রবিবার, ১৪ জুন, ২০১৫

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

হবু প্রেমিক


তুমি নিঝুম জলে পছন্দ কর না ভাসতে
আমিও তাই
তোমাকে উল্লসিত করে ঝড়ের পূর্বাভাস
আমাকেও
তুমি সর্বদা একটা না একটা দুঃখের প্রেমে
আমিও তাই
তোমার ভেঙে দিতে ইচ্ছে করে পুতুলের সমর্পণ
আমারও
তুমি ফিরে ফিরে যাও নতুন নতুন দুর্বিপাকে
আমিও তাই
তোমার বাঁকে বাঁকে হারিয়ে যাচ্ছে চেনা গল্প
আমার মতোই
তুমি আমার সমান্তরালে গাঁথ বৈধ নীতিকথা
আমিও তাই
তোমাকে কাঁপায় ছুটকো ছাটকা ফ্লার্ট
আমাকেও
তুমি খুঁটিবাঁধা বন্ধনীতে ভালোবাসছো দূর
আমিও তাই
তুমি তবু আমি নও তুমি হবু আমারই প্রেমিক

                                       
দিব্যি


পাটের ক্ষেতে লুটিয়ে ছেঁড়া শাড়ি
আর একখানা উঠোন তারে মেলা

অপেক্ষাতে, জড়িয়ে নেবে কবে
গন্ধসাবান আতর মাখা গায়ে

বাইশ পঁচিশ তিরিশ আরও বেশি
হোক যা কিছু শরীর কমনীয়
স্নেহ মায়া জারণ কারণ সুধা
একছত্র দিতেই রাজরানী

আবছা মনে এক্কা দোক্কা কোর্ট
বাদল কমল রূপক দশরথ
এক পাড়াতে ইস্কুলে আর মাঠে
এক খেলাতে সহজ বেড়ে ওঠা

শরীর ছুঁলো রূপনারায়ণ কোল
জরায়ু আর মাতৃচিহ্ন এঁকে
চোখ ফুটলো বালকবেলার সাথির
অন্য এরা, বন্ধু হতে মানা

রান্নাবান্না ঘরগোছানো বউ
শিল্প বলতে সূচসুতো আর শাড়ি
এর চেয়ে বেশি হাত পা হলেই আড়ি
অবাধ্যতার কাঁটা খচখচ করে

হাত বাড়ালেই দেয় না নাগাল ধরা
কিসের এত গুমোর দুবলা মেয়ে
পেশির জোরে যখন যেমন খুশি
শাস্ত্রমতে নেবেই কাছে পুরুষ

ঘরকন্নাই মোক্ষ এদের জন্য
পুঁথি পত্তর পড়ুক ডিঙ্গাক পাহাড়
বালবাচ্চার জন্ম পালনবিধি
রতিকর্ম পুত্র লাভের আশায়

কয়েক ফোঁটা উদারনীতির ফাঁকে
স্ত্রৈণ পুরুষ সর্বনাশের বাহক
খাপ বিচারে এদের শাসন দায়
হাতে তুলে নেয় উপযুক্ত পুরুষ

পাটের ক্ষেতে ম্যাগট খাওয়া দেহ
চিল শকুনের দুরন্ত পিকনিক
ঘরের থেকে ফেললি কেন পা
দায় নেই কারো বাঁচাবে তোকে মেয়ে

স্বামী পুত্র পিতার সমাজগুরু
রাষ্ট্র পুলিশ মন্ত্রী সান্ত্রীদল
আঙুল তুলে বলেছে, এই বেশ
পাখনা গজায় ধ্বংস হবার আগে

আমার বুকে ঘৃণার বারুদ স্তূপ
আমার বুকে আদর বাঁদর ছেলে
আমার ছেলের মাথার দিব্যি থাক
মায়ের আঁচল জড়িয়ে দিবি তুই


দহন

 
এইখানে পোড়া মাটিতে নাম লিখতে দেবে না ঘাসের আঁচড়
জানতাম
এইখানে বৃষ্টির ঘোষণা কণামাত্র ধুলোবালি মাটির ভয় গলাবে না
জানতাম
এইখানে সুচারু ভানে এঁটে আছে প্লাস্টিকের ব্যাটম্যান মুখোশ
জানতাম
এইখানে মুখ আঁকা চোখ আঁকা নিষ্পাপ ঝকঝকে স্কিনে এক্সট্রা গ্লো

জানতাম
এইখানে যত তলিয়ে যাবে আরও আরও কঠিন কঠিন মিথ্যে
জানতাম
এইখানে পাপবোধ না থাকায় পুণ্যাকাঙ্ক্ষা নেই এমনকি জবাবদিহিও
জানতাম
এইখানে ফসিলে নিঃসাড় মৃতবত নিষ্ঠুর এক রাজা সাজা সং
জানতাম

এইখানেই এইখানেই অশান্তির ঘুমে বিশ্বাস দ্রবীভূত চলাচল
সেসব মানতে ভুলেই ঝাঁপাই যে মানা লবণাক্ত আর দহনের

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন