বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সাফাই

কষ্টের ধারাবিবরণী ছেড়েছি বহুদিন
স্ট্রেটকাট ঘুম ভাঙে শহর
এখন তাকালেই শুধু ভাগাড় চোখে পড়ে
দূরে ভেসে ওঠে আধুনিক ফুডপার্ক
মেরুদণ্ডের সাথে মেডেল
পাকস্থলী, অগ্নাশয়
আর হু হু করে বিকোচ্ছে ভালোবাসাময় পাচন রস,
ঘিলুর শরবত

ঝাঁ চকচকে ভাগাড়
ঝাড়ুদার সাদা জামা কিনেছেন
ঝাড়ুর ও নিজের
অ্যান্টিক হাড়গোড়ে ঘর সাজায় চিন্তিত প্রাণীরা
এক দুটো অসহায় শকুন জল চায়
শুদ্ধতার প্রতীক দেখে

হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া
বাড়িভরতি পিশাচ আর
গুহাভরতি ভণ্ড আদিমতা নিয়ে
পরিদশর্কমন্ডলী অঙ্ক কষেন
তক্তপোষে বাঁধা কিছু নটে শাক
প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন

এই নিট অ্যান্ড ক্লিন ভাগাড়েই
পরিপাটি সভ্যতার শরীর খোঁজে
ফুটফুটে উলঙ্গ আগন্তুক


গলি

চাপা গলিতে এখন আর
চোখে পড়ে না শীর্ণ ধূসর মানুষদের,
বাজারী গান আর শাড়ি ধোয়া জলে
লেপ্টে যায় রাত
যে রাতে চাঁদের ছায়া পড়ে না,
সে রাতে ছাদ বেয়ে নেমে আসে
অজস্র নাটুকে বাস্তব
তারপর রাত ভাঙে, কাচ ভাঙে
ছাদ নামে বুকের ওপর

এখান থেকে ওপরে তাকানো যায় না
এখান থেকে পেছনে তাকালে
আকাশ দেখা যায় খানিকটা
গলিদের একাকীত্ব চেয়ে থাকে
রাস্তা ক্রমশ বেড়ে যায়

চোখ বুজলে সন্ধ্যের সপ্ন
কোনও এক শীতের বিকেলে
রং উঠে যাওয়া আকাশের নিচে
তন্দ্রালুচোখে আর একটা গলি বলে ওঠে,
এখানেই থেকে যেতে হবে
এখানেই থেকে যেতে হবে
যতদিন না ঘুম আমাকে জড়িয়ে ধরছে আবার
আগের মতো...


ইলিউশন

নিদারুণ কালো রাতের অতলান্তে
জমে যাওয়া ঘণ্টার কাঁটা
আর খসে যাওয়া দেওয়ালে
যদি ফুটে ওঠে তোমার অবয়ব
আমি তাকে ইলিউশন বলি না
কারণ রিমোট হাতে এখন অনায়াসে চোখ বুজি
আর চোখ খুলি স্বপ্নের তটাঘাটে
পৃথিবী তুমিও দিশেহারা আমি জানি
রোজকার আঁচল ধরে ছুটে যাওয়া মায়ারাত
কাপড় সরলে
রাতের বুকে তোমার কোলাজ ফুটবেই
এখানে সেন্ট জন হয় না
আমিও মাঝরাতের নগ্ন কুমারী নই
তাই আয়নার ইলিউশনে
হৃৎপিণ্ডের রক্তক্ষরণেরও অবকাশ নেই
অ্যাসফোডেলস-এর মাঠে চিরআশ্রিতা হব যেদিন
আবার সন্ধ্যে নামবে
তোমাকে ইলিউশন শেখাবো আমি


1 টি মন্তব্য: