ওরা পাঁচজন
ওরা পাঁচজন এসে বসেছে। বেশ বড়ো পুকুর সেখানে। সমতলভূমি চলতে চলতে কোথাও অবতল
হলে পুকুর তৈরি হয়। পুকুরে জল থাকে। জল নাও থাকতে পারে। এই পুকুরে জল আছে এখন। শ্রাবণ
বলে বেশ পূর্ণগর্ভা দেখাচ্ছে, ছমছমে একরকম। আকাশে একদলা বেখাপ্পা কালো মেঘ চাঁদোয়া
হয়ে থেমে আছে পুকুরের ওপরে। পুকুর পাড়ে ওরা পাঁচজন। নাম কে জানে কী! হ-য-ব-র-ল হতে পারে। ধুতি না প্যান্ট না
শাড়ি... অন্ধকার ঝেঁপে এসেছে বলে ঠিক ঠাহর করে বলা শক্ত। পাশাপাশিও বসেনি। একটু
দূরে, একটু ছাড়াছাড়া কেমন যেন। ওদের ঘুটঘুটে ছায়াগুলো পুকুরের জলে ধ্যাবড়ানো,
কাঁপছে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না। হ-য-ব-র-ল একসাথে একটা স্থির চিত্র। ঘটনাটা কী? আজই কি ওদের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল? হয়তো প্রত্যেকে এক জায়গায় থাকেও না। এমনকি এই গ্রামেও থাকে কিনা, তাও বলা মুশকিল।
-- এই অবস্থা কতদিন চলবে?
-- কাজকম্মো ফেলে ম্যাক্সিমাম কতদিন থাকা যেতে পারে?
-- এই আপ-ডাউনের চেয়ে একটা ফ্যাইন্যাল কিছু বরং-
-- বোঝাই যাচ্ছে খুব একটা উন্নতির আশা নেই...
-- টেনে যাওয়া সো টায়ারিং... এস্পার কিম্বা ওস্পার...
মনে হয়, মাথার মধ্যে এরকম ভাবনার রীল চলছে। কেউ কথা বলছে না যে, বোঝা যাবে ওরা
পরষ্পরকে চেনে কিম্বা চেনে না। হতেও পারে ওদের মধ্যে সম্পর্ক আছে, কিম্বা
কাকতালীয়ভাবে এক জায়গায় এসে বসে পড়েছে। পুকুরের
পাড়ের শেষে দিকচক্রবাল। ঘন কুচকুচে দিগন্তরেখা। সম্ভবত চিন্তায় ওরা এত মগ্ন বলে
আকাশের দিকে তাকায়নি। বৃষ্টি শুরু হলে এমন ঝাপসা হয়ে উঠবে যে, কিছু আর নজরে আসবে
না। ওরা কতক্ষণ বসে থাকবে তাও বোঝা যাচ্ছে না। আধমাইলটাক হেঁটে গেলে গ্রামের বসতি। এর মধ্যে আর পুকুর নেই। ধানক্ষেতের
সবুজ গলা অবধি ডুবে আছে।
আল পেরিয়ে, সাঁকো বেয়ে অলিগলি বেয়ে এক ধ্বসে-যেতে-থাকা কোঠাবাড়ি আছে। পুরনো
কোনো বড়মানুষের বাড়ি। সেখানে ভাঙাচোরা মানুষ আছে। ক’জন যে আছে, তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাদেরই কারো কথা কি ওরা ভেবেছে? আবার হ-য-ব-র-ল’র প্রত্যেকেই সে বাড়িতে নাও এসে থাকতে পারে। ওরা হয়তো আলাদা জায়গায়, নিজস্ব কোনো দরকারে এসেছেল। কিন্তু
প্রত্যন্ত প্রান্তে অজ পাড়াগাঁয়ে কিসের দরকারে এসেছিল, বোঝা সহজ নয়।
তবু ঘটনাচক্রে তারা এক সময়ে এক জায়গাতে এসে জড়ো হয়েছে। তাদের কারো হাতে মাছ
ধরার ছিপ আছে কিনা, পেছন থেকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
এখন বেলাশেষ। বিকেল সাড়ে পাঁচটা। গাঢ় অন্ধকার কালির মতো। আশ্চর্যের কথা, এতক্ষণেও
বৃষ্টি নামেনি। ওদের মধ্যে দুজন ঘড়ি দেখছে। ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়াচ্ছে। মাথার ওপরে
হাত তুলে টান হচ্ছে। তারপর হয়তো
স্বগতোক্তি করছে--
-- নাঃ ভেবে কিছু হবে না,
ওঠা যাক।
পা ফেলে এগোচ্ছে, শুধু চলতে-থাকা মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে, আর কিছু না।
তার পেছনে দ্বিতীয় মানুষ...
পেছনে তৃতীয় মানুষ...
চতুর্থ মানুষ...
পঞ্চম...
আপাতত তারা সারি দিয়ে একই দিকে চলেছে, কেননা আলের রাস্তা খুব সরু। বেকায়দায় পা
পিছলে গেলে বিপদ।
অনেক দিন পর লিখে গেলাম- ভাল লাগল। এ আর নতুন কথা কি!
উত্তরমুছুন- সাঁঝবাতি
সত্যিই অনেকদিন পরে... কেন?
মুছুনশ্রাবণী দাশগুপ্ত
গল্পের চিত্রটি খুব আধুনিক, লেখা ও আধুনিক।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ মতামতের জন্যে।
মুছুনশ্রাবণী দাশগুপ্ত
ফেসবুকে থাকি বা না থাকি লেখা আমি খুঁজেই পড়ে ফেলি
উত্তরমুছুন- সাঁঝবাতি
শেষ হল না তো চালিয়ে যাবেন তো!
উত্তরমুছুন