শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

দেবযানী বসু

বেস্টলাকের বুড়ো আঙুল


ঋতুজার চাকরিতে ইস্তফা ও ডিউটি পর্ব শেষ। বেশ হাল্কা লাগছে নিজেকে। কাল থেকে আগামী মাস পর্যন্ত একটু হেসে খেলে নেবে। সামনের মাস থেকে বাড়ির কাছে এসপ্লানেডের একটা অফিসে যাবে। আগেরটা ছিল সল্টলেকে। আজ শনিবার অরিত্রর সঙ্গে দেখা হবে সাউথ সিটি মলে। সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু। মায়ের মাথা যন্ত্রণা করছিল, সেটা আরো বাড়ছে। ঋতুজা ওষুধ দিল। কপাল টিপে দিল। মা হঠাৎ বমি করল। ও ছুটে ছুটে সব পরিষ্কার করল। বৌদির মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে এলো
বাবার ফোন এলো মাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবে কিনা তাই নিয়ে আলোচনা হলো সিদ্ধান্ত হলো, দেখা যাক আরেকটু সময় অপেক্ষা করে। এই সময়ে আংকল এসে উপস্থিত। হ্যাঁ, আংকল বলেই ডাকে ঋতুজা। একটু পাগলা গোছের। কারো পর রাগ  করলে সেটা নিয়ে মেজাজ দেখাবে না, শুধু খাবারদাবার মাছ মিষ্টি এনে হাজির করবে। ঋতুজা আতঙ্কিত। কারণ ব্যাপারটা মজার হলেও পরে টাকা কম পড়ে যায়,  আর এর ওর কাছে টাকা ধার করে। উপরন্তু এত এত রান্নাবান্না করে খেয়ে অনেকের শরীর খারাপ হয়। ঋতুজার মা অম্বলের রুগি।

আংকলকে পর্যবেক্ষণ করে দেখল, হাতে বিগশপার-টপার কিছু নেই। বৌদি চা পরিবেশন করল। আংকল ঠিক ঋতুজার কাছে হাজার টাকা ধার চাইল। ঋতুজা প্রমাদ গুনল। মল-এ গেলে ওর খরচাপাতি আছে। অরিত্রর কাছে ঋণ বা সুবিধা কোনোটাই চায় না ও। সব খরচ কেন ছেলেরা করবে! বিশেষত সে যখন চাকরি করছে!  এদিকে টাকা দিলে ওকে আবার ব্যাংক বা এটিএমের উদ্দেশ্যে বেরোতে হবে। ঋতুজা সিদ্ধান্তে এলো, যা হোক টাকা দেওয়া যাক।

পিসি এই ছোটভাইয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। আংকল ছেলে পড়িয়ে রোজগার করে। মিষ্টুনি অর্থাৎ ঋতুজার ভাইঝি আংকলের কাছে চকোলেটের বায়না করলে বৌদিকে বলে ওকে নিয়ে বেরোলো

ঋতুজা মাকে দেখল, মা এখন একটু সুস্থ। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। সর্বনাশ! পৌনে বারোটা! ঝটপট স্নান সারল। মিষ্টুনি এখনো ফিরল না বলে বৌদি শোর মাচিয়ে দিয়েছে। আংকলের ফোন বেজেই যাচ্ছে। ঋতুজা প্রসাধন করে বাড়ি থেকে বেরোলো এত দেরি হয়ে যাচ্ছে! এটিএমের সামনে বিরাট লাইন। নাগাড়ে ফোন বেজেই যাচ্ছিল।
         
এতক্ষণে আংকল ফোন তুলল। এই বৃষ্টিতে বাচ্চাকে নিয়ে পার্কে চলে গেছে! খুব বকলো আংকলকে। টাকা তুলে বেরোলো মোবাইল বাজছে। নির্ঘাত অরিত্র! না, দাদা ফোন করেছে। নিশ্চয় বৌদি দাদাকে মিষ্টুনির কথা বলেছে। উহঃ বৌদিটা না! দাদার সঙ্গে কথা বলতে ঋতুজা ছুটল। এদিকে বৃষ্টি নামল। দুপা এগোলেই মেট্রো স্টেশন। এস্কালেটর বেয়ে সোজা উঠতে উঠতে বুঝতে পারল, ভুল দিকে উঠেছে। আসলে অফিসে যাবার সময়ের দমদমমুখী অভ্যেসটা রয়ে গেছে।


ছুটে নিচে নেমে উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে উঠল। ট্রেন ঢুকছে। অরিত্রর ফোন বার বার বেজে উঠে কেটে যাচ্ছে। হ্যালো হ্যালো... 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন