বিদায়ী
সুকন্যা মরে যেতেই শান্তনু টের পেলো। দু’তিনদিন ধরে রাত জাগছিল
সে। এখন হঠাৎ মনিটরে গ্রাফটা স্থির হয়ে গেল। সুকন্যা বিড়বিড় করে কি বলছিল শোনা হলো
না। হাতটা ধরা হলো না।
শান্তনুর খুব কান্না পেলো। একটা গান ছিল, সুকন্যা
মাঝে মাঝে শুনত। “খেলার সাথী বিদায় দ্বার খোলো”। তখন বিরক্ত লাগত, এখন গানটা হঠাৎ ভিতরটা মুচড়ে নিচ্ছে। নার্স এসে বিরক্ত মুখে চলে যাচ্ছে। শান্তনুর খুব মায়া লাগছে। কয়েক বছর আগে সুকন্যার
একটা সোনার হারের লোভ হয়েছিল খুব। দেওয়া যায়নি। দিতে তেমন চায়ও নি। এখন মনে হলো দৌড়ে গিয়ে, কোনো
মোটা মহিলার গলা থেকে এক ঝটকায় ছিনিয়ে নিয়ে আসে। মনে হলো বলে, সুকন্যা, আর দু’ঘণ্টা দাঁড়াও। একবার আয়নায় দেখ।
শেষদিকের বিরক্তি পার হয়ে নরম রোদ্দুর, বৃষ্টির পরের রোদ্দুর উঁকি মারছে। সুকন্যা যখন প্রথম দিকে লজ্জা পেতো, ও যখন মিষ্টি খেতে চাইত। ও যখন লুকিয়ে লুকিয়ে আমির খানের ছবি দেখত।
খুব ঘুম পাচ্ছে। যদি একটু ঘুমিয়ে নেয়, কাজটাজ শুরু করবার আগে। যদি স্বপ্নে সুকন্যা আসে! সুবলের মা কি সুকন্যার মতো ছ্যাঁচড়া রান্না করতে পারে? সুকন্যা শিখিয়ে দিয়েছিল? সুকন্যার কাছে কোনো লজ্জা ছিল না কতদিন ধরে। এখন কেমন একা। এখন কি রাতে সিনেমা দেখতে যাবে? সুকন্যার গালে শান্তনু খুব নরম করে হাত বুলোতে থাকে। চোখের পাতা এখনো ছেলেমানুষের মতো বড় বড়।
সুকন্যা ঠিক কোথায় ছিল, বলা যাচ্ছে না। বুদ্ধিস্ট
আফটার লাইফ থিওরি অনুযায়ী অন্ধকার গলিতে দয়ালু কোনো লোকের পিছু পিছু যাচ্ছিল মনে
হয়চ। নাকি
নিউরো সার্জারির লেটেস্ট এক
ধারায় যেমন বলে, শরীরের অন্য
প্রাণকেন্দ্রটি মাথার থেকে সব দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়ে, শেষবারের মতো পৃথিবীকে বলে, কমরেড চললাম,
তার তোড়জোড় চলছিল কি?
কিন্তু গালের আদরটা বড্ড ভালো লাগল। অনেকদিন পরে। সুকন্যা জ্যোতির্ময় লোকটাকে বলল, দাঁড়ান। আমি ওই হাফশার্ট পরা ছেলেটার কাছে ফিরে যাব।
মনিটরে আবার গ্রাফ ফিরে আসে। সুশান্তের হাত বোলানো থেমে যায়। সুকন্যার মুখে ফের যন্ত্রণার কষ্ট।
সুকন্যা থমকে গেল। দু’পা পিছোল। তারপর বলল, “আচ্ছা যাচ্ছি”।
মনিটর খুব স্থির।
অতটা চলে গিয়ে, ফিরে আসতে নেই। বোকা মেয়ে!
সুকন্যা থমকে গেল। দু’পা পিছোল। তারপর বলল, “আচ্ছা যাচ্ছি”।
মনিটর খুব স্থির।
অতটা চলে গিয়ে, ফিরে আসতে নেই। বোকা মেয়ে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন