টাইম এবং স্পেস
রহস্যময় ধ্বনি
শোনো যাচ্ছে। বইয়ের পাতাগুলি সব হলুদ হয়ে যাচ্ছে। একটা পুরনো গন্ধ কত যে স্মৃতি তাড়িত,
বোঝানো যাবে না। আমাদের জীবনযাত্রাকে ‘টাইম’ এবং ‘স্পেস’
নানান রঙে রাঙিয়ে দিয়ে যায়। কিছু কিছু বইয়ের পৃষ্ঠায় ‘গিল্টি ফিলিং’ আষ্টেপৃষ্টে
জড়িয়ে থাকে। একটা পৃষ্ঠা থেকে আরেকটা পৃষ্ঠা টপকে চলে
যাই আর ভাবি, ‘এমন যদি না হয়ে, ঐরকমটা হতো!’
রোমান্টিক একটা মানুষ, যে তার প্রিয় মানুষীর জন্য রাশি রাশি বই নেট থেকে
ডাউনলোড করে দেয়। সিনেমার রোমান্টিক গজলের অডিও পাঠায় হোয়াটসঅ্যাপে
শোনার জন্য। সেই প্রাণখোলা মানুষটি নাম ধরি ‘ওয়াই’ (Y) তার প্রিয় মানুষীটির নাম
‘এক্স’(X)। ওয়াই একজন আধুনিক চেতনাসম্পন্ন লেখক। রোমান্টিক কবি। সে খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভাবতে
ভালোবাসে। ওয়াই বলে চলে, ‘জানো এক্স, মাই সুইট হার্ট, একমাত্র প্রেমই
সুন্দর। জীবনের
সুন্দরতম ঘটনা হলো একটি নিটোল খাঁটি প্রেম নিবেদন এবং তার সংরক্ষণ।’
গোলাপবাগান জেগে উঠছে সুগন্ধ আর রঙে। ‘বিখ্যাত কবি কাইফি আজমির সেই উক্তিটি মনে আছে,
এক্স?’
এক্স বলল, ‘কোঈ এ ক্যায়সে বাতায়ে কি ওহ তানহা কিঁউ হ্যায়...’
লাল গোলাপি হলুদ
কমলা নানান রঙে মন মাতানো গোলাপ হাতে ওয়াই নতজানু, ‘যে গজলটা তুমি বললে সেটা মহেশ ভাটের
বহু চর্চিত ফিল্ম ‘অর্থ্’-এর।
ঘাসের গালিচায়
তখন শীতের দুপুরের মিষ্টি রোদ গলে গলে মিশে যাচ্ছে। সামনেই অশোক, চন্দন, শিমূল
এরকম নানান গাছ-গাছালি। টিয়া, হুপো, শালিখ, বুলবুল আবার নাম-না-জানা পরিযায়ী পাখিদের
মেলা।
‘মানব-হৃদয় কখনও
সেপারেশন চায় না। ঠিক কিনা?’
‘তাই তো মনে হয়।’
‘তোমার কি মনে
হয়, ভালোবাসা কখনও হারিয়েও যায়?’
‘আশায় আশায় দীপ
জ্বলে যায়।’ এক্স আরও একটু ঘনত্ব বাড়ায়।
‘ম্যায় আগর রুঠ
জায়েঙ্গে তো তুম মনা লোগি, হ্যায় না?’ ওয়াই বাংলা ছেড়ে হিন্দিতে মজা করছে।
‘প্যায়র মেঁ জলদি
ক্যায় হ্যায়!’
দিল্লির
মিলেনিয়াম পার্কে জোড়ায় জোড়ায় অসংখ্য ‘কাপল’ প্রকৃতির সান্নিধ্যে ধন্য হচ্ছে। অনেক শিশু, কিশোর, কিশোরী খেলা করছে। ধীরে ধীরে সূর্যের শেষ আলোটুকু
বিদায় নিল। চারদিকে তখন হ্যালোজেন আলোর চমক। কৃত্রিম ঝর্নার জল আরও একটু রঙিন
হয়ে উঠল।
ওয়াই ফুটপাতবাসী মানুষদের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠল, ‘এই শীতের রাতে ঠাণ্ডা হাওয়ায় ফুটপাতে ঘুম আসবে না।’ ওয়াই-এর চোখে জল।
‘রক্ত আর ঘাম কঠিন সত্য, বুঝলে!’
এক্স উদ্বিগ্ন হয়ে ওয়াই-এর হাত চেপে ধরল। ওরা পরস্পর আলিঙ্গনে কতক্ষণ, আরও কতক্ষণ
খোলা আকাশের নিচে কাটিয়ে দিল। এক সময় ওয়াই ধীরে ধীরে বলল, ‘উঠ্ মেরি জান, মেরে সাথ
চলনা হ্যায় তুঝে।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন