লেডিজ ফার্স্ট (প্রথম) নাকি স্পেশাল
এই বসুন্ধরা সকলের। ইমু থেকে স্কাইলার্ক, অ্যামিবা
থেকে ডায়ানোসর, ইয়েতি থেকে মানুষ - সবার চরাচর এই জগতের গ্রহ থেকে
গ্রহান্তরে। মানবকুল আদম ও ইভের ভুলে নাকি অন্য কোনো বিজ্ঞানের গূঢ় জটিল তথ্য অনুযায়ী চলে আসে
পৃথিবী নামক গ্রহে, কে জানে! যার যেমন বিশ্বাস তেমন করে
সাজিয়ে নিয়ে চলেছে মানুষ, সেই অভিশাপের নয়তো আনন্দের নয়তো অসাবধানতার সেই ফসল। বংশগতির সূত্র ধরলে নিশ্চিতভাবেই একজন পুরুষ আর একজন মহিলাই একসঙ্গে ছিল এই
ধরায়। কিন্তু ক্ষমতার বিভাজনে সেখানেও আসে বৈষম্য। অধিগ্রহণের ফেরে গিলতে থাকে
একে অন্যের অধিকারের সীমানার অংশ। অবাধে কন্যাভ্রুণ হত্যালীলা সমাপ্ত করে জনসংখ্যার ব্যালান্স বিগড়ে শেষমেশ আবার সেই সমঝোতার খেলা। তুমি–আমি সমান সমান। তাই চল ডমেষ্টিক ভায়লেন্সের
আইন তোমার, কন্যাশ্রী তোমার, সেলফি উইথ ডটার তোমার, স্বামীর সঙ্গে জয়েন্ট আকাউন্ট তোমার। অবশেষে এক কামরার সংরক্ষণ ছেড়ে চল ‘মাতৃভূমি’ নামের
গুটিকতক ট্রেনও তোমার। কিন্তু যা কিছু তোমার, তা রক্ষা করার ক্ষমতাও
তোমার কাছেই থাকার কথা। নেই কেন? এই রহস্যজালে লুকিয়ে আছে ফার্স্ট-স্পেশালের মর্মকথা। একদা বিয়ের বাজারে ফেল মারা
কন্যাদের উদ্ধারের জন্য সর্বশিক্ষার স্লোগানের মতো চালু হয় প্রবাদ বচনের বহুল
ব্যবহার। ‘কালো জগতের আলো’। জোর করে যে ফেলকে পাশ করানো যায় না, তা আজকের বিয়ের বাজারের বিজ্ঞাপনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
ধর্মের ‘বার’ উঠে গেলেও কিন্তু রঙের প্রাথমিক
প্রাধান্য একই ভাবে অনুশাসন করছে। এখনও ঘরে ঘরে বলা হয়, তুমি সুন্দরী নও তাই তুমি চাকরি না পেলে বিবাহ কষ্টকর। মানে তোমার গায়ের বর্ণ তোমার ঘাটতির কথা বলে, যার পরিপূরক তোমার মেধা যা
দিতে পারে অর্থনৈতিক সম্পূর্ণতা। তবে ফার্স্ট কী করে? কেন রঙের, চুলের, ব্যাঙ্ক ব্যালন্সের মানের
উর্ধক্রম অনুসারে সাজিয়ে প্রথমে পাত্রীটাই তো আগে নির্বাচিত হয়। পড়ে থেকে যায় সেকেন্ড বা থার্ড চয়েস। স্পেশাল কেন? পুজো যে তোমারি। মন্ডপ তোমার, উৎসব তোমার, বিসর্জন তোমার। তোমায় ঘিরেই তো বাঙালি। কিন্তু আমার ট্রেনটা কি আমার একার, মানে নারীকূলের, নাকি ভাগ করে নিতে হবে সবার
সাথে? কিন্তু একবার স্পেশাল বলে ঘোষণা করে হাতে তুলে দেবার পর কার অনুমোদনে তাতে
লাগিয়ে দেওয়া হলো তিনটি কামরা? সে তো রেল আর সরকারী বিষয়। জনগনের কী বিষয়? অধিকার ফিরিয়ে নেওয়া
ও ‘পিতৃভূমি’ স্পেশাল ট্রেনের গায়ে লিখে নিজেদের বিজিত ঘোষণা করা! কিন্তু এর জন্য আন্সারাবেল
কে? সিউরলি নারীর ক্ষমতা রক্ষার অক্ষমতা। ক্ষমতা রক্ষার উপায় কী? পুলিশ পাহারায় দুই একদিন কামরায় চলা ও বিদ্রোহীদের রাখী বেঁধে পাশে বসিয়ে নেওয়া।
তাছাড়া আছে আত্মরক্ষার জন্য সেফটিপিন, ফোল্ডিং ছাতা, লঙ্কার গুঁড়ো এইসব! আমরা এবারে সুরক্ষিত। অধিকারের পাল্লা মেপে তা ওজন মতো বিলি করা কি
তবে রাষ্ট্রের দায়? কাকে কতটা দিলে ব্যালান্স থাকে, এই বিচারের দায় কি তাদের? নাকি পুরুষের কাছ থেকে ধার
করে নিয়ে কিছু সময়ের জন্য রাষ্ট্রের তাস খেলার অনুমোদন পেতে পারে নারী? ট্রেনে ৯;১ আবার টিকিটের লাইনে ২;১ আবার সম্মতিতেও এক সুনির্দির্ষ্ট বিভাজনের হিসেবে বাঁধা নারীর অধিকারের বিন্যাস। জীবনের শুরুর মুহূর্ত থেকে ভাগাভাগি হতে থাকে নারীর শ্বাস। তারপর তা সামলে উঠতেই লড়াই আত্মরক্ষার। তারপর নিজেকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে বিলিয়ে দেওয়া। যাক ট্রেন নাই বা হলো নারীর
একার। এই ভূমির নাম তো মা রইল! আক্ষেপ নেই আর! হারতে হারতে অভ্যাস হয়ে গেছে আমাদের।
মাঝে মাঝে অস্তিত্ব
টেকানোর সংগ্রামটাই মুখ্য মনে হয়। জয়-পরাজয় বোধটাই ভোঁতা হয়ে গেছে। আত্মসুখী ইন্দ্রাণীদেবীকে স্যালুট করি। তিনি এই দেশের ব্যতিক্রমী
মা-ই শুধু নন, তিনি সেই স্পেশাল নারী, যিনি নিজের সুখের সন্ধান
করেছিলেন সহস্র বেড়িকে ছিন্নভিন্ন করে। নারীত্বকে কালিমালিপ্ত করেছেন, তার জন্য কোনো আপশোস নারীর থাকার কথা নয়, কেননা নারীত্বের গৌরব রক্ষায় নিয়জিত নারীর
সংখ্যা অগণিত। একজন থাক হত্যাকারী, ডাইনি ভয়ঙ্কর অপরাধী আত্মসুখী নারী! ফার্স্ট লেডী ইন্দ্রাণীর ইতিহাস পড়া হোক একজন শতাব্দী সেরা ক্রিমিন্যাল হিসেবে নয়, স্রেফ একজন নারী হিসেবে। পুজোর থালার বদলে নৈবেদ্যে থাক
ঘৃণা, উপহাস, সন্তানের দীর্ঘশ্বাস। তবু থাক তার উপস্থিতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন