুমি হয়ো না অশরীরি।
কাছে এসো নীরাজীতা,
সরাও শাড়ির অবগুন্ঠন।
তোমার ব্রহ্মনিষ্ঠ শরীরে
ফুটে আছে ওড়ফুল।
কর্ণফুলী নদীটির মতো জ্যোৎস্নাকে 
জ্বালাও অন্তরে।
আমি শরীরবিদ্যায় পারদর্শী
মানবাধিকার আইন।
শরীরের ঔর্বাগ্নি ছুঁতে কার না ইচ্ছে হয়?  
একাকী নির্জনে শরীর এক দ্বীপ।
এই দ্বীপের নির্জনতাকে 
বৃষ্টি ঢেকে দেবেই।
এসো পরিধেয়,
তোমাকে সমাজ সংস্কারের মতো 
অর্ধেন্দু রঙে রাঙাই।
নীরাজীতা, তুমি আর্কিমিডিসের সূত্রে টেনে দাও আদিগন্ত আর্জবা।
মন্দিরের গর্ভগৃহের পবিত্র কক্ষের আর্কাইভে রেখে দাও অহংকারী ধূসর ধূপগন্ধ। 
চলো কুয়াশা পান করি
খোলা অন্তরীক্ষের নিচে দাঁড়িয়ে,
পারিজাতের পোশাক পরে



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন