ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা
বারান্দায় সুন্দর হাওয়া। মন্দিরা বলল, এখানেই চা-টা নিয়ে আসি। বিকেলের চা। মিষ্টি হাওয়া। মনের মধ্যে উতল অনুভব। এরকম পরিবেশ পেলে আমি
নিজেকে হারিয়ে ফেলি। মানে এই আমিকে ফেলে অনেক
আগেকার প্রায় ভুলে যাওয়া আমিকে খুঁজতে চলে যাই।
মন্দিরা কিছু যেন বলল। ঠিক মন দিয়ে
শুনিনি বোধহয়। এবার শুনলাম। বলছে, ‘আজ আর গাছগুলোয় জল না দিলেও চলে যাবে’। সরকারি আবাসন ছেড়ে আসার সময় অত বড় বাগানটা তুলে আনতে পারিনি। এনেছিলাম মাত্র ক’টা গাছের চারা। সেগুলোই
আমাদের এখনকার সবুজ।
মন্দিরা চা খেতে খেতেই উঠে গেছে। বোধহয় দেখে নিচ্ছে
সত্যিই কী মাটিতে রস রয়েছে! নিঃঝুম বারান্দায় হঠাৎই সোরগোল। ‘দেখ দেখ, এখানে পাখির দুটো ডিম!’ উঠে গিয়ে দেখলাম। পাতাবাহারের
ঝাঁকালো গাছটার ভেতর কয়েকটা কাঠিমুঠির একটা বাসা আর খুবই ছোট্ট ছোট্ট
দুটো ডিম। ‘কোন্ পাখির
আবার এ জায়গাটা পছন্দ হলো কে জানে!’ আমি বলে উঠি। মন্দিরা বোধহয় আপন মনেই বলল এবার, ‘ঐ জন্যেই একটা মুনিয়া পাখিকে এই গাছটার ওপর ওড়াউড়ি করতে দেখেছিলাম!’
সেদিন রাতে খুব জলঝড় হলো। খোলা জানালাগুলোর কপাট পড়তে লাগল
দুমদাম। ঘুম থেকে উঠে বন্ধ করা হলো সেসব। বারান্দার দিকের
কথা আমার মনে পড়েনি একবারও। সকালে উঠেই মন্দিরা
কিন্তু চলে গেল বারান্দায়। কিছু একটা
সন্দেহ নিয়েই কী! ফিরে এসে তড়িঘড়ি আমাকে নিয়ে গেল সেখানে।
রাতের জলদানবের
সঙ্গে লড়াই করে নিজের পৃথিবী দেখার সম্ভাবনাকে জিইয়ে রাখার মতো অত কঠিন শক্তি ঐ
দুটো ছোট্ট ডিমের ভেতর ছিল না!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন