শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

বর্ণালী মুখোপাধ্যায়

নদী বিষয়ক দু-এক

এক একটি অন্ত্য ক্ষত  দুপুরে
পাশ ফিরলেই হয়তো নিভাঁজ 
জানালা, তার খড়খড়িতে এক একটি
ঈষদুষ্ণ  ভালোবাসা  বা আদরের ওম,
নদী তোর সঙ্গে অমোঘ ছাড়াছাড়ির
পরেও দেখি নতজানু আলো এসে
আমাকে স্নান করায়। 
শরীরে সেইসব সুগন্ধী  ছড়িয়ে দেয়
মৃগনাভি থেকে নির্গত সেই সব অন্ধকার
 
শ্বাস বুজে এলে আর একবার কাতর হই আমি
ডান হাত স্পর্শ করে নম্র মেঘ,
বাঁহাতে  স্পর্ধিত  ব্যথাগুলো
জমে ওঠে, জানো?
অন্যথায় তোমাকে প্রতিটি 
পরতে লুকিয়ে রাখতেই মরিয়া কলকাতা!
চেনা পথগুলি অসহ্য নিয়নের উত্তাপে
ক্রমাগত গলে গেলে আমি ভাবি উৎসবের দিনে
এভাবেই ছেড়ে যেতে হয় শহর আর সেতুগুলি!
মনে হয় ভেকধারীর ফেলে দেওয়া  সুর   যেন খাতগুলি,
যেন নিরীহ বালু ঢিপি, চোরাগোপ্তা  নয়। 
যেন অনায়াসে ট্রামরাস্তা পেরোলেই
আর একবার
সেই ভেজা করতলে  চুম্বন এঁকে দিতে পারি!
এক একটি সিগন্যাল আমাকে
কখনো সবুজ সঙ্কেত  পাঠায় না, নদী
আমি তবু অপেক্ষা  করি। নাছোড়  জ্যামলাগা
পৃথিবীটা কাচের বাইরে থেকে দাঁত
দেখায়, প্রত্যাশী  হিজড়ের হাততালি
ঠিকরে যায় হট্টোগোলে, মইয়ূরের পালক
বেচতে আসেন জনার্দন স্বয়ং, 
আমার নাগাল না পেয়ে শোক
নেমে আসে রাত্রি হয়ে। 
শুধু যে আমার
সবটুকু ছুঁয়ে থাকে, এ শহরে
তাকে আর কখনো দেখি না!


আজ বাইশে

চার নং প্ল্যাটফর্মে 
আমার ফরিস্তা উড়ে এসে বসে। 
সেই যেখানে অগোছালো আলো এসে
অন্ধকারের হাত ধরে, আমার ফরিস্তা
তার মায়ার চরণদুটি মেলে,
ওখানে ঘুমোয়। 
খুব রাতে  ঘৃণাদেরও ভালোবাসা পেলে
একা একা ওভারব্রিজে উঠে দেখো
হিজড়ে মালতী আর ফরিস্তা আমার-
জড়াজড়ি পড়ে থাকে, সুলভ শৌচালয়ের
ঠিক পিছন দিকে। 
আমি টেনে তুলি তাকে
ঘুম আর নেশার আবেশ থেকে। 
বলি - আজ বাইশে শ্রাবণ ফরিস্তা
ফরিয়াদ শোন - অমল ধবল পাল
ভিজে চুপসে গেল আজ, সে ফিক করে
হেসে বলে - আমাদের সাদা ডানাগুলি
যেভাবে সংশোধনাগারে ধৌত হয়?
যেভাবে মালতীর লুঙ্গি সিক্ত হলো
আর আমার ভাবের ঘর?
ফরিস্তারা হাসাহাসি করে ভেজা
চুম্বন এঁকে দিল মধুর আবেশে।  
আমি একা এই স্বর্গীয় ছবি বুকে
ধরে রাখি। 
তারপর
মালতীর ডাক পড়ে আর 
শেষ ট্রেন এসে গেলে
আমার ফরিস্তারা হুটোপুটি 
করে ঝাঁটা হাতে। 
আমি ডানা ক’টি ভাঁজ করে রাখি
অঝোর শ্রাবণে। 
পাঁচটাকা জুটে গেলেই আকাশ ছোঁবে
ফরিস্তা, ডেনড্রাইট সুবাতাস বয়ে আনে-
মন্দ মধুর হাওয়া। 
দেখি নাই আমি দেখি নাই-




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন