বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬

নভেরা হোসেন

প্রতারণাপ্রিয় চোখ

তোমার চোখে আনন্দ আর যন্ত্রণা চিহ্ন
চিহ্ন অকারণে আঁকা হয়নি-
একটার পর একটা পালভাঙা নৌকার ক্রন্দন
তোমাকে করে তুলেছে হিংস্র-নির্লিপ্ত,
বাগানে যখন চন্দ্রমল্লিকার স্ফুটন শোনা যায়
তুমিও ভাঙতে থাকো নিজের পাপড়িতে
হাতে নাও কাস্তে কুড়াল
কেটে চলো চারপাশের যত
জঞ্জালময় স্মৃতি, প্রিয় রাত
হয়ে ওঠো প্রতারণাপ্রিয়
অন্যকে দেখাও কাছিমের খোলস
আর নিজের কাছে তুলোর মতো
তুমি কোন মধ্যমায়-
খুঁড়ে চলো নিজের কবর?
তুমি কোন বাসুদেব-
কোন বসন্তসেনা?
প্রতারণাপ্রিয় চোখ তোমায় করে তোলে পাথর তুল্য
আর তুমিও ডুবে যেতে থাকো
অস্পষ্ট গোধূলীর আলোয়...


অপরাধী

তোমরা যা বলছো আজকাল তার অর্ধেকটাই মিথ্যে
আর অর্ধেকটা নিরেট জালে বোনা
অহেতুক বাতাসের ক্রন্দন তটে জেগে ওঠে
যতসব ভালো আর মন্দের মিশেল
সেখান থেকেই বেছে নাও সুপেয় জল
নিজেকে বানালে কাচের পুতুল
একপাশে তার তারকাখচিত
অন্যপশে তলোয়ারের মসৃতা
রাতজাগা একেকটা দীর্ঘ সময়
কাঁটাছেড়া নিজের হৃদয়ে
তবু ভাবো এই ভালো
নিজেকে অপরাধী বানিয়ে কারাগারে যাওয়া
কে তোমাকে ভালোবাসল আর কে তোমাকে জলে ডোবাল
তার হিসেব যায় না কষা
ভুলে যাও দুধ আর বিষের তফাৎ
এক চুমুকেই পান করো অমিয় জল
এক হাতেই তুলে নিয়েছো
প্রেম ঘৃণা অমোঘ ত্রিশূল


বিস্মৃতির মৃত্যু

এখানে অনেক নিকষিত রাত সবুজ ঘাসের গালিচা, বৃক্ষের কালো শরীর সারি সারি
তোমরা অনেকে শহরে, অনেকে শহরের বিপরীতে বৃষ্টির পর্দা ঘরের দেওয়াল
তোমাদের জিভ টেনে ছিড়ে নেয়া হয়েছে, চুল ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে মন্দির গাত্রে  তোমাদের কোনো দ্বাররক্ষী নে, সহবাসের ঙ্গী নে তোমাদের চোখ উপরে ফেলা  হয়েছে, কুড়াল দিয়ে কাটা হয়েছে পায়ের গোড়ালি আর হৃদপিণ্ডে গাঁথা হয়েছে বিষাক্ত কাঁটা এসব নিয়েও তুমি ঘুমিয়ে আছো স্বপ্নে জয়তুন ফল, মরুভূমির গরম বালুতে পড়ন্ত বেলার ছায়া, একঝা সোনালি ডানার চিল তোমার মনে গায়ত্রি মন্ত্র, প্রজাপতি দেবতা এখানে অনেক সোনাঝুরি, জারুল, কৃষ্ণচূড়া, কলাগাছ সারি সারি
প্রেমিকের চোখে অগাথ জলরাশি

শ্যাওলার আস্তর সরিয়ে সরিয়ে তোমাকে খুঁজে নিচ্ছে সারসের ঠোঁট, কোমল স্তনে এঁকে দিচ্ছে প্রস্তরের ছাপ

এখানে অনেক নীল জল, ফুলের পাপড়ি বিস্মৃতির মৃত্যু তোমার শরীরে শরীরে এখানে অনেক নিকষিত রাত অপেক্ষা ভোর হবে বলে





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন