“Simple living & high thinking”এর অনুসারী বাঙা্লী বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ, চিন্তা-চেতনায়-মননে কখন যে নিজের খোলনলচে বদলে ফেলে, নব্য পুঁজিবাদের ফসল কনজিউমারিজম বা ভোগবাদিতার আলখাল্লা
গায়ে চড়িয়েছে, তা ঠাহর করা খুব মুশকিল। খুব
অজান্তেই আমরা নিজেদের লাইফষ্টাইল বা জীবনধারা পালটে ওয়েষ্টার্নাইজড ছাঁচে
বিশ্বনাগরিক হয়ে উঠছি। এর সুবিধে অবশ্য কম নয়, তবে আমাদের বাঙা্লী ঐতিহ্যের ধারা কিছুটা ব্যাহত হয় বটে তাতে।
শুধু বাংলার ধুলো-মাটিতে নয়, পুরো বিশ্বের নানা প্রত্যন্ত কোণে সে স্থানের সামাজিক সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর থাবা বসিয়েছে
আজ পাশ্চাত্য ধাঁচের নব্য আধুনিকতাবাদ। পৃ্থিবীর নানা প্রান্তের নানা
জাতি-বর্ণ-গোত্রের মধ্যে যে স্বজাত্যাভিমান, যে রীতিনীতি-পোশাক-পরিচ্ছদ-আহার্য-বাসস্থানের নানামুখী বৈচিত্রে ধরণী সেজে
উঠেছিল বহুবর্ণের ক্যানভাসে, তা যেন ধীর
পায়ে আমেরিকান শ্রমজীবি শ্রেণীর ইউনিসেক্স রংচটা জিন্স-টি শার্ট-টিন্টেড রোদচশমায়
আড়াল করে নিচ্ছে নিজের অরিজিনাল রূপের মাধুরীটুকু।
বৈশ্বিক এই পরিবর্তনের ধারায় বদলে গেছে বাঙা্লীর
খাদ্যাভ্যাসের মেন্যু, শিক্ষা
ব্যবস্থার ধরন, পোশাক এবং পেশা নির্বাচন।
এসেছে বিনোদন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলোতে পরিবর্তন, বাসস্থানের ধরন পরিবর্তন, সাজসজ্জার আবরণ-আভরণে বদল, অনুষ্ঠান
আয়োজনে ভিন্নতা। বরং এরকম বেশ কিছু বিষয়ে লেগেছে নতুন রীতিনীতির হাওয়া বদলের
হাওয়া। একে একে এইসব ‘হাওয়া কি ঝোঁকা’র ঝোঁকগুলো আলোচনার ইচ্ছে রইলো এই লেখায়।
ভেতো বাঙালীর বার্গার বাগাড়ম্বর
প্রবাদ আছে, ‘আপকা রুচি মে খানা, পরকা রুচি মে পেহননা’। কিন্তু আধুনিক বাঙা্লী যেন খানা-পিনা-পেহননা সকল কিছুতেই নিজস্বতা হারিয়ে মিশে যাচ্ছে বৈশ্বিক ট্রেন্ডের গড্ডালিকা প্রবাহে। মোটামুটি দুই যুগ আগেও মধ্যবিত্ত বাঙা্লীর প্রাতঃরাশে নৈমিত্তিক আয়োজন ছিল হাতে গড়া রুটি/ ভাত-তরকারী, সবজি-লুচি-চায়ের ঘরোয়া আবহ। এগুলোকে একেবারে হঠিয়ে দিতে না পারলেও , পাউরুটি-মাখন-জ্যাম-জেলী-অমলেট-কফি কিন্তু দাপটেই স্থান নিয়েছে বাঙা্ল ঘরের সকালের নাশতার টেবিলে। চলে পাস্তা-চাওমিন-চীজও। তবে অনেক বাঙা্লী বাড়িতেই সকালের ব্যস্ততায় কিছুটা সময় সাশ্রয়ী বিধায়, তাড়াহুড়ায় বাধ্য হয়ে বেছে নেওয়া হচ্ছে ইংলিশ স্টাইল ব্রেকফাস্ট।
প্রবাদ আছে, ‘আপকা রুচি মে খানা, পরকা রুচি মে পেহননা’। কিন্তু আধুনিক বাঙা্লী যেন খানা-পিনা-পেহননা সকল কিছুতেই নিজস্বতা হারিয়ে মিশে যাচ্ছে বৈশ্বিক ট্রেন্ডের গড্ডালিকা প্রবাহে। মোটামুটি দুই যুগ আগেও মধ্যবিত্ত বাঙা্লীর প্রাতঃরাশে নৈমিত্তিক আয়োজন ছিল হাতে গড়া রুটি/ ভাত-তরকারী, সবজি-লুচি-চায়ের ঘরোয়া আবহ। এগুলোকে একেবারে হঠিয়ে দিতে না পারলেও , পাউরুটি-মাখন-জ্যাম-জেলী-অমলেট-কফি কিন্তু দাপটেই স্থান নিয়েছে বাঙা্ল ঘরের সকালের নাশতার টেবিলে। চলে পাস্তা-চাওমিন-চীজও। তবে অনেক বাঙা্লী বাড়িতেই সকালের ব্যস্ততায় কিছুটা সময় সাশ্রয়ী বিধায়, তাড়াহুড়ায় বাধ্য হয়ে বেছে নেওয়া হচ্ছে ইংলিশ স্টাইল ব্রেকফাস্ট।
আবার পক্ষান্তরে ভেতো বাঙালী যতোই আধুনিক হোক না কেন, এখনো মধ্যাহ্নভোজনে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত-ডাল-মাছ-ভর্তা-শাক-সবজি-তরকারী
না হলে, মনের গোপন
কোনে বেদনার বাঁশীর সুর বেজে ওঠে তার
নিজের অজান্তেই। নিতান্তই দায়ে
পড়লে বা অতি ডায়েট সচেতন হলে্, তবেই বাঙা্লীর
দুপুরের খাবার টেবিল চনমন করে বা্র্গার-বান-স্যান্ডউইচ-টুনা-স্যালাড-ফ্রেঞ্চ
ফ্রাই-টমেটো চিলিসসের ভিনদেশী এ্যারোমায়, মন ব্যাজার করে চোখের কোণায় আলগা হাসি ঝুলিয়ে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ (পড়ুন, খেয়ে
বাঁচি) ভঙ্গীতে।
আবার বিয়ে-জন্মদিন-শ্রাদ্ধ-আকীকা-অন্নপ্রাশনের মতো উৎসবে আয়োজনে মেইন কোর্স হিসাবে লুচি-তরকারী, পোলাও-কোর্মা-কাবাব-রেজালা-জর্দা-ফিরণী এখনো বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। তার পাশাপাশি চিলি-চাওমিন, ফ্রায়েড রাইস, চিকেন উইংস, স্টাফড ক্যাপসিকাম, মাশরুম-বিনস যে একেবারে মেন্যুতে মূর্তিমান হয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে না, তা নয় কিন্তু। বাবুর্চির নয়া গামছার সাথে শেফের সাদা টুপির ছায়াও উঁকি দিচ্ছে আড়াল থেকে উৎসব আয়োজনে।
আবার বিয়ে-জন্মদিন-শ্রাদ্ধ-আকীকা-অন্নপ্রাশনের মতো উৎসবে আয়োজনে মেইন কোর্স হিসাবে লুচি-তরকারী, পোলাও-কোর্মা-কাবাব-রেজালা-জর্দা-ফিরণী এখনো বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। তার পাশাপাশি চিলি-চাওমিন, ফ্রায়েড রাইস, চিকেন উইংস, স্টাফড ক্যাপসিকাম, মাশরুম-বিনস যে একেবারে মেন্যুতে মূর্তিমান হয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে না, তা নয় কিন্তু। বাবুর্চির নয়া গামছার সাথে শেফের সাদা টুপির ছায়াও উঁকি দিচ্ছে আড়াল থেকে উৎসব আয়োজনে।
সে তুলনায় বাজারজাত কোমল পানীয়ের প্রতি গড়পরতা বাঙা্লী একটু
বেশীই দূর্বল। তাই ঠান্ডা কোক-পেপসি-ফান্টা-স্প্রাইট ভালোই চলে বাঙা্লীর তৃষ্ণার
কালে। অবশ্য কাঠফাটা কোনো গ্রীষ্মের দুপুরে , বাঙা্ল প্রাণ চক্ষুর তৃষা মিটিয়ে টুকটুকে লাল একফালি রসালো তরমুজে যে দেহ-মনের
তৃষ্ণা মেটাবে , কাঠখোট্টা ব্যবসায়ীর দেওয়া কৃ্ত্রিম রঙের দাপটে তার কি আর যো আছে? আবার একখানি কচি ডাবের যে বাজারদর, তাতে মাথায় বাজ না পড়লেও, পকেটের স্বাস্থ্যের পক্ষে এতো হানিকর হয় যে, উদরাময় বা ডায়োরিয়া আত্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত এখন আর তা তৃষ্ণার পানীয় হিসাবে
উদরস্থ করতে চায় না বাঙা্লী। নিজের ঘরের কোণায় যদি দু’একখানা নারকেল গাছ ফ্রি-ফ্রি হাওয়ার সাথে সাথে, ডাব-নারকেল খাওয়ার সোর্স হিসাবে ফোর্সফুল থাকে, তবে কিছুটা রক্ষে। তবুও এত কিছু সত্ত্বেও গরমে শসা-বাঙ্গী-ক্ষীরা-কদবেল-কচি
তালশাঁসের জয়জয়কার কিন্তু কেড়ে নিতে পারেনি, কোনো জায়গীরদার বহুজাতিক কোম্পানীর পানীয়ের ঝাঁজ, আজো বাঙা্লীর ঝাঁঝালো গরমের দুপুরে।
নিজের কথা বলি, মনে আছে ৭/৮ বছরের বালিকা তখন আমি। বাৎসরিক পরীক্ষা শেষে ফি বছরের মতোন মফস্ব্ল থেকে রাজধানী ঢাকায় ডাক্তার চাচার বাড়ি বেড়াতে এলে, বয়সে বড় এক কাজিন ট্রিট হিসাবে খুব আদর আপ্যায়ন করে, আমাদের দাদুর ধানমন্ডী বাসার মোড়ের দোকান থেকে, স্ন্যাক্সের সাথে সবুজ কাচের বোতলে স্ট্র দিয়ে পান যোগ্য পেপসীর বোতল হাতে তুলে দিলে, তাতে কোমল পানীয়ের বোতলে জীবনের প্রথম চুমুক দিতেই, কেমন জীবানুনাশক ডেটল কিংবা স্যাভলনের একটা ঘ্রাণ আর স্বাদ লেগেছিল ইন্দ্রিয়ে। এরপর আর কোনোদিনই আমার মন কাড়তে পারেনি বাজারজাত কোনো কোমল পানীয়ই। তবে বহু বাঙা্লীই এখন গুরুপাক ভোজনের পর মনে করেন, একটু ঠান্ডা কোক/স্প্রাইট হলে মন্দ হতো না। অথচ এগুলোর ক্ষতিকারক দিক নিয়েও প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে, কমবেশী বাঙা্লী তা জানেনও। তবু উৎসবে আয়োজনে মানেন কম তা, সফট ড্রিংক্সের ব্যবস্থা রাখার ক্ষেত্রে। প্রতিযোগীতার ইঁদুর দৌড়ে পেছনে পড়ে যায় বাঙা্লীর বহুদিনের মোঘল ঐতিহ্যের ধারক পানীয় বোরহানী-লাস্যির লালস্যমাখা হাতছানি। অথচ সেলুকাস, এই স্বদেশীয় পানীয়গুলোই গুরুপাক ভোজনের পর গুরুতর স্বস্তিদায়ক। তাই একেবারেই যে হারিয়ে গেছে তারা, তা কিন্তু নয়।
নিজের কথা বলি, মনে আছে ৭/৮ বছরের বালিকা তখন আমি। বাৎসরিক পরীক্ষা শেষে ফি বছরের মতোন মফস্ব্ল থেকে রাজধানী ঢাকায় ডাক্তার চাচার বাড়ি বেড়াতে এলে, বয়সে বড় এক কাজিন ট্রিট হিসাবে খুব আদর আপ্যায়ন করে, আমাদের দাদুর ধানমন্ডী বাসার মোড়ের দোকান থেকে, স্ন্যাক্সের সাথে সবুজ কাচের বোতলে স্ট্র দিয়ে পান যোগ্য পেপসীর বোতল হাতে তুলে দিলে, তাতে কোমল পানীয়ের বোতলে জীবনের প্রথম চুমুক দিতেই, কেমন জীবানুনাশক ডেটল কিংবা স্যাভলনের একটা ঘ্রাণ আর স্বাদ লেগেছিল ইন্দ্রিয়ে। এরপর আর কোনোদিনই আমার মন কাড়তে পারেনি বাজারজাত কোনো কোমল পানীয়ই। তবে বহু বাঙা্লীই এখন গুরুপাক ভোজনের পর মনে করেন, একটু ঠান্ডা কোক/স্প্রাইট হলে মন্দ হতো না। অথচ এগুলোর ক্ষতিকারক দিক নিয়েও প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে, কমবেশী বাঙা্লী তা জানেনও। তবু উৎসবে আয়োজনে মানেন কম তা, সফট ড্রিংক্সের ব্যবস্থা রাখার ক্ষেত্রে। প্রতিযোগীতার ইঁদুর দৌড়ে পেছনে পড়ে যায় বাঙা্লীর বহুদিনের মোঘল ঐতিহ্যের ধারক পানীয় বোরহানী-লাস্যির লালস্যমাখা হাতছানি। অথচ সেলুকাস, এই স্বদেশীয় পানীয়গুলোই গুরুপাক ভোজনের পর গুরুতর স্বস্তিদায়ক। তাই একেবারেই যে হারিয়ে গেছে তারা, তা কিন্তু নয়।
বাঙালী কুলবালারা আজকাল তাম্বুলরাগে অধরোষ্ঠ রাঙানোর বদলে, ব্র্যান্ডেড
ঠোঁটপালিশেই রাগমোচন করতে পছন্দ করেন সচরাচর। বয়োজেষ্ঠ্যদের দখলে এখন জলপান শেষের
খয়ের-জর্দা-পানের বাটা। সেইসাথে নানা পানবাহারী মশলার সম্ভারে রীতি মতোন পুরো
ভারতবর্ষের নানা রীতির, নানা
না্ম-ধামের সাজানো পান বিক্রিও হয় অভিজাত পানের শপে বা রাস্তার মোড়ের
চমনবাহারী-বাবা জর্দার দোকানগুলোতে।
বিড়ি-সিগারেট চলে কিশোর থেকে বৃ্দ্ধ সব বয়সেই। তবে ফস করে ম্যাচ ঠুকে, ঠোঁটের কোণে
এককাঠি জ্বলন্ত সিগারেট ঝুলিয়ে কথা বলার চেষ্টার শো ম্যানলি
স্পোর্টসশিপ, কখন যেন
জ্বলজ্যান্তভাবে বদলে গেছে জিমফেরত সিক্স প্যাক অ্যাবসের মাচো ম্যানশিপে… তবুও পেশীবহুল উত্তমকুমার বা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভাবতেই কৌতুকবোধ হয় ( হাঃ হাঃ )। যস্মিন দেশ , যদাচার ( মানে যে যুগে যা মানায় আর কি )।
হুক্কা-তামাক-গুড়গুড়ির নল হয়ে গেছে ব্যাকডেটেড। আফিম-নস্যি-খইনীও তাই। বরং চলে
মধ্যপ্রাচ্য স্টাইলের শিসা অতি আধুনিক তরুণ-তরুণীর আড্ডার ধোঁয়াশায়। পাইপ-হাভানা
চুরুট সে তুলনায় স্থান পায়নি তত এখনো বাঙা্লীর ধুম্রপানে। হয়তো চে-গুয়েভারার সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্যের মতোই পুঁজিবাদী
জমানায় সেটি অচল বলে।
এরপর অবশ্যম্ভাবী ভাবে আসে মিষ্টান্নের কথা। একথা বললে ভুল বলা হবে না যে, বাঙা্লী ময়রাগন যতো প্রকার মিষ্টান্ন তৈরীর রেসিপি জ্ঞান নিয়ে মিঠাই রাজ্যের ময়দান কাঁপিয়ে বেড়ান, তা তাবৎ বিশ্ব ঘুরে পৃথিবীর আর কোনো প্রান্তেই মিলবে না। তাই যেমন গড়ে উঠেছে নানা চেইন সুইটস শপের পাশাপাশি স্বতন্ত্র মিষ্টান্ন ভান্ডার, তেমনি যে কোনো সুখবরে মিষ্টিমুখ করার ঐতিহ্য বাঙা্লী ধরে রেখেছে আজন্মকাল। তবে এক্ষেত্রে পূর্ব আর পশ্চিম বাংলার মধ্যে একটু অমিল আছে। বাংলাদেশের বাঙা্ল কেজির হিসাব ছাড়া মিষ্টান্ন কেনার কথা চিন্তাই করতে পারেন না, আর পশ্চিম বাংলার বাঙা্লীরা পিস হিসাবে মিষ্টি কিনে থাকেন সচরাচর। দুই পক্ষই অবাক হয় অপর বাংলার অধিবাসীদের এহেন আচরণে। পূর্ব বাংলার বাঙা্লী মনে করেন, ‘ঘটিদের হিসাবি বুদ্ধি সামান্য মিষ্টি কেনার ক্ষেত্রেও গেল না কোনো জন্মে’; আর পশ্চিম বাংলার বাঙা্লী মনে মনে ভাবেন, ‘ঢাকাইয়া বাঙা্ল রসনাবিলাস ছাড়া কিচ্ছুটি বুঝে না, তাই বাক্সভরে মিষ্টি কেনে... অথবা, গেঁয়ো বাঙা্ল মিষ্টি খাওয়ার ব্যাপারে সংযমটুকুও শিখলো না আজো... এক্ষেত্রে কেহ ‘নাহি হারে, নাহি জেতে, সমানে সমান’, মানে উভয়পক্ষই নিজ নিজ যুক্তিতে অটল অবিচল। ‘মুসলমানের হাড়ি, হিঁদুর বাড়ি আর ইংরেজেরে গাড়ি’ ...এই তিনের প্রতি দুর্বলতা বরাবরই অবিকল।
এরপর অবশ্যম্ভাবী ভাবে আসে মিষ্টান্নের কথা। একথা বললে ভুল বলা হবে না যে, বাঙা্লী ময়রাগন যতো প্রকার মিষ্টান্ন তৈরীর রেসিপি জ্ঞান নিয়ে মিঠাই রাজ্যের ময়দান কাঁপিয়ে বেড়ান, তা তাবৎ বিশ্ব ঘুরে পৃথিবীর আর কোনো প্রান্তেই মিলবে না। তাই যেমন গড়ে উঠেছে নানা চেইন সুইটস শপের পাশাপাশি স্বতন্ত্র মিষ্টান্ন ভান্ডার, তেমনি যে কোনো সুখবরে মিষ্টিমুখ করার ঐতিহ্য বাঙা্লী ধরে রেখেছে আজন্মকাল। তবে এক্ষেত্রে পূর্ব আর পশ্চিম বাংলার মধ্যে একটু অমিল আছে। বাংলাদেশের বাঙা্ল কেজির হিসাব ছাড়া মিষ্টান্ন কেনার কথা চিন্তাই করতে পারেন না, আর পশ্চিম বাংলার বাঙা্লীরা পিস হিসাবে মিষ্টি কিনে থাকেন সচরাচর। দুই পক্ষই অবাক হয় অপর বাংলার অধিবাসীদের এহেন আচরণে। পূর্ব বাংলার বাঙা্লী মনে করেন, ‘ঘটিদের হিসাবি বুদ্ধি সামান্য মিষ্টি কেনার ক্ষেত্রেও গেল না কোনো জন্মে’; আর পশ্চিম বাংলার বাঙা্লী মনে মনে ভাবেন, ‘ঢাকাইয়া বাঙা্ল রসনাবিলাস ছাড়া কিচ্ছুটি বুঝে না, তাই বাক্সভরে মিষ্টি কেনে... অথবা, গেঁয়ো বাঙা্ল মিষ্টি খাওয়ার ব্যাপারে সংযমটুকুও শিখলো না আজো... এক্ষেত্রে কেহ ‘নাহি হারে, নাহি জেতে, সমানে সমান’, মানে উভয়পক্ষই নিজ নিজ যুক্তিতে অটল অবিচল। ‘মুসলমানের হাড়ি, হিঁদুর বাড়ি আর ইংরেজেরে গাড়ি’ ...এই তিনের প্রতি দুর্বলতা বরাবরই অবিকল।
পৌষে্র পিঠাপুলি-পরমান্ন বাঙা্ল গিন্নীরা এখনো হেসেখেলে
হেঁসেলেই বানিয়ে থাকেন। তবে পিঠার দোকান ও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু। যা একযুগ আগেও বাণিজ্যিক
ভিত্তিতে কেনা বেচা অকল্পনীয় ছিল। রাস্তার মোড়ে
মোড়ে ভাপা, পোয়া আর চিতই পিঠা তো শেষ
হয়ে যায় চিলের শিকার ধরার মতো চকিতে।
দেশগ্রামের আলো-ছায়ার শ্যামলিমায় সবুজ মাঠে মাঠে চড়ে বেড়ানো, খুঁদকুড়ো খাওয়া সুঘ্রাণ ওঠা দেশী মোরগ-মুরগীর সালুন, এখন আর পাতে তেমন পড়ে না বাঙা্লীর ক্ষুধার অন্নে। ব্রয়লার-লেয়ারের ডুমো-ডুমো মাংসের তালে আর সস্তাদরে, তালগোল পাকিয়ে যায় দেশী মুরগী ক্রেতা-বিক্রেতার ব্রক্ষ্মতালু। অগ্নিতে ঘৃতাহুতি ঢেলে লাভের মুখ দ্যাখে কিছু পোলট্রি ফিড আর গ্রোথ হরমোন দোকানী ।জ্যান্ত-মরা দু’রকমেরই মুরগী বাহারী নামে রেঁধে পরিবেশন করে, নাম কামায় হোটেল-রেঁস্তোরা আর ফ্রায়েড চিকেনের দোকানগুলো। গরু-খাসী-পাঁঠার মতো রেডমিট খেয়ে কোলেস্টেরল বাড়ানোর সাথে, পকেট কাটা দামে মাসকাবারী আর মাথা গুলানোর মতো বুকের পাটা, এখন আর নেই অনেক বাপ কা ব্যাটারই। হুক্কা হুয়া-ঘেউ ঘেউ বা শ্যাম বর্ণের মহিষাদির মিশ্রণও থাকে এসবে শুনি, এই মহিষাসুর মর্দনের দেশে। ঘোর কলিকালে নেই কোনো দেবীমাতা ভেজাল নিরো্ধী ত্রিশূল-কৃপাণ-খড়্গ হাতে। তাই ভেজালে-জঙ্গলে একাকার বাংলা আজ জলে-স্থলে।
এছাড়াও মধুমাস গ্রীষ্মের ফল-ফলাদি আর বছরভর জন্মানো শাক-সবজি তরতাজা রাখতে ফরমালিনের ব্যবহার এখন আর ফরমাল নয় কিছু, বরং খুবই নরমাল। হয়তো দেখা যাবে, এত পচন নিরোধক রাসায়নিক খেয়ে খেয়ে, রস-কষ হারিয়ে মমিফিকেশন হয়ে, ভবিষ্যতের গর্ভে মামদোভূত রূপে মর্মবেদনা নিয়ে ঘুরে বেড়ালো, বাঙা্লীর মা-মা স্বাদের রসনাবিলাসের আকুতিটুকু।… তবে দুই বাংলা সহ এশিয়ার গুটি কয়েক অঞ্চলে ঋতুবৈচিত্রের সাথে সাথে যে পরিমান শাক-সবজি-ফল ফলাদির সমাহার দেখা যায়, তা পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে বিরল বলে, এযাত্রা এই আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেতে পারে বাঙালী।
আর নদীনালা শুকিয়ে, পলি জমে ভরাট-দখল কিংবা বর্জ্য দূষিত হলে্ও, কোথা থেকে যেন নদীমাতৃক বাঙলার মানুষের খাবারের থালায়, আজো উঁকি দেয় ছোট-বড় নানা পদের মাছ , শুধু প্রকৃ্তিদেবীর বদান্যতায়। তাই ও নিয়ে কথা বলে রচনার পরিধি বাড়িয়ে লাভ নেই। শুধু একথা বললেই চলে, জ্ঞানবুদ্ধি বিকাশের কাল থেকে বয়সোচিত বিরল কেশ আর বিশাল উদরস্ফীতির মালিক হওয়া অবধি, রসনা বিলাসে কখনোই অরুচি ঘটে না বাঙা্লী খাদ্যরসিক বাবু-বিবিয়ানার। আজো বাঙালী মেনে চলে, ‘যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ, ঋণং কৃতং ঘৃতং পিবেৎ’এর বেদবাক্যটুকু।
দেশগ্রামের আলো-ছায়ার শ্যামলিমায় সবুজ মাঠে মাঠে চড়ে বেড়ানো, খুঁদকুড়ো খাওয়া সুঘ্রাণ ওঠা দেশী মোরগ-মুরগীর সালুন, এখন আর পাতে তেমন পড়ে না বাঙা্লীর ক্ষুধার অন্নে। ব্রয়লার-লেয়ারের ডুমো-ডুমো মাংসের তালে আর সস্তাদরে, তালগোল পাকিয়ে যায় দেশী মুরগী ক্রেতা-বিক্রেতার ব্রক্ষ্মতালু। অগ্নিতে ঘৃতাহুতি ঢেলে লাভের মুখ দ্যাখে কিছু পোলট্রি ফিড আর গ্রোথ হরমোন দোকানী ।জ্যান্ত-মরা দু’রকমেরই মুরগী বাহারী নামে রেঁধে পরিবেশন করে, নাম কামায় হোটেল-রেঁস্তোরা আর ফ্রায়েড চিকেনের দোকানগুলো। গরু-খাসী-পাঁঠার মতো রেডমিট খেয়ে কোলেস্টেরল বাড়ানোর সাথে, পকেট কাটা দামে মাসকাবারী আর মাথা গুলানোর মতো বুকের পাটা, এখন আর নেই অনেক বাপ কা ব্যাটারই। হুক্কা হুয়া-ঘেউ ঘেউ বা শ্যাম বর্ণের মহিষাদির মিশ্রণও থাকে এসবে শুনি, এই মহিষাসুর মর্দনের দেশে। ঘোর কলিকালে নেই কোনো দেবীমাতা ভেজাল নিরো্ধী ত্রিশূল-কৃপাণ-খড়্গ হাতে। তাই ভেজালে-জঙ্গলে একাকার বাংলা আজ জলে-স্থলে।
এছাড়াও মধুমাস গ্রীষ্মের ফল-ফলাদি আর বছরভর জন্মানো শাক-সবজি তরতাজা রাখতে ফরমালিনের ব্যবহার এখন আর ফরমাল নয় কিছু, বরং খুবই নরমাল। হয়তো দেখা যাবে, এত পচন নিরোধক রাসায়নিক খেয়ে খেয়ে, রস-কষ হারিয়ে মমিফিকেশন হয়ে, ভবিষ্যতের গর্ভে মামদোভূত রূপে মর্মবেদনা নিয়ে ঘুরে বেড়ালো, বাঙা্লীর মা-মা স্বাদের রসনাবিলাসের আকুতিটুকু।… তবে দুই বাংলা সহ এশিয়ার গুটি কয়েক অঞ্চলে ঋতুবৈচিত্রের সাথে সাথে যে পরিমান শাক-সবজি-ফল ফলাদির সমাহার দেখা যায়, তা পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে বিরল বলে, এযাত্রা এই আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেতে পারে বাঙালী।
আর নদীনালা শুকিয়ে, পলি জমে ভরাট-দখল কিংবা বর্জ্য দূষিত হলে্ও, কোথা থেকে যেন নদীমাতৃক বাঙলার মানুষের খাবারের থালায়, আজো উঁকি দেয় ছোট-বড় নানা পদের মাছ , শুধু প্রকৃ্তিদেবীর বদান্যতায়। তাই ও নিয়ে কথা বলে রচনার পরিধি বাড়িয়ে লাভ নেই। শুধু একথা বললেই চলে, জ্ঞানবুদ্ধি বিকাশের কাল থেকে বয়সোচিত বিরল কেশ আর বিশাল উদরস্ফীতির মালিক হওয়া অবধি, রসনা বিলাসে কখনোই অরুচি ঘটে না বাঙা্লী খাদ্যরসিক বাবু-বিবিয়ানার। আজো বাঙালী মেনে চলে, ‘যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ, ঋণং কৃতং ঘৃতং পিবেৎ’এর বেদবাক্যটুকু।
(ক্রমশঃ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন