ডিপ স্পেস রেডিয়েশন
ভাবনার বিচ্ছুরণ
প্রার্থনাঘর এই আমার স্টুডিও। অন্তহীন কাজের জায়গা। স্পেস মেপে মেপে রং-এর জোয়ারে
ভেসে বেড়ানো। বারান্দায় অসংখ্য পাখির দানা খুঁটে খাওয়া দেখতে দেখতে সকালের শুভ
সূচনা। এই সময় কোনো ফোন-কল রিসিভ
করি না।
উড়ে চলে যাই কোনো ভিনদেশী
গ্রহে কিংবা চাঁদের মাটিতে। ১৯৬৯এর ২০ জুলাই। লুনার মডিউল পায়লট অ্যাস্ট্রনট এডউইন ই. অলড্রিন চাঁদের মাটিতে
হাঁটছিলেন। সেই বিখ্যাত ছবিটা মনের মণিকোঠায় অস্থির করে তোলে। জনহীন মরুভূমির হাহাকার গ্রাস করে তখন।
হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে আসছে। অ্যান্টি গ্রাভিটি, কসমিক রেডিয়েশন-এর
প্রভাব মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ছে। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির হিউম্যান সায়েন্সের
প্রফেসর মাইকেল ডেল্প তাঁর সঙ্গীসাথীদের নিয়ে গভীর রিসার্চে মগ্ন। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। যে ইঁদুরগুলো ছ’মাস কসমিক রেডিয়েশন মানে
ডিপ স্পেস রেডিয়েশন-এর আওতায় থাকছে, তাদের শরীরের ব্লাড
ভেসেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। এটাই তাদের হার্ট ডিজিজ-এর প্রধানতম কারণ এবং
এরজন্য হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
ডিপ স্পেস রেডিয়েশন ধেয়ে
আসছে, বেড়ে যাচ্ছে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ। তাহলে কি মহাশূন্যের গভীর দেশে মানুষের যাতায়াত এতটাই
রিস্কি!
হৃদয়ের খবর কে রাখে!
প্রতিটা দিন অসহ্য দিনচর্যায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ছাতিম গাছের সুগন্ধ ফুলে ভ্রমরের আনাগোনা। আবার ধূম্রপান
হার্ট ডিজিজ বাড়িয়ে দেয়। তুলির আঁচড়ে আজ কয়েকটা ক্ষিপ্ত বাইসন ছুটে আসছে। আকাশে চিল শকুনের ব্যস্ত পাখায় ঝরে পড়ছে
আগুন। কেন এরকম হয়! ক্রমে মানবিক শব্দের
মিছিল ভিড় করে আসে। বিশাল ক্যানভাস উজ্জ্বল লাল হলুদ সবুজ রঙে রঙিন হয়ে
উঠছে।
নির্বাসন যদি নিতে হয় তবে
প্রকৃতিরাজ্যে হারিয়ে যাব আমি। ‘শোনো, বাঘ-সংরক্ষণ প্রজেক্টে হাত দিলাম এবার।’ কোনো
উত্তর এলো না। মহান কবি পাবলো নেরুদা-র সেই উক্তিটি মনে পড়ল, ‘লাভ ইজ সো শর্ট, ফরগেটিং
ইজ সো লং’। ল্যাপটপ সচল করে দরকারি মেলগুলো পাঠাতে থাকলাম। তখন আকাশে কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ তার মায়াবী আলোয় জড়িয়ে নিচ্ছে নিঝুম
চরাচর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন