বীজে কোনো গন্ধ থাকে না।
পোষা কুকুরের
ঘ্রাণ এড়িয়ে মালিক লেবু চাষ করে বাগানে। হাড় আর মাংসের গন্ধ চেনানো হয় তাকে। তার
সঙ্গে হাতুড়ির আঘাত। খিদে আর আঘাতের যুদ্ধে অস্তিত্ব নিয়েও লেবুগাছ কুকুরের কাছে
অদৃশ্য হয়ে যায়। ফুল আর ফলের মাঝখানে কিছু মৌমাছি দাঁড়িয়ে থাকে। যাদের আলো আখের
জমিতে পড়লে কুকুর ছুটে যায়।
গন্ধের বাইরে কোনো চুম্বক না পেয়ে ফিরে আসে লেবুগাছের তলায়। ঠ্যাং তুলে হিসি করে আলাদা করে নেয় প্রতিটি গাছ। গাছ সম্বন্ধীয় সব ধর্মগ্রন্থে সে নাস্তিক হয়ে যায়।
ক্রমশ তার লেজ বেঁকে যেতে থাকে। ভাদ্র আশ্বিন শরৎকাল আসে। পাগল নামে আদর পেতে শুরু
করে। আদরের গলায় বকলেস আসে। লেবুগাছের ভাষা তার সাথে মিলতে শুরু করে। মালিক তখন
লেবুগাছের জায়গায় বেলুনের চাষ শুরু করে। বেলুন আকাশে উড়ে যায় ডানা না থাকা
সত্ত্বেও। কুকুর গন্ধের বাইরে প্রথম কিছু দেখে অবাক হওয়া শেখে। আনন্দে একটা মাছির
পেছনে সারাটা দিন নষ্ট করে ফেলে। হাড়মাংসের বাইরে অন্যান্য গন্ধ পেতে শুরু করে
কুকুর। মাথার ঠিক মাঝখান থেকে জোনাকি বেরোতে শুরু করে। কুকুর জানে না কোন্ বীজ পুঁতলে জোনাকি হয়। খুঁজতে থাকে। লেজ ক্রমশ বেঁকে যেতে থাকে। মালিকের নেশা বাড়তে থাকে।
বেলুনকে চাঁদে পৌঁছে দিতে চায়। অ্যাকোরিয়াম চায় মালিকের মেয়ে। কুকুর থেকে মাছের
দিকে মন চলে যায় আদরের। তাই কুকুরের অনেক মালিক জুটে যায়। সে বুড়ো হয়ে যায়।
লেবুগাছ কাঁদলে সে শুনতে পায়। কাঁদলে মাথার জোনাকি উপচে পড়ে। লোকে পুঁজ বলে সরে যায়। সে বেলুনের মানে বুঝতে পারে। হাতুড়ি
আর আলাদা কষ্ট আনতে পারে না।
লেজ ক্রমশ সোজা হয়ে আসে এবার। এবার তাকে চাঁদে চলে যেতে হবে। যেখানে লেবুগাছ নেই।
জমির ধার দিয়ে জোনাকি খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। লেজ থাকার এক সুবিধা হলো, সোজা হলেই অন্ধকার বড় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মালিকের লেজ নেই। খাবার পাত্র আছে আর আছে ঘড়ি।
ঘড়িতে ঘন্টা পরলেও আর সে ছুটে যাবে না গন্ধ কিম্বা খিদের টানে। হয়তো মালিকের কষ্ট
হবে। অসংখ্য জনতার সামনে তার সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হবে। তবু কুকুর লেবুপাতা
কুড়িয়ে চলে যাবে অন্য পাড়া। তাকে পাগল বলে গুলি করা হলেও সে কাউকে কামড়ে দিতে আসবে
না। যে দাঁত দিয়ে সে লেবুপাতা চিবিয়েছে, তাই দিয়ে রক্ত ছোঁয়াবে না কোনোদিন। মাথার জোনাকি শেষ।
এখন সে রকেটে করে উড়ে যাবে চাঁদের দিকে।
বিজ্ঞানীরা ধন্যবাদ জানাবেন একে অপরকে। কুকুর মালিককে গন্ধের তুলনায় বেশি ভালোবেসেছিল। মালিকের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিল লেবুগাছকে। হাড়মাংসের গন্ধ অতিক্রম করে যে ভালোবাসা পৌঁছে গেছিল চাঁদে। শেষ যে বেলুনটি আকাশে উড়েছিল তাতে লেবুচারা পাঠিয়েছিল কুকুর, তাই আজ সে হাসতে হাসতে
চাঁদে চলে যাবে যদিও বিজ্ঞানীরা জানেন, চাঁদে জল নেই, আর কুকুর জানে লেবুগাছের কোনো গন্ধ হয় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন