শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

অশোক তাঁতী

বুনুয়েল ও যুবতী


যুবতী ঘরের মধ্যে একা। বাইরে দুপুর ঘন হচ্ছে।
গসিপই তো। একে আর অন্য কী বলবেন?
একটা উটপাখি এসে দাঁড়াল দরজার সামনে। তারপর সোজা ঢুকে পড়ল ঘরের মধ্যে।
ঘরের মধ্যে বজ্রপাত বা ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক, কোনোটাই বাজছে না।
যুবতী তাকে দেখতে পায়নি, কিন্তু তার নাম রাখল বুনুয়েল।
সত্যি বলতে কী, ছেলেদের নিয়ে ভাবা বেকার। ছেলেরা চিরদিনই সবাই একই রকমের। দু’দশদিন পর কেমন বোরিং টাইপ হয়ে যায়।
ঘরের ভেতর ফরসা বিছানা। একা যুবতী, নিভাঁজ।
উটপাখি প্রথমে বিছানার দিকে গেল না। সে ড্রয়িংরুমের টিভি সেটের মধ্যে তাকাল। নিজেই নিজেকে দেখল। অত্যাশ্চর্য নিঃশব্দ। মাঝরাতে কালবৈশাখী থেমে গেলে যেমন  হয়।
দরজা বন্ধ। বাইরের ল্যাম্পপোস্ট থেকে আলো ঝরে পড়ছে। ঝরে পড়লেই আলো দেখা যায়। গাছ, পাখি এমনকি বাড়িগুলো থেকে আলো ঝরে পড়ছে। অসম্ভব ধোঁয়াটে সেই আলো। বোঁটায় ঝুলতে থাকা আলো দৃশ্যমান হয় না
ড্রয়িংরুমের ফ্লাওয়ারভাসে ঘন হলুদ গোলাপ। উটপাখি গোলাপের শ্বাস নিল। পাপড়ি নরম হলেও উটপাখি তা খেল না। শুধু দেখল ঠাসা হলুদ বুনটে প্যানরমিক পাপড়ির আঁচল। হাওয়া লেগে পাপড়িতে ভাঙন। বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে।
যুবতীর পোশাক আলগোছে পায়ের ওপর। গায়ের ওপর। শুয়ে আছে।
দুপুরে না ঘুমোলেও অনেকের পায়ের গোছ, থাইয়ের অংশ দেখা যায়। সাদা বিছানার  ব্যাকগ্রাউণ্ডে।
উটপাখি দেখল সাজানো সোফাসেট। কাচের বয়াম। বয়ামের মধ্যে টলটলে জল। জলের মধ্যে পাতাঝাঁঝি। ঝাঁঝির ওপর শ্যাওলা।
বুনুয়েল এসব দেখছে, দেখল যুবতী।
সে দেখছে বুনুয়েলের চলা, পদক্ষেপের রাজকীয়তা। প্রত্যেক হাঁটার সাথে ঘাড়ের অদ্ভুত কম্পন। উঠছে, নামছে। অনেক কুয়াশা তার শরীরের চারপাশে।
এরপর বুনুয়েল স্থির হয়ে দাঁড়াল যুবতীর বিছানার কাছে। যুবতীর আশপাশের হাওয়া তখন এক একটা ঘূর্ণি। শরীরে বৃষ্টির ইঙ্গিত।
কাট্।
বুনুয়েল আরও এক পা এগিয়ে আসে।
যুবতী উঠে বসে। মন আর শরীর কি আলাদা কিছু? বুঝতে পারে না। ভাবে বুনুয়েলের মনের মধ্যে আছে তার শরীর। ভালোবাসার মধ্যে গ্রীবা।
যুবতী বুনুয়েলের গ্রীবাকে আলিঙ্গনে নেয়। - বুনুয়েল তুমি মানবভ্রূণের মতোএক অত্যাশ্চর্য রূপকথা।
বুনুয়েল কথা বলে না। কেননা কথার মধ্যে কপার আর জিঙ্ক।
যুবতী বুনুয়েলের দোদুল্যমান গ্রীবা রাখে বুকের ওপর। আর নিজের লাবডুব শোনে।
সিনেমাতে অনেক সময় ছোট্ট একটা নুড়ি বসিয়ে দেখান হয় পাহাড়, চৌবাচ্চার আন্দোলনকে সমুদ্রের ঢেউ। টিভিটা না চললেও তার স্ক্রিনে সামনের পেপারওয়েটের ছবি। যুবতী বলল, এটা প্রেম না অহঙ্কার?
আলাদা করা যায় না কিছুই।
যুবতীর হাতের ফাঁক দিয়ে বুনুয়েল তার গ্রীবা বের করে, খুব সন্তর্পণে। আঘাত না লাগে। ঠোঁটে করে পেপারওয়েট এনে রাখে বিছানায়। যুবতীর পাশে।
সে কথা বলতে পারে না। কথার মধ্যে খাদ।
যুবতী অবাক হলোদেখল, বুনুয়েল ফিরে যাচ্ছে।
বুনুয়েলের আঙুলগুলো মেঝের ওপর পড়ছে। তবে দুটো পায়ের কোনো ছাপ থাকে না মার্বেল করা মেঝেতে। হাওয়ার মধ্যে স্মৃতি।
বুনুয়েল বাইরে রোদে মিলিয়ে যেতে যুবতীর বুকের মধ্যে নষ্ট নশ্বরতা।
বারানসীরাজ! তদ্‌ সময়ে যুবতী দেবদত্ত আর আমি ছিলাম বুনুয়েল 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন