ঘামসূত্র
দুপুর রোদে রিক্সাশ্রমিক
পায়ে পায়ে প্যাডেল মেরে
সেলাই করে পিচঢালা পথ
সেলাই করা পথের ওপর ফোঁটা ফোঁটা ঘামের কষ্ট
ক্রোধ এবং কামের কষ্ট
ঘামসূত্রের এই ইতিহাস কেউ
লেখে না।
সুঁই শ্রমিকের মিছিলগুলো কী কষ্টের এক আওয়াজ তোলে
সকালবেলা
পায়ে পায়ে পা বাড়িয়ে
অন্ধকারের রাত ভেঙ্গে দেয়
মিছিলগুলো
সেলাইকলে উপুড় হয়ে স্বপ্ন
বোনে সেই মেয়েরা
ফোঁটা ফোঁটা ঘামের স্বপ্ন
প্রিয় কোনো নামের স্বপ্ন
ঘামসূত্রের এই ইতিহাস কেউ
পড়ে না।
আমিও তো ব্যস্ত পায়ে এপার-ওপার
সেলাই করে
জুড়ে দিলাম কতটা পথ
খরতাপের দুপুর রোদে
সেলাই করা পথের ওপর ছন্দ
খুঁজি
ফোঁটা ফোঁটা ঘামের ছন্দ
ডানের এবং বামের ছন্দ
পা
আজকে দুটো পা কিনেছি আমি
ওই দুটো পা ছিল না খুব দামী
পড়েই ছিল অবহেলায় খোলা
টেবিলটাতে
কী খুঁজতে কী খুঁজে পেলাম
ওরা আমার হাতে।
মোটাসোটা মাংসল পা রঙটি
খুবই কালো
কী বিচ্ছিরি নোখের ওপর পড়ল
এসে আলো
ওখানে তো কাদামাটি, দূরের ধূলিঝড়
পায়ের ওপর তখন দেখি খাড়া
একাব্বর।
একাত্তুরে এই দু’পায়েই
মাড়িয়ে কাদা-জল
এনেছিল এক মুঠো রোদ টকটকে
উজ্জ্বল
হঠাৎ আমায় হেঁচকা টানে নামিয়ে দিল পথে
কোথায় যেন লাগল আঘাত
অচেনা কোন ক্ষতে!
একাব্বরের পাশে আমি,
সমান্তরাল কাঁধ
নব্বুইয়ে তো গুঁড়িয়ে দিলাম
স্বৈরাচারের বাঁধ।
আজকে এমন ভিতু আমি, বুক
কাঁপে থরথর
ব্যক্তিগত সুখে আমার নিমগ্ন
অন্তর
আমার দেশের জমি চষে অন্য
দেশের ভূত
সুখে আমি আঙুল চুষি, আহা কী
অদ্ভুত!
হে পা’ও সুখি পা’ও পথে নেমে যাও
আরও যত পা’ও আছে সাথে করে নাও
দুই থেকে চার, আট, ষোল হয়ে
যাক
রাজপথ – আলপথ সরবে দাঁড়াক
আজ যে দুটো পা কিনেছি এই
দুটো পা কার?
এই দুটো পা বদলা নেবে সমস্ত
হত্যার
এই দুটো পা বাংলাদেশের জমিন
থেকে আসা
এই দুটো পা একাব্বর আর
মঞ্জুরালী চাষা
এই দুটো পা একাত্তরের, এই
দুটি পা লাল
এই দুটো পা গণতন্ত্রের
মিছিল কী উত্তাল
এই দুটো পা রুখে দেবে
কারসাজি-রামপাল
এই দুটো পা মাড়িয়ে দেবে
অশুভ জঞ্জাল।
মেলার মাঠে চলছে কানাঘুষা
মেয়েটি যেন আরক্তিম এক ঊষা
বলছে আমায়, পা দুটি কি দেব?
আমিও ভাবি, এই দুটি পা নেব?
এই দু’পায়ে কেমন যেন
জলোচ্ছাসের গান
এই দু’পা কি দেবে আমায়
পথেরই সন্ধান?
এই দু’পায়ের ওপর খাড়া গাজী
একাব্বর
এই দু’টি পা লোহার মতো
সুদৃঢ় প্রস্তর
এই দু’পায়ে গর্জে ওঠে অনন্য
সংঘাত
এই দু’পাই গুঁড়িয়ে দেবে
দূরের কালো হাত।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন