মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬

রিমি দে

আমি সে ও সখি


(১)       
   
মাধবী বিলালকে সেহেলি বলেই পরিচয় দেয় সকলের কাছে। অবশ্য তা বিলালের
অজান্তে। দুজনের পছন্দ অপছন্দ ভালোবাসা ভাবনা অনেকটা একই গোছের। বিলাল হুসেন। মাধবীর প্রায় ন্যাংটো বেলার বন্ধু। মাধবীর চোখের কোণে কালো আবছা। কপালে কোকড়ানো চুলের থোকা। বিলাল হলদে ফর্সা। মেদহীন শরীর। একই স্কুলে ছবি আঁকা ও গান শেখা। একসাথেই নার্সারি থেকে। পেন্সিল কাড়াকাড়ি থেকে টিফিন ভাগাভাগি। বড় হবার পরও লেগিন্স থেকে নানান অ্যাক্সেসারি কেনাকাটার সময় পুরো অ্যাসিস্ট করে বিলাল মাধবীকে। দুনিয়ার কাছে নাকি ওরা প্রমাণ করবে যে প্রেমিক প্রেমিকার ঊর্দ্ধে উঠে কতটা সফল বন্ধু হওয়া যায়! তবে বিলালের ছবি আঁকা আর মাধবীর গানে একটু বেশি ঝোঁক একে অপরের প্রতি গদগদ হাহা হিহি চলছেই দুজনের। লোকগুঞ্জনকে ওরা কোনোদিনই পরোয়া করেনি
                                      
বেশ কিছু চাকরির পরীক্ষা ওরা একসাথে দেয়। মাধবী দুটো চাকরি একসাথে পায়। কিন্তু বিলালের হলো না। মাধবী চাকরি পাবার পর ফতেমার সঙ্গে বিলালের ওঠাবসা  বেড়েছে। দুজনেই ছবি আঁকে। একটা যুগলবন্দি ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। মাধবী পরিশ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। হোয়াটসঅ্যাপের যোগাযোগও কমে আসে বিলালের সাথে। টেলিফোনে মাঝে মাঝে কথা হয়। তাতে কী! বিলাল বিশ্বাস করে, সত্যি বন্ধু হারায় না।

ছবি আঁকতে ভালোবাসলেও বিলাল চাকরি করতে চেয়েছিল। বিলাল আজকাল ফতেমার সঙ্গে ছবির জন্য বাইরে যায়। নিজের স্টুডিও কম ব্যবহার করে। স্টুডিওতে এলেই দেওয়াল জোড়া আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখে। হলদে ভাব মিইয়ে আসছে টের পায়। চোখের কোণে কেমন একটা কালো ছাপ অনুভব করে। হাসিমুখে বেদনার প্রলেপ মাথার চুলে কোঁকড়ানো ভাব।

(২)    
                       
পরদিন রবিবার। ছুটির দিন। বিকেলে নজরুল সদন। প্রদর্শনী ফতেমার একটি প্রথম একক। মাধবীও যাবে ফতেমা নিজে নতুন সুইফট ড্রাইভ করে আসবে। মাধবীকে প্রথমে, পরে বিলালকে তুলবে। এমনই কথা হয়ে আছে।

যেমন কথা তেমন কাজ। মাধবীর পর বিলাল। গাড়ি দাঁড়ায় বিলালের বাড়ির দরজার সামনে। ঝিরঝির বৃষ্টি। বিলালের দরজা খোলে। সিঁড়ি বেয়ে হাত দেখাতে দেখাতে একদম মাধবীর মতো বিলাল নেমে আসে। বিলাল হুসেন। চিত্রকর। গায়ে ওর   মেরুন পোশাক। চোখের কোণে কালো ছাপকপালের এক থোকা কোঁকড়ানো চুল।


মাসখানেকের মধ্যেই গায়ে মেদ বসেছে। মাধবীর মতো বিলালকে দেখে দুজনেই গাড়ি  থেকে বেরিয়ে এগিয়ে আসে। ছাইরঙা গাড়িটি বিলালের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ঝমঝম বৃষ্টি তিনজনকেই ভিজিয়ে দেয়।   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন