রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ওক্তাভিও পাস

প্রতিবেশী সাহিত্য


ওক্তাভিও পাস-এর কবিতা  
  
 (অনুবাদ : জয়া চৌধুরী






  

কবি পরিচিতি

ওক্তাভিও পাস লোসানো ওরফে ওক্তাভিও পাস, মেক্সিকান কবি ও ডিপ্লোম্যাট,  মেক্সিকোয় ১৯১৪ সালে জন্মগ্রহণ করেনমিগেল দে সেরভান্তেস পুরস্কার এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই কবির জন্মশতবর্ষ ছিল ২০১৪ সালে। মার্ক্সসিজম, সুররিয়ালিজম  ও এক্সিস্ট্যানশিয়ালিজমের বিশেষ প্রভাব দেখা যায় তাঁর কবিতায়। ভারতে রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ চলাকালীন তিনি ‘ভিসলুম্ব্রেস দে লা ইন্ডিয়া’ বা ভারতের আভাস নামে  বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। ইংরেজি ভাষার প্রাতস্মরণীয় বেশ কজন কবি তাঁর  কবিতার অনুবাদ করেন - যেমন এলিজাবেথ বিশপ, স্যামুয়েল বেকেট, চার্লস টমলিনসন প্রমুখ। সর্বাধিক বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম সূর্যের পাথরকুচি বা পিয়েদ্রা দে সল১৯৯৮ সালে তিনি প্রয়াত হন।     



সরল জীবন

রুটিকে ডাকছি আর মনে হলো
টেবিলক্লথের ওপর হাজির রোজকার রুটিখানা;
সংক্ষিপ্ত স্বর্গ এবং
নরকেও ওকে ওর ঘাম দেওয়া স্বপ্ন দেওয়া
আর শরীরে মুহূর্তে ওরা যা চেয়েছিল;
সমুদ্র যে ভাবে হাসে, বাতাস যে ভাবে হাসে, হাসা সেইভাবে,
বরং হাসির আওয়াজ যেন ভাঙা কাচের মতো ঝনঝন করে
পান করা এবং জীবনের নেশায় পানোন্মত্ত থাকা,
এক পাও বেতালে না ফেলে নেচে যাওয়া,
কোনো এক অচেনায় হাত স্পর্শ করা  
পাথর আর প্রবল দ্বন্দ্বের কোনো দিনেও
যাতে সেই হাতের থাকে দৃঢ়তা
যার কোনো বন্ধুর হাত ছিল না;
ভিনিগার আমার মুখ অম্লস্বাদে ভরিয়ে দেবার চেয়ে
একাকীত্ব চেখে দেখাও ঠিক, আমার
ভ্যাঙচানো মুখ পুনরায় যায় না দেখা আরশিতে, নীরবতাও
যদি ওরা গুঁড়িয়ে ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে
এই চার দেওয়াল থাকবে? কাগজ, প্লাস্টার,
বালিশ, পাখি ধরার আঠা আর হলদে স্পটলাইট?
যদিও ওরা প্রতিজ্ঞার কোনো নরক নয়।
সে চাওয়ার থেকেও যা বেশি যন্ত্রণা দেয় না,
ভয়েরা জমাটবদ্ধ, আসে শীতলতা,
চুম্বনহীন পোড়া ঠোঁটেরা-
স্বচ্ছজল কখনো বদ্ধ হয় না
আর ফলেরা পাকা হয়ে টুপটাপ ঝরে পড়ে
রুটি ভাগ করা আর আরো নানা ভাগে বিভাজিত করতে জানা,
এক সত্যের রুটি যা আমাদের সকলকে ধরে রাখে,
যার খামিরের জন্যই আমি এক মানুষ,
আমার বীজের ভেতরে এক বীজ;
জীবিতদের জীবনের জন্য ঝগড়া করা,
জীবিতদের, জীবনে জীবন দেওয়া,
মৃতদের সমাধিস্থ করা ও ভুলে যাওয়া
যেমন পৃথিবী ভুলে যায় তাদের – ফলের মধ্যে...
আমার মৃত্যুকালে যা মরে যায় আর ক্ষমা
পৌঁছায় আমার কাছে আর থাকে ধূলার
টেঁকসই জীবন, ফলের জীবন এবং ধূলিকণার জীবন।



বালিকা

গাছের কোনো নাম দাও, বালিকা।
গাছ বেড়ে ওঠে, ধীরে, সমানভাবে,
বাতাস টপকাতে টপকাতে
ঠিকরোনো সবুজ,
যতক্ষণ না আমাদের দৃষ্টি সবুজে বদলে যায়।

আকাশের কোনো নাম দাও, বালিকা।
নীল আকাশ, সাদা মেঘ,
সকালের আলো,
বুকের মধ্যে ঢুকে পড়ে ওরা
যতক্ষণ না আকাশ বদলে যায় স্বচ্ছতায়।

জলের কোনো নাম দাও, বালিকা।
জল স্রোত হয়ে যায়, জানি না কোথায়,
ধুয়ে দেয় কালোরঙ মাটি,
ফুল সবুজ হয়ে ওঠে, পাতা ঝিকমিক করে
আর আর্দ্র ধূম্রজাল আমাদের বদলে দেয়।

তুমি কিছু বোলো না, কিচ্ছুটি না, বালিকা।
আর নিস্তব্ধতা থেকে এক
হলুদ সঙ্গীতের ঢেউ ওঠে আর মধ্যে
জন্ম নেয় জীবন;
তার সোনালি ঢেউ
আমাদের পৌঁছে দেয় পূর্ণতায়,
লাজুক আমাদের বদলে দেয়, আমরা-তে।

বালিকাটি আমাদের জাগরিত করে এবং পুনর্জীবন।
অন্তহীন তরঙ্গ, অন্তহীন ঊর্মি, অনন্ত!





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন