নিঃশব্দ স্মৃতিতর্পণ
একটা কেমন স্তব্ধতা!
অন্ধকারে হাতড়ে মরি, শিল্পী তোমার শূন্যতা
আকাশ ভরা তারার মাঝে, নায়ক তোমার পূর্ণতা।
রাতের গায়ে দিন ঢলে যায়, গড়িয়ে চলে সময়টা
আনন্দের এই জীবন সফর, ব্যস্ত ইঁদুর-দৌড়টা।
সাঁঝসবেরে নীল আকাশে ভোকাট্টা সেই ঘুড়িটা
কেমন জানি হাতড়ে মরি, সুপারস্টারের শূন্যতা।
জীবন? সে তো অনেক দিল, কমিয়ে দিল আয়ুটা
নায়ক! তুমি ঘুমিয়ে থেকো, কাটাও সুখের স্বর্গটা।
আকাশ যেন ঝলসে গেল, বদলে গেল দৃশ্যটা
একটা তারা খস্ল পড়ে, থম্কে গেল শহরটা।
কোথায় যেন হারিয়ে গেল, জ্বলজ্বলে সেই তারাটা
দম্কা বাতাস উড়িয়ে দিল, শুটিং স্টারের ফুলকিটা।
শূন্য ঘর একা আমি থম্কে ঘড়ির কাঁটাটা
হঠাৎ যেন একলা ঘরে শিল্পী তোমার স্তব্ধতা।
বন্ধু
শিকেয় তোলা শপিংমল, এলোমেলো রাজ্যপাট
রমরমিয়ে রঙীনছবি, চুলোয় গেল বাজারহাট।
আবছায়ার বৃষ্টিপথে গান ভাসাল ঘর দুয়ার
সব ছেড়ে বন্ধু আমার শ্রাবণের শেষ শুক্রবার!
কোথায় বন্ধু রঙতুলিটা কোথায় তোমার প্যালেট?
আমার খোলা সেই পার্চমেন্ট চিঠিলেখার শেলেট।
কোথায় বন্ধু নীলখামেতে উড়োচিঠির ভেলা?
আমার খোলা সেই জানালা টুকরো চিঠির মেলা।
কোথায় বন্ধু নীলনির্জন আউল-বাউল গান?
আমার ছাদের সেই কোণাটায় রূপোর চাঁদের স্নান।
কোথায় তোমার শেষ কবিতা থমকে গেছে বলো?
খুঁজে দেব সেই পাসওয়ার্ড যাই দুজনে চলো।
মা
আমি তখন ঘুমবিছানায় মায়ের কোলে আলো।
পাড়ার লোকে বলেছিল, পেত্থম মেয়ে হলো?
মা বলেছিল, তা কেন? আমার প্রথম বন্ধু সে।
সারাক্ষণের ওঠাবসার একরত্তি মেয়ে।
আমি তখন দুই বিরুণি, শুরু স্কুলের বেলা
মায়ের সাথে ছন্দেসুরে গানবিকেলের খেলা।
আমার তখন কলেজবেলা, খড়কেডুরে শাড়ি
মা চেনালো কলেজপাড়া, মিনিবাসে বাড়ি।
আমি তখন ঊণিশ বছর, আমার স্নাতকোত্তর
মা-মেয়েতে ঘোরাঘুরি, রূপবাণী চত্বর।
আমার তখন সপ্তপদী, আমার কুসুমডিঙে
ছাদের কোণায় মা যে কাঁদে আমায় ফাঁকি দিয়ে।
আমি কেবল থোড়-বড়ি আর জঞ্জালেরি ভীড়ে
কাজলাদিদির পায়ের নূপুর, কমলালেবুর শীতের দুপুর
বর্ষাদিনের কাজরী গান, মায়ের সাথে বিষ্টি স্নান
সবটা যেন ফুরিয়ে এল কেমন চুপিসাড়ে।
রং বদলায়
ছুটছে কচি, হাসছে কাঁচা, রং'টা কেমন বদলে যায়
দুষছে মানুষ, কাঁদছে মেয়ে ঢং'টা কেমন সয়ে যায়
পড়ছে গাছের কচিপাতা, শীতটা কেমন এসেই যায়
ঝলসে গেল কত জীবন, গ্রীষ্ম যেন সয়েই যায়
বাদাম গাছে কচি পাতা, প্রেমটা যেন উথলে যায়
হেমন্তে সে হিমেল হাওয়া, নতুন করে ফিরে পায়
দিন গড়িয়ে দুপুর ঢলে, পড়ন্ত সে রোদের গায়
বুড়ো বাপের দাঁত পড়ে যায়, চোখদুটি যে আবছায়ায়
ঋতুর রঙে চমক লাগে, মা যে কেন পালটে যায়
বয়স ভারে, গলার স্বরে শব্দটা যে বদলে যায়
ভাইটা যেন ছোট্টটি থাক, সাজানো থাক খেলার ঘর
বোনের যেন দুই বিরুণী, যাস্নে যেন পরের ঘর
দোলদোলানো ফাগের বিকেল, দুরন্ত সেই কিশোর খেলার
শিউলিঝরা আগমনী গন্ধ আনে পুজোবেলার...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন