রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

অচিন্ত্য দাস

গণেশ পুজোর মেলায়

নিবার সন্ধ্যেবেলায় লোক জমছিল ভালোই, কিন্তু সেই সঙ্গে আকাশে মেঘও।  মেলায়  সব পাওয়া যায় – ঘর পোঁছার ন্যাতা, আমলার মোরোব্বা, পেটা লোহার চাটু, বিছানার চাদর, কাপ-ডিশ, দেয়ালে টাঙ্গাবার শিব-দুর্গা। চিনেবাদাম,  গোলগাপ্পা, কিটকিটে মিষ্টি সোনপাপড়ি। কোনো ভূমিকা ছাড়াই তুমুল বৃষ্টি নামলো। যখন থামল তখন নতুন করে লোক আসার সময় চলে গেছে, মাঠ কাদায় কাদা। মেলার বারোটা বেজে গেল। সুদর্শন যাদব, যার এখানের নাম পবনকুমার,  বিরক্তির সঙ্গে মোটরসাইকেলটা চাবি দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখল। সে একজন স্টার। মৃত্যুকূপে ভীষণ গতিতে তার মোটরসাইকেল চলে। কূপের দেয়ালে টিকটিকির মতো আটকে থেকে ভোঁ-ভটভট আওয়াজ করে পাক খায়। তখন তার  চোয়াল শক্ত, চোখ পলকহীন। গতি, স্পীড ছাড়া তার মাথায় আর কিছু থাকে না। দর্শকেরা বড় বড় চোখে এই অসমসাহসী শাহেনশাকে দেখে।

আজ আর শো হবে না। পবনকুমার আনমনে মাঝখানের সামিয়ানার ভেতর গণেশ মূর্তির সামনে এসে দাঁড়াল। দিন সাতেক হয়ে গেল এসেছে, সিদ্ধিদাতাকে দর্শনই করা হয়নি। কী অদ্ভুত ভগবান – মানুষের দেহ, হাতীর মাথা। একটা দাঁত ভাঙ্গা,   মুখে প্রশান্তি। তাকিয়ে থাকতে থাকতে পবনের মনে হলো গণেশজি যেন তার দিকে  তাকিয়ে হাসছে। মানুষের মতো মুখ তো নেই, হাসি বোঝা যাচ্ছে চোখ দেখে।  আবাক কাণ্ড, মনে হলো চোখটা যেন নড়াচড়া করছে। আরেকজনকে দেখেও যেন  গণেশবাবা হাসছে। সে দিকে তাকিয়ে পবনকুমার দেখল, একটি চব্বিশ-পঁচিশ  বছরের মেয়ে। সিল্কের শাড়ি, কায়দা করে চুল বাঁধা। মুখে রঙ, তাই ফরসা দেখাচ্ছে। চোখে আই-ল্যাশ্। এ হচ্ছে বিদ্যুকন্যা, এও একজন স্টার। এখানের  নাম মিস বিজলি। নানা রকম ভঙ্গী করে খেলা দেখায়, এক সময় মঞ্চ অন্ধকার হয়, তার দশ আঙ্গুলে খেলে যায় বৈদ্যুতিক স্পার্ক। এক সহযোগী তার হাতে এগিয়ে দেয় নিওন বাতি। সে ধরা মাত্র তা দপ্ করে জ্বলে ওঠে। হাততালি। বৃষ্টিতে আজকের শো বন্ধ।

পবন দেখল বিজলিকে, বিজলি পবনকে। পবনের মনে হলো, তার ভেতরে গোটা   তিনেক মোটরবাইক যেন ধকধক করে স্টার্র্ট নিল। বিজলির মনে হলো, পবনের  শরীর থেকে একটা বিদ্যুতরঙ্গ এসে তাকে কাঁপিয়ে দিল। গণেশজির চোখে মিটিমিটি হাসি।

মেলা শেষ হলে পবন ফিরে যাবে শোনপুরে। একটা ইস্কুলে আর্দালি সে, সামান্যতম কর্মচারী। বিজলি মানে সীতাবালা মাঝি থাকে গয়া জেলার এক গ্রামে। তিনটে ছেলে-মেয়ে তার। ফি-বছর অনেক ঝগড়াঝাঁটি করে আসতে হয়। তবে পয়সা আছে, তাই শেষমেষ সকলে রাজি হয়ে যায়।


এ মুহূর্ত্তটির কি কোনো মানে আছে? কে জানে! আর এই গণেশবাবাকেই দেখ না, বিচিত্র দেবতা। কেন যে তার চোখে এরকম অসময় মিটিমিটি হাসি খেলে যায়, তার মানেও কেউ জানে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন