সকালবেলায়
গোলাপের মাড়ি একটু ফাঁক
করলেই দেখা যায়
তার দাঁতের পোকা। নিঃশ্বাসে খুব গন্ধ ছড়ায়
প্রজাপতি তার শুঁড় জোর করে
চেপে ধরে
ফুলের মুখের ভেতর। লালা-রেণু বিনিময়
ঘাসের পড়ে মাকড়সার বীর্যে বোনা
একবুক
জাল পড়ে থাকে। আত্মরতির নিশ্ছিদ্র সুখ
থুতু কিম্বা শিশির জালে
গিয়ে আটকালে
একইরকম জ্বলজ্বল। আলোতে নির্লজ্জ মুখ
বুকে হাঁটা কেন্নো পাতার
গাদায় মিশে যায়
ভেজা রস মাখিয়ে। পাতারা নিষিক্ত হয়
জীবাণু অলক্ষ্যে আঁধার
সংশ্লেষ-বিভাজন
করতে করতে বড় হয়। চক্রবৎ আবর্তায়
মাটিতে জোঁকেরা কোলা ব্যাঙ
শিকার ধরে
প্রাতরাশ সারতে। যায় খাদ্যচূড়ার শিখরে
চুমোয় চুমোয় কেমন যেন আবেশ
জড়িয়ে
আসে সারা গায়ে। দু’এক ফোঁটা রক্ত ঝরে
মৌমাছি বিষভরা মধু নিয়ে
কোটরে
ঢোকে অবিরত। বাতাসে বমি ওড়ে
খোপে খোপে বাঁজারা শিশু
ভরণপোষণ
করে যুগ যুগ ধরে। হুলের জ্বালা শরীরে...
ক্লেপ্টোম্যানিয়া
কম্পিত হাত আর মুখে তিতকুটে স্বাদ নিয়ে আমি পথে
পথে ফিরি। ত্রস্ত ইঁদুর যেমন অকারণ কোটরে জমিয়ে রাখে খুদকুঁড়ো, নিজেকে তেমনই
ক্ষুদ্র খড়ের কাঠামো থেকে ক্রমে ক্রমে গড়ে তুলি দীর্ঘকালীন তিলোত্তমায়। উদাসীনার অভিনয়ে অভ্যস্ত কিশোরীর স্মৃতি হতে টুক করে তুলে নিই শেষ শৈশবের
অলীক পরিবারপ্রকল্প; পাশের বাড়ির কিশোরের উদ্দেশ্যে সযত্নে লুকিয়ে রাখা চাঁদের
বুড়ির চুল আর আষাঢ়ের প্রথম কদম ফুল। শরতের
প্রথম নির্ভয়া মেঘ থেকে একটা বড় চৌকো টুকরো কেটে রেখে দিই পরিচয়পত্র আঁটা
ব্যক্তিগত বোতলে। অনাথ বালকের বাবার চওড়া কাঁধে চেপে রথের মেলার মাটির ময়ূর কিনতে
যাবার সুপ্ত সুখস্বপ্নে এখন শুধুই আমার অধিকার। জরাজীর্ণ মসজিদের মিহরাব থেকে
সাবধানে খুলে নিই শেষ সূক্ষ্ম জ্যামিতিক বিমূর্ততা। লোকাল ট্রেনে উঠে ক্যানিংফেরতা
হাস্যমুখি ঠিকে ঝির দলের মধ্যে থেকে চুপিসারে সরিয়ে ফেলি দৈনন্দিন কলহমুখরতা।
খাঁচার চন্দনার থেকে জোরজার অধিকার করি সবুজ ঘাস, লাল বটফল আর নীলচে আকাশ।
বিগতযৌবনা বিধবার হাত মুচড়ে নির্মম দস্যুর মতো ছিনিয়ে নিই সিঁদুরদানে খুচরো পয়সার
ফাঁকে লুকিয়ে রাখা একচিলতে আত্মহননের সাধআহ্লাদ। বুকে হাঁটা সাপ সরীসৃপের থেকে
ইন্দ্রজাল যোগমায়া জাদুবলে শুষে নিই তার আলস্যপ্রিয় তন্দ্রাপ্রবণতা। শীর্ণ বৃদ্ধ
ব্রাহ্মণকে পথে একা পেলে তার মলিন ঝোলা থেকে চটজলদি চুরি করে নিই আরাধ্য ঈশ্বর,
তার ম্লানমুখী শতোর্ধ্ব শালগ্রাম শিলা। আর এভাবে হাত পাকাতে পাকাতে, দেখে নিয়ো,
একদিন ঠিক আমি চুরি করে নেব, নিজের ব্যাজার বুকের ভেতর আগলে রেখে দেব তোমার মায়াবী
মহাবিশ্বের যত সব অন্ধকার!
ফোবিয়া
উর্বরতাবিহীন উচ্চতায় চড়তে আমার মাথা ঘোরে, বিষণ্ণ
বমিভাব জাগে। আমার অনেক ভয়ভীতি। মানুষের ছোঁয়াচ পারতপক্ষে এড়িয়েই চলি, লোকাল
ট্রেনের গ্রীষ্মকালীন গুঁতোগুঁতিতে আমার পায়ুরন্ধ্রের উদ্দেশ্যে অনেক অলীক আঙুলের
অস্তিত্ব টের পাই। ক্যান্সারের নাম শুনলেই
আমার সারা শরীরময় কাঁকড়ার কর্কশ চলাফেরা শুরু হয়। ফুলের ভয় আমার নেই, শুধুই অন্তিম
প্রেমের পরিণামের। বৃদ্ধ বটবৃক্ষ দেখলেই কুড়ালের কাহিনীই প্রথমে মাথায় আসে।
অন্ধকার অজন্তার গুহাচিত্র দেখিনি কখনো, আদুরে আয়না ভাঙি সুযোগ পেলেই। আমি অন্ধ
মাকড়সা পছন্দ করি না, যে সময়ের বৃত্তাকার
বুক জুড়ে জীর্ণ জাল বিছিয়ে রাখে। আমি শোকগ্রস্ত সাপ সহ্য করতে পারি না, যে শবদেহ
আগলে পাহারায় থাকে প্রস্তরযুগ থেকে। ম্রিয়মাণ মন্দিরপ্রাঙ্গণে আগুন জ্বালাতে ভয় হয় পাছে
ব্রহ্মাণ্ড বিনাশ হয় রোষানলে। কখনো আমার অসুখী আত্মা জুড়ে লাল পিঁপড়ে বাসা গড়ে,
ডিম পাড়ে তুলতুলে স্বপ্নের ওপর। আমার আতঙ্ক কখনো কিশোরের কল্পনা থেকে একশৃঙ্গদের
একক চারণক্ষেত্র চুরি যায় যদি! আমার প্রিয়জনেরা মরে গেলেই কদাকার করোটিসর্বস্ব
ত্রাস বনে যায়। আমি এখন জানি, সমুদ্রবেলায় বালির বাড়িঘর ভেঙে আচমকা উঠে যেতে হবে
বিমর্ষ বালিকার মতোন, তবু আমি ম্লানমুখী মৃত্যুকে চাই না। গহীন রাতের অন্ধকারে আমি
শুনতে পাই ভিনগ্রহীদের ভীরু ডানার খসখস
শব্দ; মাঝরাতে ঘুম ভেঙে উঠে দেখি মানবহীন পৃথিবীতে পোকাদের রাজ্যপাট। চেতনা লোপ
পাবার পূর্ব মুহূর্তে আমি ভয় পাই, যদি নিম্নমার্গীদের নিষিদ্ধ নিঃশ্বাসে ঈশ্বরের
নাভিশ্বাস ওঠে কখনো!
teebro lekha...
উত্তরমুছুন