বঙ্গদেশে লেখক-লেখিকা
বঙ্গদেশে লেখক শ্রেণীকে দু’ভাগে বিভাজন করা হয়। স্বভাবতই
লিঙ্গীয় পরিচয় এখানে মূল চালিকা। একদল লেখক, অন্যদল লেখিকা। লেখকরা বেশি লেখেন
লেখিকাদের নিয়ে। তাঁদের জন্ম-মৃত্যু, প্রেম-অপ্রেম, আকর্ষণ-বিকর্ষণ সব ফিমেলদেরকে ঘিরে। বিশেষ করে লেখকরা চল্লিশ পরবর্তী বয়সে অনূঢ়া
মেয়েদের প্রেমে বেশি পড়ে। এই সপ্তাহে একজনের প্রেমে পড়ে যা তা অবস্থা, পরের
সপ্তাহে আরেকজন এসে মাথা খারাপ করে দেয়। কথিত আছে, চালশে ধরার পর পর লেখকদের মানে পুরুষদের যৌন প্রেমানুভূতি দ্বিগুণ
থেকে দ্বিগুণতর হতে থাকে। আর এই অনুভূতি টিনএজ গার্ল বা তরুণীদের হাস্যকলরোলে আরও
বেড়ে যায় - তখন লেখকদের টাল সামলাতে খবর হয়ে যায়। মানে আর কী কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে
এসকেপ করতে হয়। কোমলমতি ষোড়শী, অষ্টাদশীরা প্রেমিকের ম্যাচিউরড প্রেমে এতই গাঢ়তা
অনুভব করে যে প্রেমিকদের পালানোর সময়ে তাদেরকে বিদায় চুম্বন দেওয়ার কথাও ভোলে না প্রেমিকারা।
ঐদিকে লেখিকাদের হয় মহা-মুশকিল। লেখিকা হতে হতে ত্রিশ-চল্লিশ পার হয়ে যায়। তো প্রেমিক পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। গুটি চাল দিয়ে দু-একজন
প্রৌঢ় বা মধ্যবয়স্ক প্রেমিক জুটলেও টিন এজ প্রেমিকাদের সঙ্গ দিয়ে লেখকদের এনার্জি
বলতে আর কিছু থাকে না, তার উপরে বাড়িতে বউয়ের যন্ত্রণা। লেখিকারা কালে-ভাদ্রে এইসব লেখকদের ডেটিং পায়, তাও কয়েক ঘণ্টার জন্য। বাকি সময় কলম পেষা ছাড়া গতি থাকে না। সে
কারণে দিন
দিন উপন্যাস লেখিকার
সংখ্যা বাড়তেই থাকে, বাজার সয়লাব হয়ে যায় লেখিকাদের নাটক-নভেলে। তাঁদের মধ্যে দু’একজন সময়ের হাওয়া বুঝতে পেরে নৌকার
পাল অন্যদিকে ঘোরায়, মানে টিন এজ বা বিশোর্ধ্ব ড্যাশিং কাউবয়দের সাথে বাথান-ভ্রমণে বের হয়। সারা শীতকাল ঘোড়ার উপর বসে প্রেম
করেন তাঁরা। শুধুমাত্র খিদে লাগলে ঘোড়া থেকে নেমে এসে গরু চিবাতে শুরু করেন লেখিকারা। এভাবে গরুর স্টকও কমে যেতে থাকে। লেখকরা ইয়ং
গার্ল-ফ্রেন্ডদের নিয়ে গরু খেতে এসে বিরক্ত হন। দীর্ঘ কিউ ধরে ঠ্যাং অথবা চর্বির স্যুপ
খেতে বাধ্য হন। লাঞ্চ আওয়ারে অফিস থেকে বেরিয়ে এসব অখাদ্য প্রেমিকাদের মুখে দিতে
গেলে অনেক লেখকেরই প্রেম ছুটে যায়। অগত্যা তাঁরা আবার লেখিকাদের সন্ধানে গরুর বাথানগুলোতে ঘুরতে থাকেন। কিন্তু সেইসময় লেখিকারা স্কুল থেকে বাচ্চাদের আনার জন্য বাসের হাতলে ঝুলতে
থাকেন। তাঁদের কপাল ঘেমে গিয়ে বড় বড় ফোঁটায় ঘাম ঝরে পড়তে থাকে বাসযাত্রীদের গায়ে। যাত্রীরা রেগেমেগে লেখিকাদের বাস থেকে
নামিয়ে দেয়। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, স্বামীরা স্ত্রীদের জন্য প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া
করতে থাকেন। লেখিকাদের
বাথানে ঘোরাঘুরি বন্ধ হয়ে যায়। লেখিকারা প্রাইভেট গাড়ির জানালার কাচ দিয়ে দেখতে পান লেখকরা দময়ন্তীদের নিয়ে হাওয়া খেতে বের হয়েছেন; সবার পরনে চ্যানেল আই সুপার স্টার
২০০৮-এর সেরা পোশাক। লেখিকারা কী আর করেন
- চুল কেটে চেহারা বদলে
ফেলেন, অনেকে পেশাও বদলাতে থাকেন। যাতে করে পুরনো প্রেমিকরা তাঁদের দেখে দাঁত ভ্যাংচাতে না পারেন, আর তাঁরাও বাড়িতে বাড়িতে হোমো-সভ্যতার
ঝাণ্ডা উড়িয়ে ‘ফায়ার’ সিনেমার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন