বোধন
বৃষ্টিভেজা টিনের চাল। সকাল থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি। চালাটা পাতা দিয়ে ছেয়ে থাকে। পাশেই একটা বড় গাছ। এতদিন পরেও তার নাম আমার অজানা। প্রচুর পাখপাখালি আর কাঠবেড়ালির ঘর-গেরস্হালি সেখানে। শীত-বসন্তের সন্ধিক্ষণে সেই গাছে শিশু পাতাদের আদুরে টলটলানি। কৈশোরে পাতাগুলি আপেলরঙা হয়। তখন সকালের মিঠে রোদে চলে তাদের দামালপনা। আমি দেখি। ঘরগাছালির ফাঁকে হলুদমাখা হাতে জানালার গ্রিল ধরে দু’চোখ দিয়ে যেন গিলি। কপালের ঘাম টুপ করে ঝরে পড়ে চোখের পাতায়। চোখ বন্ধ করে ঘন নিঃশ্বাসে ওদের গন্ধ নিই... ছুঁতে চাই। পাতাদেরও বয়স বাড়ে। গাঢ় সবুজের রূপান্তরে যেন অভিজ্ঞতার দাগ। চলন-বলনের ঠমকঠামক, তখন ছন্দ বদলায়। সাথে সাথে বদলায় গাছের ছায়া-প্রচ্ছায়া, সুর-তাল, ফলাফল। মেঘ রোদ্দুরের সঙ্গে চলে ওর লাস্যতা... কখনও বা নিষিদ্ধ গোপনতা। ভাবি, গাছটার একটা নাম দেব।
ওর পায়ের কাছেই সেই চালাঘর, যার ওপর ও পাতা ঝরায়। শ্যাওলামাখা টিনের চালায় বৃষ্টিভেজা বিষণ্ণতা। সেখানে নিশ্চুপ শুয়ে থাকে ভাঙা ডালপালা, কুটোকাটা, দু’ একটা পরাশ্রয়ী গজিয়ে ওঠা সবুজের টুকরো। পলকহীন আমি হারিয়ে যাই। আজকাল একটা সবুজ রঙের কাঠের বাড়ির ছবি দেখতে পাই সেই মেঘলা ছায়ায়। বড় মায়াময় কিন্তু ভীষণ দূরে। হাত বাড়াই... তবু নাগাল পাই না। অস্থির হয়ে উঠি। ও বাড়ি কখনও হয়তো আমার ছিল... আজ আর আমার নয়।
নিঃঝুম দুপুর, অল্প রোদ গায়ে মেখে যখন শুয়ে থাকে সেই গাছের পায়ের কাছে... টিনের চালায়... অদ্ভুতভাবে কাঠের বাড়িটাও হারিয়ে যায়। জানালায় আমি... আর হারিয়ে যাই না। টুকরো দুপুর কুড়িয়ে মুঠোয় ভরি। দু’ চোখ বুজে ঘ্রাণ নিই। আশেপাশের কোনো বাড়ি থেকে সুর ভেসে আসে -- “তোমায় নতুন করে পাবো বলে হারাই ক্ষণে-ক্ষণ, ও মোর ভালোবাসার ধন।... তোমায় নতুন করে পাব বলে...”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন