পীতবর্ণ এক বিকেলে
নিরপেক্ষ
থাকাকে তুমি যতই দুধভাত বল,
যে নিরপেক্ষ সেও কিন্তু মনে মনে কাউকে সমর্থনই করে। বিশ্বাস না হলে তাকাও আজকের খাবার ঘরের টেবিলে। সানডে।
বাড়ির সবাই এক টেবিলে
আজ। কিচেন থেকে লুচি
বেগুন ভাজার গন্ধ ভেসে আসছে।
বুবাই তার ছোট্ট
শরীরটা চেয়ারে ঠেকিয়ে উসখুশ করছে খাবারের জন্য। নীলম তার মোবাইলে। বাপি নিউজপেপার হাতে টেবিলেই হেডলাইন দেখছেন। মা আর বৌদি এবার সব খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিল। দাদাও এলো বলে। তুমি কি বসার ঘরেই বসবে নাকি টেবিলে যাবে ভেবে নাও। অবশ্য তুমি যাওয়া মানেই সাত নম্বর একটা এক্সট্রা চেয়ার
লাগে। ছ' নম্বর চেয়ারটা
মাস ছয়েক বুবাইয়ের দখলে। নিরপেক্ষ থাকাকে তুমি যদি দুধভাত বল, দুধভাতকে নিরপেক্ষ কেন নয়! বুবাই এ বাড়িতে এখন দুধভাত
কিন্তু বুবাই নিরপেক্ষ কি?
দাদা
চেয়ারে বসতে বসতে নীলমকে বলল, কী রে, আজকাল
খাবারও কি ওতেই মেলে না কি! নীলম বিরক্ত মুখে মোবাইল ফোন প্লেটের
পাশে রাখল। বৌদি চোখের ইশারায়
দাদাকে থামতে বলল। বাপি লুচি তুলে নিতে
নিতে বৌদিকে বললেন,
বুবাইকে খাবার দাও রিন্টি। ওর খিদে পেয়ে গেছে। মা বাপিকে এলোভেরা জুস এগিয়ে দিচ্ছে, দাদার দিকে মাংসের বাটি।
বৌদি বলে উঠল, রূপমকে ডাকব, মা? তুমি কান খাড়া
করলে। বাপি চোখ তুলে তাকালেন। দাদা বলল, মানে? ও বাড়িতে?
বৌদি বলল, রাতে ফিরেছে। বাপি বৌদিকে বললেন, রিন্টি তুমিও বসে যাও। বৌদি আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগে দাদা আর বাবা রূপমকে নিয়ে একসাথে 'না' বলে উঠল। মা আর নীলম চুপ। বুবাই ফস করে বলে উঠল, কাকুর চেয়ারটা আমি নিয়ে নিয়েছি। কাকুর আর বসার জায়গা নেই।
তুমি
হাসছ একটু,
কী ভাবছ? আমি ভাবছি অক্ষশক্তি, মিত্রশক্তি এই যে এক টেবিলে সহাবস্থান করছে এতে তুমি আমোদ পেয়েছ। সত্যি বলতে কী এ বাড়িতে প্রত্যেককে দেখলেই তোমার কেমন
হাসি পায়। কেমন মিথ্যে আভিজাত্যের
লড়াই। বুবাই ছাড়া প্রায়
প্রত্যেকেই বড় বড় পাশ দেওয়া এমনকি মা, মা বেচারাও এডভোকেট হিসেবে যথেষ্ট
নাম করা। কিন্তু বাপির সামনে
মা কেঁচো হয়ে থাকে আর রূপমের প্রসঙ্গ এলে কেমন বেচারি মুখ করে খাবার খুঁটে খায় বা কাজে
ব্যস্ত হয়ে পড়ে,
রূপমের হাসি পাবারই কথা। আর বুবাই সবার মধ্যে দুধভাত হলেও মোটেই নিরপেক্ষ নয়। সে অক্ষশক্তির। আর এই তিন নারীর তিনজনই মিত্রশক্তির কিন্তু এদের সামনে
যথেষ্ট নিরপেক্ষতা দেখায়। তবু এরা রূপমকে যে
সমর্থন করে তা বাপি আর দাদা দুজনেই বোঝে।
বোঝে রূপমও তবে এ
নিয়ে তার হেলদোল নেই। বসার ঘর ছেড়ে রূপম
তুমি এবার খাবার ঘরে এলে। ফ্রিজ খুললে। একটা স্ট্রবেরি মিল্কের পাউচ ফ্রিজে। বের করলে।
ফ্রিজ থেকেই ঠাণ্ডা
জলের বোতল খুলে গলায় জল ঢাললে ঢক ঢক।
খাবার ঘরে অখণ্ড
নীরবতা। নিরপেক্ষ দল খাওয়া
বন্ধ করে হাত গুটিয়ে বসে আছে।
বাপি আর দাদা খাবারে
আরো বেশি মনোযোগ দিয়েছে। আর বুবাই চেয়ারে
পা দোলাতে দোলাতে রূপমকে দেখে আবার বলার চেষ্টা করছে, অত ঠাণ্ডা জল ওভাবে খেতে নেই। মা ঠাম্মা খুব বকবে আর ছ' নম্বর চেয়ারের মালিকানা
বদল হয়েছে। কিন্তু ওর মায়ের চোখ রাঙানোতে থেমেও
যাচ্ছে। আর রূপম আগের মতোই
তোমার হাসি পাচ্ছে আবার। সেটা চেপে তুমি ওই
ঘর ছেড়ে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে শিস দিয়ে গেয়ে উঠছ, উই উইল গো ফরওয়ার্ড / এজ উই ইউজড টু গো উইদ ইউ...
বিকেলে
বেরিয়ে যাবার আগে রূপম,
মার সাথে একবার দেখা করবে ভাবে। পরক্ষণে সানডে মনে আসায় তা বাতিল করে ব্যাগ গুছাতে
শুরু করে। তেমন কিছু নেই। দুটো টিশার্ট, দুটো প্যান্ট আর আন্ডার গার্মেন্টস। তবে বই আছে প্রচুর। কিছু বই সে বেছে বেছে ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। মা নিজেই তার ঘরে আসে। দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে
সহসা কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে - রূপম, কোনো
অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াতে তোমায় আমি শেখাইনি। বাপি বা দাদা যা নিয়ে জিদ করছেন তা তোমার নীতির বাইরে
হলে কক্ষনো আপোষ কোরো না। তুমি যা করবে তাতে
আমার পূর্ণ সমর্থন রইল। মা নিরপেক্ষতার আড়ালে তাকে সমর্থন করে বুঝলেও এত স্পষ্ট কথা মা এর
আগে কখনো বলেনি। রূপমের তবু কেন হাসি
পায়। আজ তার পথ একেবারে
আলাদা হয়ে গেছে। এ এখন আর সমর্থিত
না অসমর্থিত তার মানে রাখে না।
মা, নীলম আর বাপিকে একবার চোখের দেখা দেখতেই সে এসেছিল। আর হয়ত... পর্দা সরিয়ে বৌদি আর নীলম আসে।
বৌদির হাতে একটা
পুলওভার। নীলম আগের মতোই চুপচাপ। দাদা গলা তুলে বৌদিকে ডাকছে, রিন্টি, রিন্টিইইইইই... রূপম শব্দ করে হেসে ফেলে। বেরুবার আগে মার কাছে দাঁড়িয়ে বলে, আসছি। বাপির ঘরের দিকে
ঘুরে তাকায়। বুবাইয়ের বলটা গড়িয়ে
এসে ওর পায়ের কাছে থামে।
বলটা
রূপম তুলে বুবাইয়ের দিকে থ্রো করে।
বুবাই লাফিয়ে ক্যাচ
ধরে। রূপম হাসতে হাসতে
গেটের বাইরে পা রাখে। ঠিক তখুনি এক আর্তনাদের
কালো বেড়াল রূপমের বুক খামচে ধরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন