পৃথিবী জুড়ে
সুবিধাবাদী রাজনীতির কোপ ; পণ্য
বাস্তবতায় খণ্ড থেকে ক্রমে খণ্ডাংশে সাধারণ মানুষ…
দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাচ্ছে না তো সমস্ত পৃথিবী? পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর
সঙ্গে বিরোধ দেখা দিয়েছে রাশিয়ার সিরিয়ায় বোমা হামলাকে কেন্দ্র করে। সিরিয়ায় রয়েছে
রাশিয়ার একমাত্র নৌঘাঁটি। মধ্যপ্রাচ্য ঘিরে থাকা সাগরেও ন্যাটো ও রাশিয়া নৌসেনা
মোতায়েন করেছে। রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয়
ইউনিয়নের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার নামে ইরাক, আফগানিস্তানের পর ইসলামিক
স্টেট সিরিয়ার বিরুদ্ধে সমরে নেমেছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে
পারে উন্নত দেশগুলো। এদের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল, আমেরিকা ও রাশিয়া। সিরিয়া-ইরানের
আরেক শত্রু ইসরাইল। ইরানকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েলের, সিরিয়াকে নিয়েও ইসরাইলিদের আক্রোশ কম নয়। ইহুদি-বাদী ইসরায়েলের
এই যুদ্ধংদেহী মনোভাবেই অত্যাচারিত ফিলিস্তিনেরা স্বাধীনতার পথচলা শুরু করেছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ অলিখিত ভাবেই ন্যাটোর সাথে জুটে
কোয়ালিশন গঠন করে যুদ্ধকামি একপক্ষ হয়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে যে কোনও ধরনের সামরিক জবাব
দেওয়ার জন্য রাশিয়া, চীন, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ সামরিক হামলার জবাব দিতে
সক্ষম আর কয়েকটি দেশ বিরোধী পক্ষে প্রস্তুত।
জঙ্গিবাদ দমনের নামে তৎপরতা; তুরস্ক, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান ইত্যাদি আরব দেশগুলোর মধ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি তৃতীয়
বিশ্বযুদ্ধের অশনি সংকেত। মধ্যপ্রাচ্যে আই-এস দমনের নামে
যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইসরাইল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চক্রান্ত ফাঁস করে দিতেই যুদ্ধে
রাশিয়ার আগমন। তুরস্ক, সৌদি আরব সেনা পাঠালে
রাশিয়াও চুপ করে বসে থাকবে না। তৃতীয়
বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজবে। চায়না যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জোট ন্যাটোর
নেংটামো দেখছে রাশিয়ার সঙ্গী হবে আমেরিকাকে রুখতে। ভারতের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক ছিল সহোদরের; ইসরায়েলের বুদ্ধিতে বুশ সাহেব চ্যাংচুং চায়নিজদের শায়েস্তা
করবে বলে ভারতের সাথে কোলাকুলি করেছিল। ইসরাইল চায় কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে। রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতকে দূরে সরিয়ে দিয়ে; আমেরিকার সহযোগিতায় সেই ভারতকে দিয়েই ইসরাইলদের আরেক শত্রু
চায়নার মুন্ডুচ্ছেদ করতে। এদিকে পাকিস্তানিরা চাইছে তাদের কার্গিলের ‘অধুরা মিশন কো পুরা করনে’। ভারত সীমান্তে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেগুলোতে সেনা ছাউনি বসাতে
শুরু করেছে লাল পতাকাধারি চিনারা। অন্যদিকে ভারতদ-মার্কিন সামরিক চুক্তিগুলোয়
জোড় দিচ্ছে মোদী সরকার। নেপাল এমন কি আমাদের নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ইম্ফলকে উসকানি দিয়ে দলে ভেড়াতে চাইছে চায়না। কাশ্মীর তো উত্তপ্ত আগুন হয়েই আছে। ভারত বিরোধী বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেহারা ভারত বাংলাদেশের
সামান্য ক্রিকেট-ম্যাচের গোলযোগই পরিষ্কার করে দেয়। চায়নাদের দাদাগিরি
রুখতে ভারত- মালশিয়া যৌথ নজরদারির ব্যবস্থা হচ্ছে ভারত মহাসাগরে।
এক সাংবাদিক আইনস্টাইনকে জিগ্যেস করেছিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেমন হবে। তার প্রতিউত্তরে আলবার্ট
আইনস্টাইন বলেছিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন্ অস্ত্র ব্যবহার করা হবে, আমি জানি না। তবে জানি, চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধে লড়াই হবে লাঠি আর পাথর দিয়ে। সহজেই অনুমেয়; আর একটা বিশ্বযুদ্ধ আমাদের কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাবে! বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন - অনিবার্য। ঘরে বাইরে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, সর্বহারা মানুষ
খণ্ডিত হতে হতে দ্বিধাবিভক্ত। মানব সভ্যতার বয়স যত বাড়বে মানুষে মানুষে ভেদনীতি
বাড়বে তত; বাড়বে দেশভাগ কাঁটাতার।
বিভাজিত অসহিষ্ণু মানুষ মুক্তি চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। শুক্রাণুর মতো একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াইয়ে।
জীব-সভ্যতার অলীক নিয়মে নিষিক্তকামী মানুষ আমরা আজন্ম হিংসুটে। আর ধনতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদ গণ-বিরোধী , মানবতা বিরোধী হিংসা ও বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই উন্মোচিত করে না।
৩৪ বছরের বাম-জামানার অবসান
ঘটিয়ে পরিবর্তনের ধ্বজাধারী তৃণমূল দুর্নীতিতে বামেদেরও ছাপিয়ে যাচ্ছে এই পাঁচ বছরে। আবার যে কংগ্রেস-কে নিয়ে পাঁচ বছর আগেও
বামফ্রন্ট ভাঙ্গা ক্যাসেট বাজাত ৭২-৭৭ সিদ্ধার্থশংকর রায় জরুরি অবস্থা; কংগ্রেস ফিরে এলে মেয়েরা রাস্তায় বেরুতে পারবে না। আজ গণতান্ত্রিক জোটের নাম নেওয়া ছলনার আড়ালে
গাঁটছড়া বাঁধতে চাইছে। সিপিএমের গালে জল-ঢাললে কংগ্রেসের গলা-ভেজে। কংগ্রেসের গালে জল-ঢাললে সিপিএমের
গলায় পড়ে। কদিন আগে যে সি.বি.আই জুজু দেখে দিদিমণি দাদামণিকে ডাকাত বলতেও ছাড়েননি; তৃণ উদ্যানে বাঁশের চাষ করতেন
অনবরত; এখন বাঁশঝাড় কেটে চোর-ডাকাত
তলায় তলায় দিল্লী থেকে কলকাতা এয়ারপোর্ট অভিসার লীলা করে বেড়াচ্ছে। আসলে এদেশের
ভোট যুদ্ধ আই.পি.এল ক্রিকেটের মতো বোঝা-দায়, কে কার দলে। সুবিধাবাদীর
রাজনীতির ঘেরাটোপে ভোট যুদ্ধে আজও প্রতিষ্ঠিত হয় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার গুলো! বৃহৎ গণতন্ত্রর ধ্বজাধারিরা মানুষের বিশ্বাসের
বলাৎকার করে চলেছে স্বাধীনতার ৭০ বছর ধরে। গণভোট নিয়ে শাসনকে রাষ্টবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞান কখনোই গণতন্ত্র বলে
অবিহিত করে না। গণতন্ত্রে সকল নাগরিক রাষ্ট্র পরিচালনায় সরাসরি অংশ নেয়। ছোট বা ক্ষুদ্র নগর বা রাষ্ট্রে এটা সম্ভব! ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যা ও বৃহদায়তন রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকের প্রত্যক্ষ
অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়; তাই প্রতি নাগরিকের হয়ে
প্রতিনিধিমূলক সংসদীয় সরকারের গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনার ভার অর্পণ করা হয়। কিন্তু যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ! জনপ্রতিনিধিরা জনগণের মাথায়
চড়ে বসে পালিত কুকুরের মতো সংসদীয় গণতন্ত্রে কুলকুচি করে আখের গুছাতে রাজনীতির
বেশ্যাবৃত্তিতে নাম লেখায়। জনহিত হয়ে দাঁড়ায় ভাই-ভাইপো পরিবার পরিজন দলীয় কর্মীর হিতসাধন।
স্বাধীনতার এত বছর পরেও
ভূমি সংস্কার দ্বারা ভূমিহীন খেতমজুরেরা জমির মালিকানার স্বীকৃতি পায়নি। দেশের ১৭ % বিত্তবান কৃষক ৮০% জমির মালিকানা দখল করে
বসে। মুক্ত ও অবাধ
অর্থনীতিতে শ্রেণী বিভক্ত সমাজ নিয়ে গঠিত রাষ্টে মুষ্টিমেয় পরিবার ও ব্যক্তির হাতে সমস্ত
ধনসম্পত্তি জাতীয় সম্পদ কুক্ষিগত। অবশিষ্টাংশের স্বল্প আয়ের দিন এনে দিন খাওয়া বিপুল সংখ্যার জনগণ
মোটা অর্থব্যয়ে রাষ্ট্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। অতি বিত্তবান মুষ্টিমেয় কোটিপতিদের পোষা রাজনৈতিক দলগুলো ফি-বছর
ভোট উৎসব করে জনগণের ভোটে বলীয়ান হয়ে বিত্তবানের স্বার্থে জনগণকে শাসন করে যাবে। যে দলই ক্ষমতাসীন থাকুন না কেন, এরা জাতীয় আয় ও সম্পদের
আশি শতাংশ নিজেরা আত্মসাৎ করে; যারা জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশের মতো। অবশিষ্ট পঁচানব্বই শতাংশ মানুষ জাতীয় আয় ও
সম্পদের বিশ শতাংশ ক্ষমতাসীন দলের করুণায় পায়। ফলে জাতীয় আয় ও সম্পদ বণ্টনের অসমতা অনুন্নত দেশগুলির
মানুষকে চরম দারিদ্র্যতার পথে ঢেলে দিচ্ছে।
সারা পৃথিবীতে আজ গরিব বড়লোকে দ্বিধাবিভক্ত। তাদের আরও দ্বিধান্বিত করে দেওয়া হচ্ছে ধর্ম
বর্ণর লেবেল সেঁটে। যা মানবজাতির পক্ষে অতীব ক্ষতিকর। টি.ভি সিরিয়াল, রিয়েলিটি-শো, সিনেমা, আই.পি.এল ক্রিকেট, মহরম, দুর্গাপুজো, বড়দিন সবেতেই বিনোদনের ছড়াছড়ি। সাধারণ, অশিক্ষিত, শিক্ষিত, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তকে এমন সব
সংস্কৃতির চর্চায় বেঁধে রাখা হচ্ছে, যার জন্য পর্যাপ্ত মনোযোগ আর বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন নেই।
ওয়াল্টার বেঞ্জামিন ‘দ্য ওয়র্ক অব আর্ট ইন দ্য
এজ অব মেকামিকাল রিপ্রোডাকশন’ বইটির (১৯৩৬) লেখক দুটো কনটেক্স থেকে
মানুষের স্বরূপটিকে চিহ্নিত করেছেন। পুঁজির ক্রমবর্ধমান বিকাশে আরও বেশি মানুষের সর্বহারা শ্রেণীভুক্ত হওয়া
এবং আমজনতার বাড়বাড়ন্ত চায় বিদ্যমান সম্পত্তি কাঠামোর পরিবর্তন। অন্যদিকে
দ্বিতীয়টিতে, ফ্যাসিবাদী শক্তি চায়
বিদ্যমান সম্পত্তি কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে জনতাকে সংগঠিত করতে। আর এর জন্য সম্পত্তির বিদ্যমান বিন্যাসের মধ্যেই
ফ্যাসিবাদ জনতার জাগরণ
কামনা করে। জনতাকে বশীভূত করে রাখতে চায়। জনতার উত্থান সম্ভাবনা বিশেষ আচার বা নিগড়ে
বাঁধতে চায়। তাই ফ্যাসিবাদে নান্দনিকতা রাজনীতির স্থলাভিষিক্ত হয়।
মানুষ বিভ্রান্ত, মোহগ্রস্ত। সীমাহীন দারিদ্র্য সম্বন্ধে দরিদ্ররা যাতে প্রশ্ন না তোলে, তাই মানুষের মূল্য দাঁড় করানো হয়েছে তার আপাত
সত্তায় এবং আশু সম্ভাবনায়। ক্ষুদার্ত মানুষের ক্রোধ হলে ছিটিয়ে দাও দু’মুঠো দু’টাকা দামের চাল। চালবাজির একটা সাইকেল, যুবকল্যাণের নামে ক্লাবে ক্লাবে দান খয়রাতি, স্বাধীনতা দিবসের নামে ফিসটি, কন্যাশ্রী, মাতাশ্রী, ভ্রাতাশ্রী; বঙ্গবিভূষণ টুসণের ছড়াছড়ি। প্রাপকেরা ছি ছি বলে পোস্টার নিয়ে রাস্তায় নামবেন নেত্রীর পান থেকে চুন
খসলেই। অথচ খেতে না
পাওয়া কৃষকের আত্মহত্যা, রোজ-ভ্যালি সারদায় সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোর যা গেছে, তা যাক।
মানুষ বিভ্রান্ত; শুধু এদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে। পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া (কালোরা বাদে) পৃথিবীর বিভিন্ন বিত্তশালী অঞ্চলে সাধারণ মানুষের গড় আয়
পনেরো \ বিশ হাজার ডলার হলেও তারা
সর্বহারা মানুষের দলেই রয়ে গেছে। শ্রম ছাড়া কিছুই নেই বেচার মতো। বাড়ি, গাড়ি, ফ্রিজ,ডিস্ ওয়াশার, টিভি, কম্পিউটার বিভিন্ন কোম্পানি
থেকে কিস্তিতে কেনা বাবদ হাজারটা ঋণ থাকে মৃত্যু পর্যন্ত, শোধ হয় না। ধনতন্ত্রী দেশগুলিতে মানুষের জীবনের গুণ (কোয়ালিটি অফ লাইফ) বাড়েনি, বরং কমে গেছে। অনেক থেকেও তারা সুখী নয়। অসাম্যের দরুন সে সব দেশে সামাজিক সুস্থতা নেই; আত্মহনন, নেশাগ্রস্ততা, খুনখারাপি, বিবাহবিচ্ছেদ, ধর্ষণ, বেশ্যাবৃত্তি, গুণ্ডামি, ডাকাতি, রাহাজানি, চুরি, পাগলামি বেড়েই চলেছে। তাই তথাকথিত উন্নত দেশগুলির মানুষ চরম
অসুখী ও মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত। তৃতীয় বিশ্বর মানুষের উভয় সংকট আর্থিক ও মানসিক দারিদ্রতা। মুষ্টিমেয় দেশি ও বিদেশি শোষকরা নানা শৃঙ্খলে তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, মাফিয়াচক্র, উগ্রপন্থা, সামন্ততান্ত্রিক স্বৈরাচারী
ক্ষমতা মানুষকে কেবল দাস বানিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ক্রমশ পণ্য সভ্যতার দিকে
ঠেলে দিয়ে তাকে যন্ত্রমানবে পরিণত করেছে। বিপন্ন বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। আত্মার সাথে, বিবেকের সাথে শরীরের বিচ্ছিন্নতাবাদ নিজের মধ্যে নিজেকে
টুকরো করতে করতে চেতনাকে স্থূল করে তুলেছে। সবই আজ ব্যবসার অংকে বিচার হয়। আজকের
এই পণ্য বাস্তবতায় মানুষ কেবল ভোটার; একটা পরিসংখ্যান। নিজেদের প্রকৃত অস্তিত্ব ভুলে লাল-নীল-সাদা-কালো-সবুজ-বেগুনিতে আপাত
সম্মোহিত। উদার অর্থনীতির খোলা দরজা দিয়ে ড্যাং ড্যাং করে ঢুকে পড়া অ্যামেরিকান
কোম্পানিগুলো আসলে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানিরই রূপান্তর। ইংরেজ ও জমিদারেরা সামনের
দরজা দিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রস্থান করলেও সাম্রাজ্যবাদী নয়া উপনিবেশিকতাবাদের
দোসরেরা পিছনের ভেজানো দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েছে চুপিসারে। সর্বত্রই বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগের ছড়াছড়ি। সাধারণের ধন প্রাণ যায় যায় অবস্থা। স্বাধীনতা আজো অধরা সাধারণের। সংরক্ষণ, আরক্ষণ সমর্থন করবে, না কি বিরোধিতা করবে? ব্যক্তিগত শরিয়তি আইন রক্ষা করবে, নাকি সকলের জন্য অভিন্ন বিধির বলবত হোক, চাইবে? ধর্মনিরপেক্ষতা (secularism), নাকি ছদ্মবেশী হিন্দুত্ববাদ? আর এস এস নাকি এস এফ আই? সব গুলিয়ে গ! মুক্ত বাজারে জাতীয়তাবাদের সারাৎসার জীবের জৈবিক প্রক্রিয়ায় নির্মিত
মল বা বিষ্ঠার মতো পরিত্যাজ্য। সুবিধাবাদীর রাজনৈতিক বাতাবরণে কখনোই জনদরদী
গণতান্ত্রিক মতাদর্শের জন্ম হয় না। কারণ জনগণের চেতনার গলা টিপে ধরে আখের সিদ্ধি, এ ধরনের রাজনীতির মুখ্য
উদ্দেশ্য, যা সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে। আবহমান কাল থেকেই শোষিত নিপীড়িত মানুষ জাতিধর্ম
ভৌগলিক স্থানাঙ্ক নির্বিশেষে এই ভূধরায় একই আকাশের তলায় অবস্থান করছে।
নৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবক্ষয়ের মধ্যে
অনিশ্চিত জীবনে রোজ মরছে যারা, তাদের সবকিছুকে গোল পাকিয়ে দিয়ে তৈরি হচ্ছে পৃথিবীর
মধ্যে পৃথিবী, দেশের মধ্যে দেশ, গোষ্ঠীর মধ্যে গোষ্ঠী, ধর্মের মধ্যে ধর্ম, ব্যক্তির মধ্যে ব্যক্তি। আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে দাস সমাজে, দাস থেকে
সামন্ত সমাজে, সামন্ত থেকে ধনতন্ত্রী
সমাজে, ধনতন্ত্রী পুঁজিবাদী সমাজ থেকে পণ্য সমাজে এবং পণ্য
সমাজ থেকে দ্রুত যন্ত্র সমাজে ঢুকে পড়েছি, যেখানে মানুষের হাত পা মস্তিষ্ক সবই আছে, তবে তা রিমোট কন্ট্রোলে নিয়ন্ত্রিত হয়।
হয়তো আর একটা যুদ্ধ বা ধ্বংসই মানুষের শ্রেণীর বিলুপ্তি
ঘটিয়ে আবার পিছিয়ে নিয়ে যাবে আদিম রাষ্ট্রহীন সাম্যবাদী সমাজে। কত কোটিবার যে নগর ধ্বংস হয়েছে, তা ইতিহাসও সঠিকভাবে জানে না।
তথ্যসূত্র:
১) বাংলাদেশ : প্রতিদিন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ! তানভীর আহমেদ, প্রকাশ :
বুধবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৫।
২) breakingnews.com সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়া কেন
লেখক: আন্তর্জাতিক বিষয়ক সাংবাদিক ব্রেকিংনিউজ/এসডি।
৩) রেডিও তেহরান (Radio Tehran) আনোয়ারুল হক, সিরিয়া-ইরান ইস্যুকে
কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি অত্যাসন্ন? মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট ২০১৫, ১৯টা ২৬।
৪) গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা - আব্দুল মির খান।
৫) magicianthon.org - ভারতীয় চলচ্চিত্রে আমদানি : নয়া শিল্প আকাঙ্ক্ষার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত- আরিফ রেজা মাহমুদ।
৬) অর্ধেক আকাশ - নির্বিচার যৌনতা এক-গামী না বহু-গামী, জয়তি।
৭) আলিপুর বার্তা ২৩ জানুয়ারি – ২৯ জানুয়ারি, বিশ্বায়নের দরবারে ভারতীয় অর্থনীতি, সুস্বাগত বন্দ্যোপাধ্যায়।
৮) Sowmewhereinblog.net \ বাঁধভাঙ্গার আওয়াজ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন