লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
সীতা
(১)
লক্ষণরেখা পেরিয়ে সীতা রাবণের চুমুতে মত্ত।
অবাধ্য কোনো ছায়া রচনায় আরো ঘনীভুত সমুদ্র-সংকেত
বাঁধানো কালিথানে ঢাকা বটগাছটায় লেজ ঝোলানো
পাখির খাওয়া বটফলের টুকরোগুলো পেট ফাটিয়ে
হাঁ করে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে, বাসি প্রদীপের
সলতেগুলো রাত দিন ঝরে পড়ে সেই সব চুম্বনের গায়ে।
পদ্ম পুকুরের পাড়ে ফুলের ঘুমিয়ে পড়া শ্লোক
কত কালের ফেলে দেওয়া অলংকারের শব্দগুলি
পায়েল ধ্বনিতে গভীর দুঃখবোধ নিয়ে বেজে ওঠে
তখন চাঁদ আর শিয়ালের প্রহর কাটা শুরু হয় –
নড়তে থাকে ঝোপঝাড়।
(২)
সীতার বর আরও মরণের কাছাকাছি। শুধু কয়েকটা সঙ্গমের
সুখ নিয়ে বুক চাপড়াচ্ছে সারারাত, আর যন্ত্রনাগুলি পাঁজর
ভেদ করে বিছানায় নিচ্ছে মাটির স্বাদ, অনন্ত স্বপ্নের স্রোতে
অজস্র চেতনার পথ। তবে কি হরপ্পা ধ্বংস হওয়ার আগে
বাঁশিতে সুর ঢালছেন অক্ষম কৃষ্ণ, এত মাতাল কদম, এত কস্তুরী
নীল আকাশের ধার দিয়ে আলিঙ্গনের ফাল দাগে শুরু করছে
হাঁটতে, এত তাপ মাঠে যে একটা মরুভূমির ওপার
থেকে এগিয়ে আসছে সীতা। তার গায়ে অশোকবন, সখি সূর্পনখার
লম্বা নখর, বাতাস মেলে ধরে ক্ষতমুখ –
(৩)
আমিও বসে আছি সীতার মুখোমুখি। বিপরীতে শুধু লাল রংয়ের
সাক্ষীর উপর আত্মশুদ্ধির প্রজাপতি, সিদ্ধিদাতার মুহূর্তরা চড়া রোদে
শুকনো কন্ঠ, আত্মহত্যা করতে চাই না বলেই মৃত্যুর আমি
আমার সামনে শ্মশান, আর কিছু নেই, মৃত্যুযন্ত্রণা বুঝতে
বুঝতে কিছু পিঁপড়ে কামড়ের সাথে আলিঙ্গন করি, পথ থেকে লাফিয়ে
নিজেই নিজের জমিতে কর্ষণ শুরু করি, আড়াল করা ধক্ ধক্
শব্দগুলোর সাথে আবদ্ধ অন্ধকার ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসে
শূন্যতাকে সাজাতে থাকে কয়েক সারি সীতা
(৪)
বসবাস থেকে ফিরেই সীতা তাকিয়ে আছে ফুল আর লতাপাতা সাজানো
নদী পাড়ের দিকে, সেখানে ছপছপ্ ভাওইয়া গানে মগ্নতা চুমু খাচ্ছে
জল আর দাঁড়। জল মেয়েটা ঘোলা শরীরে আকাশ নিচ্ছে আবার হারিয়ে
ফেলছে দাঁড়ের চোখ, মঞ্জরিত চোরা টানে হারিয়ে ফেলছে লতা বীজের
স্বর। কত প্রজা দাঁড়িয়েছে জোড়হাত করে, গলায় একটা ভিক্ষাপাত্রে
হাওয়া খাকি টান, হাঁটতে হাঁটতে পুব দিগন্তে বাঁশঝাড় খোঁচা দিচ্ছে
রক্ত বিন্দুকে, বেলা যে পড়ে এলো -
সূর্য চোখে পড়তেই চোখ বন্ধ করে রানী মহিমায়- কি দেবে চাওয়াকে
পর্বে পর্বে অশোকবন, পরিচয়হীন লবকূশ, বিশ্বামিত্রমুনি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন